বাঙালী সনাতনীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে দূর্গাপূজা। অনেক শিক্ষিত বাঙালী সনাতনীরা নিজেদের ইতিহাস এবং নিজ জাতির দেবী দুর্গার ইতিহাস জানেন না। সেই অজানাকে জানাতেই sohobanglait.com সনাতনীদের জন্য প্রস্তুত করেছে আজকের এই পোষ্ট। এই লেখাটি লিখেছেন ‘বিক্রম দাস‘। যে একাধারে ব্যাবসায়ী এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর। আমরা আশাকরি তার এই লেখাটি হয়ত আপনাদের জ্ঞানার্জনে সহায়তা করবে।
কলকাতা অলি-গলিতে সজ্জিত মন্ডপে আপনারা উলুধ্বনির আওয়াজ অবশ্যই শুনে থাকবেন। এছাড়া বাংলাদেশেও প্রতিটি সনাতন ধর্মালম্বীর ঘরে ঘরে এই উলুধ্বনি শুনে থাকবেন। এই শব্দকে উলুধ্বনি বলে থাকে। ভিডিওতে দেওয়া আছে দেখে নিন।
![দেবী দুর্গার ইতিহাস এবং দূর্গা পূজার অজানা রহস্য, যা আপনাকেউ ভাবতে বাধ্য করবে 2 দূর্গাপূজার একটি ছবি](https://sohobanglait.com/wp-content/uploads/2023/10/দূর্গাপূজার-একটি-ছবি.webp)
যেখানে নারীরা পূজার সময় কিম্বা শুভ কাজের শুরুতে এই উলুধ্বনী শব্দ করে চারদিকের নেগেটিভ এনার্জি ধ্বংস করে থাকে। মহলকে আরও অনেক শুভকর বানিয়ে তোলে। বড় বড় মন্ডব সাজানো হয়, শহরকে খুব সুন্দর করে সজ্জিত করা হয়।
![দেবী দুর্গার ইতিহাস এবং দূর্গা পূজার অজানা রহস্য, যা আপনাকেউ ভাবতে বাধ্য করবে 3 দূর্গাপূজায় সিদুর খেলা যা হিন্দু নারীরা খেলে](https://sohobanglait.com/wp-content/uploads/2023/10/দূর্গাপূজায়-সিদুর-খেলা-যা-হিন্দু-নারীরা-খেলে.webp)
নারীরা সাদা এবং লাল শাড়ি পড়ে একজন আরেকজনকে সিদুর লাগায়। মানুষের মধ্যে এক আলাদা রকমের উৎসবের তৈরি হয়। এটি এমন উৎসব যাতে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ঘরেই বিরিয়ানি, মাটন কারি, ফিশফ্রাই এর মত খাবার বানানো হয়ে থাকে। এটি এমন এক উৎসব যেখানে সকল দিকে সকল মানুষের মাঝে হাসি-উল্লাস,অনুষ্ঠান এবং দূর্গামায়ের জয়জয়কার হয়ে থাকে। এটি এমন এক ধর্মীয় উৎসব যা আনন্দের সাথে সারাদেশে পালন করা হয় দূর্গাপূজা।
কে রাবনকে বধ করেন?
মা দূর্গা – যে আমাদের রক্ষা করে এবং প্রয়োজন পড়লে খাবাপদের সংহারও। কৃত্তিবাসী রামায়ণ অনুসারে রামায়নে যুদ্ধের সময়, রাবনকে বধ করার জন্য ভগবান রাম যার সহায়তা নিয়েছিলো – সে ছিলো মা শক্তি দূর্গামা। মনে করা হয় যে, রাবনের সাথে যুদ্ধ করার আগে শ্রী-রাম চারদিন পর্যন্ত মা দূর্গার আরাধনা করেছিলো। এমনটা করার জন্য মা দূর্গাকে ১০৮টি কমল ফুল নিবেদন করতে হতো। ভগবান রামের পার্মিশনে ফুল নিয়ে আসার কাজ হনুমানজী করেছিলো। চারদিকে ঘুরে হনুমানজী সবচেয়ে সুন্দর একশো আটটি কমলফুল ভগবান রামের কাছে জমা দেয়। কিন্তু মা দূর্গা এতো সহজেই মানতে রাজি ছিলোনা। উনি শ্রী-রামের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ভাবে – এবং এক ফুল তার কাছে লুকিয়ে রাখে।
চারদিনে লাখো চেষ্টার পরেউ শ্রী-রাম ঐ শেষ ফুলটিকে খুজে পেলোনা। আর মা দূর্গাকে প্রসন্ন করার জন্য একশো আট ফুল জমা করা গুরুত্বপূর্ন ছিলো। শেষ পর্যন্ত শ্রীরাম এক ফুলের বদলে তার একটি চোখ উৎসর্গ করার ডিসিসন নেয়। উনি উনার চোখ বের করার জন্য এক তীর বের করে। কিন্তু সে-সময়েই মা দূর্গা রামকে দর্শন দেয়। মা-দূর্গা শ্রীরামের তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে উনার তীরে বিরাজমান হয়। ভগবান রাম মা-দূর্গার আশীর্বাদ নিয়ে রাবনের সাথে যুদ্ধ শুরু করে। একের পর এক রাবনের মাথা কাটা হচ্ছিলো পরক্ষনে আবারো ঠিক হচ্ছিলো। এমন কয়েকবার হয়। তারপর শ্রী-রাম সেই তীর বের করে, যেটায় মা-দূর্গা বিরাজমান হয়েছিলো। ঐ তীরকে সোজা রাবনের পেটে ছেড়ে দেয়। আর তখন থেকেই মানা হয়, রাবনের বধ মা-দূর্গার হাতেই হয়েছিলো।
![দেবী দুর্গার ইতিহাস এবং দূর্গা পূজার অজানা রহস্য, যা আপনাকেউ ভাবতে বাধ্য করবে 4 শ্রী রাম তার তীর দিয়ে রাবণকে বধ করছে](https://sohobanglait.com/wp-content/uploads/2023/10/শ্রী-রাম-তার-তীর-দিয়ে-রাবণকে-বধ-করছে.webp)
শুধু এটিই নয়, যখন মহিষাসুর নামে এক রাক্ষস চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞে হাহাকার করেছিলো আর সে মানতো যে, কোনো পুরুষ তাকে বধ করতে পারবেনা, তখন মা দূর্গা এক ভয়াবহ রূপ ধারন করে। মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধ করে এবং তাকে বধ করে।
ধর্মীয় উৎসব – দেবী দুর্গার ইতিহাস
আশ্বিন মাসে মহিষাসুর মর্দিনী মা দূর্গার পূজা খুব উৎসবমুখর পরিবেশের সাথে করা হয়। বড় বড় প্যান্ডেল বানিয়ে – মাটি দিয়ে তৈরি মায়ের ভব্য প্রতিমাকে বিরাজমান করানো হয়। ষষ্ঠীর দিন থেকে দূর্গাপূজার শুরু হয়। পরের তিনদিন পর্যন্ত দূর্গা,লক্ষী,সরস্বতী – এই তিনরূপের পূজা করা হয়। আর শেষদিন খুব ধুমধাম করে এই প্রতিমাদেরকে পবিত্র জলের মধ্যে বিসর্জন দেওয়া হয়।
দুই বাংলার সনাতনীরা মনে করে বছরের এই দশদিন মা দূর্গা আসলে মেয়ে হয়ে পৃথিবীতে তার বাবা-মায়ের বাড়িতে আসে এবং দশদিন পর শসুরবাড়ি ফিরে যায়। আর এজন্যই এই দশদিন জুড়ে সম্পূর্ন আনন্দ-ফূর্তিতে এই ধর্মীয় উৎসব পালন করা হয়। সম্পূর্ন শহরকে সাজানো হয়, এই দশদিন সব জাগায় এই পূজার প্রার্থনা, গীত, উৎসব হয়। দূর্গাপূজার মধ্যদিয়ে আমরা শক্তির পূজা করে থাকি। শক্তি, যে সরশ্বতী হয়ে রচনা করতে পারে আর দূর্গা হয়ে বিনাশও করতে পারে।
অন্য পোষ্টঃ শ্রাদ্ধকর্মে কাকের গুরুত্ব কি? কাককে কেনো খাবার দেওয়া হয়?
বিশ্ব স্বীকৃতি এবং উপসংহার
আজ দূর্গাপূজা এতই ভব্যরূপে করা হয় যে, দুইহাজার একুশে ইউনেস্কো তাদের প্যারিস মিটিংয়ে, বাংলায় হওয়া দূর্গাপূজাকে Intangible Culture Heritage of Humanity এর লিস্টে যুক্ত করে দেয়। ইউনেস্কো মানে যে, দূর্গাপূজা শুধু বাংলায় নয় সম্পূর্ন বিশ্বের অমূল্য ধর্মীয় উৎসবগুলির মধ্যে একটি। নবরাত্রীর দিনে মা দূর্গার আলাদা আলাদা রূপের পূজা হয়। এভাবেই কোটি কোটি বছর আগে থেকে সনাতনী জাতি দূর্গাপূজা করে আসছে যা আজও বর্তমান। উপরে ভিডিও যুক্ত করে দিয়েছি আপনি দেখতে পারেন।
![দেবী দুর্গার ইতিহাস এবং দূর্গা পূজার অজানা রহস্য, যা আপনাকেউ ভাবতে বাধ্য করবে 5 ছবিতে একটি বাড়িতে মা দূর্গার আরাধনা](https://sohobanglait.com/wp-content/uploads/2023/10/ছবিতে-একটি-বাড়িতে-মা-দূর্গার-আরাধনা.webp)
FAQs
-
উলু ধ্বনির অর্থ কি?
উলু ধ্বনি হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রথা। পূজা, বিয়ে এবং বিভিন্ন শুভকর অনুষ্ঠানে সনাতনী নারীরা মুখ দিয়ে উলুলুলু ধ্বনি উচ্চারন করে থাকে। আর এই ধ্বনিকে সমৃদ্ধির প্রতীক মানা হয়।
-
Intangible Culture Heritage of Humanity এর লিস্টে দূর্গাপূজাকে যুক্ত করা হয় কেন?
ইউনেস্কো মানে যে, দূর্গাপূজা শুধু বাংলায় নয় সম্পূর্ন বিশ্বের অমূল্য ধর্মীয় উৎসবগুলির মধ্যে একটি।
মানুষ আরও যা জানতে চায়ঃ দূর্গা পূজার,দূর্গা পূজার ইতিহাস,দেবী দুর্গার ইতিহাস pdf,দেবী দুর্গা : পুরাণে, ইতিহাসে,দুর্গাপূজা: ইতিহাস ও শিক্ষা,দূর্গা পূজার ইতিহাস কি?,কে প্রথম দুর্গাপূজা করেন?,দুর্গার কাহিনী,দূর্গা পূজা প্রথম কে করেন,দেবী দুর্গার আবির্ভাব।