মা কালীর সৃষ্টি কথা: প্রতিবার দেব-দেবীরা এই পৃথিবীতে অশুভের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছেন। যে অশুভ শক্তি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় শক্তিশালী অসুর রূপে। এই অসুরদের বধ করার জন্য মা দুর্গা ও মা কালীর রূপে দেবী পার্বতীর ভয়ঙ্কর রূপের প্রকাশ সকলেরই জানা।
আমাদের পৌরানিক ধর্মগ্রন্থ মূলত ভগবান বনাম অসুর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্টোরিতে ভরা। কিন্তু এই দুষ্টদের নেপথ্য কাহিনী কি ছিল?
এই ভিডিওতে আমরা আপনার জন্য সংক্ষেপে কিছু চিত্তাকর্ষক ঐতিহাসিক ধর্মীয় গল্প নিয়ে এসেছি কিভাবে অসুররা এতও শক্তিশালী হলো, কিভাবে তাদের বধ করে মহাবিশ্বে শান্তি আনা হলো সে বিষয়ে।
সুতরাং, সনাতন ধর্মগ্রন্থ থেকে কিছু শক্তিশালী অসুরদের গল্প অন্বেষণ করার জন্য আমাদের সোসাল মিডিয়ায় যোগ দিন। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লেখালেখির পাশাপাশি এসকল ধর্মীয় স্টোরি নিয়ে আসব।
লঙ্কার রাজা রাবণ, অসুরদের রাজা। দশ মাথা, বেদ এবং পুরানের ভরপূর জ্ঞান কিন্তু অহংকারে ভরা মন। এই অহংকারের কারনে এত কিছু থাকার পরেউ রাবণের বিনাশ হয়। রাবণের মতই আমাদের পবিত্র পুরানে এমন অনেক অসুর আছে, যারা অনেক শক্তির অধিকারি ছিলো।
কিন্তু উনারা তাদের শক্তি খারাপ কাজে লাগায়। এমনি অসুরদের বিনাশ করার জন্য দেবী দেবতারা অনেক রূপ নেয় এবং অসুরদের নিধন করে পাপের থেকে মুক্ত করে দেয়। এই দৃষ্টি থেকে আমাদের পৌরানিক ইতিহাসকে প্রমান করার জন্য এইসব অসুরদের অস্তিত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমকা রাখে।
মা কালীর সৃষ্টি কথা: মহিষাসুর
মহিষের মাথা এবং মানুষের শরীর নিয়ে জন্মায় এক ভয়ানক রাক্ষস। যাকে না কোনো পুরুষ নিধন করতে পারবে না কোনো প্রানী। মহিষাসুর যিনি ব্রহ্মাজীর দ্বারা এমন এক বরদান পেয়েছিলো, যে এই সংসারের পুরুষ কিম্বা প্রানী কেউ তার বধ করতে পারবেনা।
ব্রহ্মাজী তার এই ইচ্ছাকে পূরন করে। তাকে এমন শর্তও দেয় যে, তার বধ কোনো এক নারীর হাতে নিশ্চই হতে পারে। অহংকারে ডুবে থাকা মহিষাসুর এটাই মনে করতো, “কোনো নারী এতো শক্তিশালী যে তার বধ করবে“? আর এজন্য তিনি নিজেকে অমর হিসাবে ধরে নেয়।
তিনি পুরো বিশ্বে কেওয়াজ সৃষ্টি করে তারপর সুযোগ আসে ইন্দ্রলোকের। যখন মহিষাসুর এবং দেবতাদের মধ্যে যুদ্ধ হয় ব্রহ্মাজীর বরদানের কারনে কোনো দেবতাই তার কোনো কিছুই বাকাতে পারে নাই। মহিষাসুরের আতঙ্ক থেকে দেবলোককে বাঁচানোর জন্য ব্রহ্মা,বিষ্ণু,শিব তাদের সকল শক্তি একত্রিত করে। তখন প্রকোট হয় মা দূর্গার।
মা দূর্গা, যে কিনা দেবী পার্বতী এবং স্বয়ং শক্তিরই আরেক রূপ। মার্কেন্ডেও পুরানে দেবীমহাত্মায়ের অনুসারে নিজের সিংহের উপর চড়ে মা দূর্গা মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধ করার জন্য রওনা দেয়। এই যুদ্ধ অনেকদিন পর্যন্ত চলতে থাকে।
মহিষাসুর তার শক্তি ইউজ করে রূপ বদলিয়ে কয়েকদিন মা দূর্গার সাথে ছল করার প্রয়াস করে। যখনি সে একটি মহিষের রূপে আসে, মা দূর্গা তার ত্রিশুল দ্বারা মহিষের বুক চিড়ে মহিষাসুরকে বধ করে দেয়। তখন থেকে দেবীর নাম হয় মহিষাসুরমর্দিনী।
মা কালীর সৃষ্টি কথা: সিংহিকা
![মা কালীর সৃষ্টি কথা - Story of Origin of Goddess Kali | Sohobangla iT 2 সিংহিকা](https://sohobanglait.com/wp-content/uploads/2023/11/simhika-and-hanumansimhika-in-ramayanasimhika-rakshasi-1024x567.webp)
সিংহিকা নামক এক অসুরি হাজার সাল পর্যন্ত তপস্যা করে ব্রহ্মাজীর থেকে এ বরদান পায় যে যেকোনো জীবকে ছায়া ধরে তার নিকট আনতে পারে। এ সেই অসুরি, যার সাথে শ্রী হনুমানের সমূদ্র পথে লড়াই হয়েছিলো।
বাল্মিকী রামায়নের সুন্দরকান্ডের অনুসারে শ্রী হনুমান মা সীতার কাছে লঙ্কায় যাবার সময় মহাসাগরকে পাড় হচ্ছিলো। তখন সে অনুভব করে যে কোনো অদেখা শক্তি তাকে পিছনের দিকে টানছে। যখন উনি পিছনের দিকে তাকায় তখন সে পাহাড়ের পিছনে সিংহিকাকে দেখতে পায় যেকিনা তার ছায়াকে টানছিলো।
হনুমানজী নিজেকে পোকার মত ছোট করে এবং সিংহিকার মুখ দিয়ে তার শরীরের ভিতর চলে যায়। হনুমানজী তার সম্পূর্ন শক্তি দিয়ে সিংহিকার পেট চিড়ে ফেলে এবং তেজ গতিতে উড়ে তার শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। সিংহিকা ব্যাথা নিয়ে ভেগে যায় এবং কোথাও লুকিয়ে পড়ে।
বেশকিছু তথ্য অনুসারে, যে জায়গায় সিংহিকা লুকিয়ে ছিলো সেই জায়গাই হচ্ছে আজকের বারবুডা ট্রাইঙ্গাল। বারমুডা ট্রাইঙ্গালকে এমন জায়গা মনে করা হয় যে, সে যেকোনো জিনিসকে নিজের থেকে টেনে নেয়। আর সেসব জিনিস সম্পূর্নরূপে গায়েব হয়ে যায়। এটি সেই শক্তি যেটি সিংহিকার কাছেই ছিলো।
মা কালীর সৃষ্টি কথা: রক্তবীজ
![মা কালীর সৃষ্টি কথা - Story of Origin of Goddess Kali | Sohobangla iT 3 রক্তবীজের গল্প](https://sohobanglait.com/wp-content/uploads/2023/11/রক্তবীজরক্তবীজের-গল্পরক্তবীজ-অসুরWho-was-Raktbeej-1024x567.webp)
নিজের রক্তের প্রতিটি ফোটা থেকে পুনজন্ম নেওয়া এক রাক্ষস। যাকে মারার জন্য দেবীশক্তি ‘মা কালীর‘ রূপ নিয়েছিলো। বলা হয়ে থাকে ‘রক্তবীজের‘ রক্তের ফোটা যেখানেই পড়তো সেখান থেকে দ্বিতীয় রক্তবীজ জন্ম নিতো। দেবী ভগোবতের পাঁচ নাম্বার স্কন্দের অনুসারে ‘রক্তবীজের‘ এই বরদান ‘ভগবান শিবের‘ থেকে প্রাপ্ত হয়েছিলো। এমন এক সময় আসে যখন দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে মহাযুদ্ধ লেগে যায়। এই যুদ্ধের কারনে রক্তবীজ দেবতাদের জন্য একটি বড় সমস্যার কারন হয়। কারন বরদানের জন্য রক্তবীজকে মারা অসম্ভব হয়ে পড়েছিলো।
তখন রক্তবীজকে বিনাশ করার জন্য দেবীশক্তি মা কালীর রূপ নেয়। লাল চোখ, ছেড়ে দেওয়া চুল, কপালে তৃতীয় চোখ, গলাতে মাথা দিয়ে বানানো মালা, কমড়ে হাত এবং পা দিয়ে বানানো বেল্ট। এক হাতে কাটা মাথা দ্বিতীয় হাতে রক্ত দিয়ে মাখা তলোয়ার নিয়ে মা কালী রক্তবীজের দিকে এগিয়ে যায়, এবং রক্তবীজের উপর সেই তলোয়ার দিয়ে কয়েকবার আঘাত করে। মা কালী নিজের জীহবা দিয়ে রক্তবীজের যখম স্থান থেকে বেরিয়ে আসা রক্তের এক এক ফোটা পান করে নেয়। এভাবেই রক্তবীজের বিনাশ হয়।
আরও পড়ুনঃ দেবী দুর্গার ইতিহাস এবং দূর্গা পূজার অজানা রহস্য, যা আপনাকেউ ভাবতে বাধ্য করবে।
উপসংহার
- আপনার কি মনে হয়?
- কোন অসুর সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর ছিলো?
কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান। লেখাটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তবে অবশ্যই শেয়ার করুন। এছাড়া ভিডিও এটাচ করে দিয়েছি চাইলে দেখে নিবেন। এমন আরও কনটেন্ট চাইলে আমাদের কমেন্ট করুন। চেষ্টা করব বিভিন্ন সোর্স থেকে আপনাদের এমন কনটেন্ট উপহার দেবার। সহবাংলা আইটির সাথে থাকুন এবং বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করুন।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। মহাদেব সম্পর্কে জানতে চাই।