শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট
ভূমিকা:
‘A hard working street-cleaner is a better man than a lazy scholar.’ – বিজ্ঞানী আইনস্টাইন
অণু থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত, বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে শ্ৰম। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত এই পৃথিবীর সব কাজে –খাদ্য, বস্ত্র, অন্ন, বাসস্থান, চিকিৎসা- যা কিছু দৃশ্যমান সবই অর্জিত হয়েছে শ্রমের দ্বারা ।পবিত্র কুরআনে ঘােষিত হয়েছে, ‘লাইসা লিল ইন্সানে ইল্লা মা সাত্তা।‘ অর্থাৎ, মানুষের জন্যে শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই নেই।জ্ঞানীর জ্ঞান, বিজ্ঞানের অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার, ধর্মসাধকের আত্মােপলদ্ধি, ধনীর ধনৈশ্বর্য, যােদ্ধার যুদ্ধে জয়লাভ সবকিছুই শ্রমলব্ধ। মানুষ তার উদ্যম, প্রচেষ্টা ও নিরলস শ্রম দিয়েই পৃথিবী জয় করেছে। মানুষের এই জয়ের ইতিহাসই বর্তমান পৃথিবীর চিত্র।
![শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট সকল পরিক্ষায় কমন পড়বে 2 শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট](https://sohobanglait.com/wp-content/uploads/2023/06/শ্রমের-মর্যাদা-রচনা-২০-পয়েন্ট.webp)
“বিশ্বপিতার মহাকারবার এই দিন দুনিয়াটা
মানুষ তাঁহার মূলধন, কর্ম তাহার খাটা“
-যতীন্দ্রমোহন বাগচী
পৃথিবী এক বিশাল কর্মক্ষেত্র। কালের পরিক্রমায় বিবর্তনের নানা স্তর পেরিয়ে আধুনিক বিশ্বসভ্যতা যে ঐশ্বর্যময় রূপ পরিগ্রহ করেছে, তা পরিশ্রমেরই সম্মিলিত যোগফল। শ্রম বর্তমান সভ্যতার সৌধকৃতির অনবদ্য উপাচার। শ্রমকে ভিত্তি করেই সমাজ সংস্কৃতির বিকাশ, পরিপুষ্ট ও প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। লক্ষ কোটি মানুমানুষের যুগ যুগান্তরের শ্রমেই গড়ে উঠেছে সভ্যতার সৌন্দর্য বিলাসিত তিলোত্তমা মূর্তি। তাদের নাম ইতিহাস লেখা নেই। গুরুত্বপূর্ন পড়াঃ ভাবসম্প্রসারণ: পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর | সকল শ্রেনীর জন্য।
তারা পাহাড়-পর্বত কেটে পথ তৈরি করেছে, নদীর উপর সেতু বানিয়েছে, নির্মাণ করেছে আমাদের ঘরবাড়ি, সুন্দর সুন্দর প্রাসাদ, সুরম্য অট্টালিকা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়স্ত পরিশ্রম করে কেউ ফলিয়েছে সোনার ফসল, কেউ বুনেছে লজ্জা নিবারণের বস্তু, কেউ বা জীবনকে সুন্দর ও সুখময় করার জন্য বানিয়েছে ভোগ-পণ্যসামগ্রী। মানবসমাজে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সভ্যতার এই অনবদ্য বিকাশ সম্ভব হয়েছে।
![]() |
শ্রমের মর্যাদা রচনা উক্তি |
শ্রমের গুরুত্ব বা প্রয়ােজনীয়তা:
বিখ্যাত মনীষী দস্তয়ভস্কি বলেছিলেন, ‘মানুষের কাছে তার জীবনের চেয়ে প্রিয় আর কিছুই নেই। এই জীবন সে একবারই পায়।‘ বর্তমান পৃথিবীর মানুষেরও জীবনদর্শন আজ জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ।
জীবনকে যতােভাবে সুখী, সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ণ করে তােলা যায় সে চেষ্টাই আজ পৃথিবীর মানুষের লক্ষ্য। আর সেজন্য তার শ্রম ও সাধনার অন্ত নেই। তাই জীবনকে বিকশিত ও সফল করতে হলে শ্রমের কোনাে বিকল্প নেই। ‘Man is the architect of his own fate.‘ –মানুষ নিজেই তার নিজের ভাগ্যের নির্মাতা।
আর এই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয় নিরলস শ্রম দ্বারা। মানুষের জন্ম দৈবের অধীন, কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। যে মানুষ কর্মকেই জীবনের ধ্রুবতারা করেছে, জীবন-সংগ্রামে তারই জয়। কর্মই সাফল্যের চাবিকাঠি। পরিশ্রমই মানুষের যথার্থ শাণিত হাতিয়ার। সৌভাগ্যের স্বর্ণশিখরে আরােহণের একমাত্র উপায় হচ্ছে শ্রম। এটি পড়ুনঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ।
পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে বর্তমান সভ্যতা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শ্রম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। মানবজীবন অনন্ত কর্মমুখর। বহু প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। এ জন্যে তাকে নিরন্তর কাজ করে যেতে হয়। জীবনের কোনাে কাজের ক্ষেত্রই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। সর্বত্রই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনযুদ্ধে নিয়ােজিত থাকতে হয়। তাই, জগৎ কর্মশালা আর জীবনমাত্রই পরিশ্রমের ক্ষেত্র।
Virgil বলেন, “The dignity of labor makes a man self-confident and high ambitious. So, the evaluation of labr is essential.‘ ঠিকই মানবজীবনে শ্রমের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। জীবনে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করতে হলে এবং যথাযােগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে হলে মানুষকে নিরলস পরিশ্রম করতে হয়। তাই শ্রমেই সফলতা, শ্রমেই সুখ, শ্রমই জীবন। আমরা সবাই শ্ৰমসৈনিক। শ্রম ব্যতীত জীবনের উন্নতি কল্পনামাত্র ।
আমরা যা কিছু করতে চাই না কেন, যতাে সাফল্য, যতাে সমৃদ্ধি, যতাে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, একুশ শতকের এই প্রযুক্তিনির্ভর ও প্রযুক্তিনিয়ন্ত্রিত পৃথিবীতে শ্রম ছাড়া এর কোনাে কিছুই সম্ভব নয়। পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। নতুন পৃথিবী, নতুন স্বপ্ন। পৃথিবীর মানুষ এই নতুন স্বপ্নে বিভাের। আমরা বুঝতে পারছি না পৃথিবীতে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, নতুন রেনেসাঁস। এই নতুন রেনেসাঁস ও নতুন জীবনদর্শনের তাৎপর্যই আলাদা। এই নতুন জীবনদর্শনের মূল কথাই হচ্ছে জীবনকে ঋদ্ধ ও পরিপূর্ণ করা। সেজন্যই এতো আয়োজন, এতাে উদ্যোগ, এত শ্রম ও সাধনা! এসএসসি এর সাজেশনঃ SSC Suggestion 2024 English 1st Paper – কমন এবার পড়বেই।
জীবনে দুঃখ আছে,গ্লানি আছে,পরাজয় আছে,ব্যর্থতা আছে, কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়!মানুষ তার উদ্যম, প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে এই ব্যর্থতাকে জয় করেছে।জয় করে চলেছে। মানুষের এই জয়ের ইতিহাসই দিকে দিকে ঘোষিত হচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীর মানুষও এই অবিরাম অব্যাহত প্রয়াস, উদ্যম ও শ্রমসাধনাকেই বেছে নিয়েছে। তার শ্রমের বলেই সফল তাকে হতে হবে। সফল সে হচ্ছেও!জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, নৈপুণ্যে, দক্ষতায়, শিল্পে, সাহিত্যে, সঙ্গীতে, ক্রীড়ায়, আবিষ্কারে, উদ্ভাবনে।সে তার শ্রম ও সাধনায় আলোকিত, বিকশিত, উদ্ভাসিত করছে পৃথিবী!
সৌভাগ্য ও প্রতিভা বিকাশে শ্রমের ভূমিকা:
![]() |
শ্রমের মর্যাদা প্রবন্ধ রচনা |
শ্রমের প্রকারভেদ:
শ্রমকে সাধারণত দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। এই উভয় প্রকার শ্রমের গুরুত্বই অপরিসীম।
মানসিক শ্রম:
কোনো কাজে মন ও মেধাশক্তির ব্যবহারই মানসিক শ্রম। কোনো কাজ শুধু করলেই হয় না, তা সঠিক উপায়ে করা ও সুষ্ঠু উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন মানসিক শ্রম। কথায় আছে,
“অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।“
অলস ব্যক্তির মাথায় কুচিন্তা ছাড়া আর কিছুই আসে না। অন্যদিকে যে ব্যক্তি কর্মের সাথে সর্বদা জড়িত থাকে তার মাথায় কোনো কুচিন্তা আসে না। সে তার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে এবং তার মাথায় কাজ নিয়েই নিত্য নতুন ভাবনা আসতে থাকে। দেশ-বিদেশের সকল বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, লেখক-সাহিত্যিক, দার্শনিকেরা মূলত মানসিক শ্রমের মাধ্যমে কর্ম সম্পাদন করেন।
শারীরিক শ্রম বা কায়িক শ্রম:
জগতের সকল জীবকেই বেঁচে থাকার জন্য কম-বেশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিতে হয়। মানসিক শ্রম একটা কাজের প্রেরণা যােগায় আর শারীরিক শ্ৰম তা সমাধা করে। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে শারীরিক শ্রমের নিমিত্ত হাত-পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। শারীরিক শ্রম আত্মসম্মানের পরিপন্থী নয় বরং সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের প্রধান উপায়। চাষি, শ্রমিক, কুলি, মজুর– এরা দেশ ও জাতিকে রক্ষার মহান দায়িত্ব নিয়েই শারীরিক শ্রমে অবতীর্ণ হয়। তাই কবি নজরুল ইসলাম তাদের বন্দনা করেছেন:
‘গাহি তাহাদের গান…
শ্রম-কিণাঙ্ক–কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে
ত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফলে।’ [জীবন বন্দনা]
আপনি আরও পড়ুন এখানে>>
- বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা ২০ পয়েন্ট | বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা
- বাংলা নববর্ষ রচনা ২০ পয়েন্ট | বাংলা নববর্ষ রচনা সহজ
- সময়ের মূল্য রচনার ২০ পয়েন্ট | সময়ের মূল্য রচনা
- পড়ুন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা | বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট
- সত্যবাদিতা রচনা ২০ পয়েন্ট | সততা ও সত্যবাদিতা রচনা
- শীতের সকাল রচনা ২০ পয়েন্ট | একটি শীতের সকাল রচনা
- অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট | অধ্যবসায় রচনা PDF
- পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা | শিক্ষায় গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা
- ছোটদের গরুর রচনা | গরুর রচনা বাংলা
শ্রম ও সভ্যতা:
মানবপ্রবাহের সেই কোন আদি উৎস থেকে শুরু হয়েছিল শ্রমের বন্যা, আজও তার শেষ নেই। যুগে যুগে মানব-সভ্যতার যে ক্ৰমবিস্তার, শ্রীবৃদ্ধি, তা লক্ষ-কোটি মানুষের তিল তিল শ্রমেই সম্ভব হয়েছে। মানুষ তার শ্রমের উপচার দিয়ে সাজিয়েছে সভ্যতার তিলােত্তমাবিগ্রহ। একবিংশ শতাব্দীর এই সমুন্নত সভ্যতার মূলেও আছে মানুষের অনলস শ্রম-সাধনা। এই শ্রমজীবী মানুষই নতুন নতুন সাম্রাজ্যের পত্তন করেছে। এসএসসি বাংলা সাজেশনঃ ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার সাজেশন বাংলা ২য়।
তাদের শ্রমের ওপরই গড়ে উঠেছে সভ্যতার বিজয়। শ্রম যে শুধু ব্যক্তিজীবনকেই নানা সার্থকতায় সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যময় করে তােলে তা নয়, সমাজজীবনের ওপরও পরে তার গভীর ব্যাস্ত প্রতিফলন। ভাই পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রকই নয়, সভ্যতা বিকাশেরও হাতিয়ার। বর্তমান মানবজাতি যে সভ্যতার উচ্চাসনে আরােহণ করেছে তার মূলে রয়েছে হাজারাে দিনের শ্রম।
পৃথিবীকে সুন্দর ও মানুষের বাসযোগ্য করে গড়ে তােলার মূলে রয়েছে কঠোর শ্রম। পৃথিবীতে যে জাতি যত পরিশ্রমী, সে জাতি তত উন্নত। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, চীন প্রভৃতি দেশের মানুষ পরিশ্রমী বলেই তারা আজ উন্নত ও সভ্য জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত ।
ব্যক্তিজীবনে শ্রমের উপযােগিতা:
শ্ৰম যে শুধু সমষ্টির জীবনকেই সুন্দর ও মহিমাময় করে তা নয়, ব্যক্তিজীবনেও তার গুরুত্ব গভীর, ব্যাপক! যে অলস ও শ্রমবিমুখ তার জীবনে নেমে আসে অসুন্দরের অভিশাপ। নানা ব্যর্থতার গ্লানিতে সে-জীবন পদে পদে অনাদৃত, লাঞ্ছিত! তার জীবনের স্বাভাবিক অগ্রগতি রুদ্ধ হয়। জীবনের সাফল্য-স্পন্দিত প্রাঙ্গণে তার নেই প্রবেশের ছাড়পত্র। মানুষের স্নেহ-ভালােবাসার অঙ্গন থেকে ঘটে তার চিরনির্বাসন। থাকে শুধু অভিশপ্ত জীবনের সীমাহীন অন্তর্জাল আর লাঞ্ছনা, শুধুই ‘প্রাণ ধরণের গ্লানি!’ পক্ষান্তরে, পরিশ্রমী মানুষ দেহে ও মনে সুস্থ ও সুন্দর। সার্থকতার ছন্দে সে-জীবন নিত্য উচ্ছলিত। শ্রমের ক্লান্তি তার জীবনে বিশ্রামের মাধুর্য হড়িয়ে দেয় ।
ছাত্রজীবনে শ্রমের গুরুত্বঃ
ছাত্রজীবনকে বলা হয় মানবজীবনের বীজ বপণের সময়। এসময় মানুষ তার নিজের জীবনকে নিজের মতো করে গড়তে শিখে। তাই ছাত্রজীবনে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। যেসব ছাত্রছাত্রী কঠোর পরিশ্রম করে লেখাপড়া করে তারাই পরীক্ষা ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হয় এবং পরবর্তী জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা সফলতা পায়।
অন্যদিকে অলস, কর্মবিমুখ শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা না করে অন্যান্য কুকর্মে লিপ্ত থাকে এবং পরীক্ষায় তো খারাপ ফলাফল করেই এবং জীবনের পরবর্তী সময়ে তারা কোনো উন্নতি করতে পারে না। ফলে পরবর্তীতে তাদের হতাশার জীবন কাটাতে হয়। তাই ছাত্রজীবনে পরিশ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজবিজ্ঞানী পার্সো বলেন, “প্রতিভা বলে কিছু নেই, সাধনা করো, সিদ্ধিলাভ হবেই।“
শ্রমিক লাঞ্ছনা:
আমাদের দেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেও এখনো শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য সম্মান পাচ্ছে না। উপরন্তু তারা নানান ধরণের অত্যাচার ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। মানুষের ধারণা যারা উচ্চবিত্ত তাদের সম্মানই বেশি। অথচ যুগ যুগ ধরে সভ্যতার প্রাচীর গড়েছে যেসব শ্রমিকেরা তাদেরকেই পড়ে থাকতে হচ্ছে লাঞ্ছনার অন্ধকারে। তারা পাচ্ছে না তাদের কাঙ্খিত সম্মান, ন্যায্য মূল্য ও কাজের পরিবেশ। যার ফলে আজও আমাদের দেশ উন্নতি করতে পারছে না। ধনীরা তাদের উদরপূর্তি করছে আর শ্রমিকেরা গরিব থেকে ফকির হচ্ছে। কবিগুরুরা তাদের কবিতায় বলেন,
“তাঁতি বসে তাঁত বুনে, জেলে ধরে মাছ,
বহূদুর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার,
তারি পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার।”
অথচ আজকের এই পৃথিবীতে তারাই পায়নি সম্মান।
শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ:
বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তি ও মনীষীদের জীবনসাধনা ও সাফল্যের কারণ নিরলস পরিশ্রম। জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
শ্রমবিমুখতা:
শ্রমবিমুখতা ও অলসতা জীবনে বয়ে আনে নিদারুণ অভিশাপ। শ্রমহীন জীবনকে ব্যর্থতা এসে অক্টোপাসের মতাে ঘিরে ফেলে। কথায় বলে, ‘পরিশ্রমে ধন আনে, পুণ্য আনে সুখ‘- এ কথা তর্কাতীতভাবে সত্য। যে ব্যক্তি শ্রমকে অবজ্ঞা করে, তার শ্রম সম্বন্ধে কোনাে অভিজ্ঞতা নেই, তার জীবনের কোনাে মূল্য নেই। বিখ্যাত মনীষী কার্লাইল বলেছেন, ‘আমি মাত্র দুই প্রকৃতির লোককে সম্মান করি, সমানের যােগ্য তৃতীয় নেই। প্রথমত, আমার সম্মানের পাত্র ওই কৃষক এবং শ্রম-শিল্পী, যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করেন, মানুষ হয়ে অমানুষের মতাে জীবনযাপন করেন। ওই যে পাণ্ডুর বদনমণ্ডল, ওই যে ধূলি-ধূসর দেহ, ওই যে কর্ম-কঠোর কর্কশ করযুগল , তাই আমার শ্রদ্ধার যােগ্য। দ্বিতীয়ত, আমার সম্মানের পাত্র তিনি, যিনি আত্মোন্নতি সাধনে নিরত আছেন, যিনি শরীরে নয় আত্মার খাদ্য সংস্থানে, জ্ঞানধর্ম অনুশীলনে ব্যাপৃত আছেন— এ দু’ব্যক্তি আমার ভক্তিভাজন।‘ সুতরাং একমাত্র নির্বোধেরাই শ্রমকে অবজ্ঞা করে। প্রতিষ্ঠা, খ্যাতি, প্রতিপত্তি, যশ-সুনাম, মর্যাদা এসব ত্রিবেণী ত্রিধারার দুর্বার স্রোতমুখে টিকে থাকার জন্যে প্রয়ােজন শ্রম ও কঠোর সাধনা। নিরন্তর ও নিরলস শ্রমে জীবনাকাশ থেকে দারিদ্র্যের ঘনঘটা দূর হয়ে সফলতার নবীন সূর্যালােক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে!
![]() |
শ্রমের মর্যাদা রচনা সহজ |
আমাদের দেশে বা জাতীয় জীবনে শ্রমের মর্যাদা ও আমাদের কর্তব্য:
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কায়িক শ্রমের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের এক ধরনের অবজ্ঞা ও ঘৃণা রয়েছে। ফলে শিক্ষিত সমাজের একটা বিরাট অংশ কায়িকশ্রম থেকে দূরে সরে আছে। চরম বেকারত্ব ও আর্থিক অনটন সত্ত্বেও তারা শ্রমবিমুখ। আর এই শ্রমবিমুখতার কারণেই আমরা আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি, অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি। দুঃখ-দারিদ্র, অভাব-অনটন, অনিয়ম-অব্যবস্থা, অনাচার আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমাদের জীবন।
এই চক্র থেকে পুরােপুরি আমরা বেরুনাের পথ পাচ্ছি না, চেষ্টাও করছি না। ক্লিষ্ট, ক্লান্ত, ধ্বস্ত জীবনকে আঁকড়ে ধরে আমরা কোনোমতে বেঁচে আছি। এই বাচার মধ্যে না আছে প্রাণ, না আছে আনন্দ! নিষ্প্রাণ নিস্তরঙ্গ আমাদের জীবন , স্রোতহীন ও বদ্ধ নদীর মতাে।
পৃথিবীর দিকে তাকালে অবাক চোখে বিমােহিত হওয়া ছাড়া আর কোনাে পথ থাকে না আমাদের। তারা তাদের নিরলস শ্রম ও সাধনায় জীবনকে কতাে বিচিত্ররূপে সুখ-স্বাচ্ছন্দে ভরিয়ে তুলেছে। আমরা যদি পেছনে পড়ে থাকি, উদ্বুদ্ধ না হই, উদ্যোগ গ্রহণ না করি, পরিশ্রমী না হই সে হবে আমাদের ব্যর্থতা। আর ব্যর্থতার দায়ও আমাদেরই বহন করতে হবে। বহন করতে হচ্ছে।
উন্নত দেশের তুলনায় আমরা দরিদ্র থেকে আরাে দরিদ্র হচ্ছি, বাড়ছে আমাদের এই সংখ্যা, বেকারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে হচ্ছে চার কোটি পৌনে চার কোটি। আমরা কেন পেছনে পড়ে থাকবাে? আমরা কেন উঠে দাড়াবাে না? দুঃখ-দরিদ্রের এই অনিঃশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা কতাে নিষ্পেষিত হতে থাকবাে?
এই বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতির যুগে, পৃথিবীর এই সাফল্য ও সমৃদ্ধির যুগে এই দুর্দশা ও দুরবস্থা কোনাে সম্মান বা গৌরবের বিষয় নয়। উন্নতির জন্য চাই নিরলস শ্রম ও সাধনা। সাধনা ও শিক্ষা ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়। আমরা উন্নতি চাই।কিন্তু শ্রম ও সাধনার কথা ভুলে যাই। ‘কাটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে / দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?‘এই সত্য আমরা প্রায়শই মনে রাখি না। ফলে উন্নতির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। তাই জীবনকে, দেশ ও জাতিকে সফল ও সার্থক করে গড়ে তােলার জন্যে শ্রম-বিমুখতা পরিহার করতে হবে।
এ যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে উপেক্ষা করে এ যুগে উন্নতি সম্ভব নয়। উন্নতি ও সাফল্য অর্জনের জন্য অসম্ভব বা অস্বাভাবিক কিছু করার প্রয়ােজন নেই। যার যেটুকু সাধ্য তার মধ্যদিয়ে আমরা উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারি। ক্ষুদ্র মাটির প্রদীপও রাত্রির গভীর অন্ধকার দূর করে।
এই সাধ্য ও সাধনা দিয়েই সবকিছু করা সম্ভব। সাধ্যমতাে চেষ্টা করলে, শ্রম দিলে, সাধ্যমতাে উদ্যোগ নিলে, নিজের সাধ্য বা সামর্থ্যকে কাজে লাগালেই সমাজে অনেক বড় বড় কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। কিন্তু এই সাধ্যেরই সদ্ব্যবহার করি না আমরা!সাধ্য থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা নিষ্ক্রিয় ও উদ্যোগহীন।
আমরা সবাই যদি ঠিক করি, বড় কিছু নয়, ‘আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি‘, তাহলেও দেশ ও সমাজে অনেক মহৎ কিছু সম্পন্ন হবে! জীবন পাল্টে যাবে, সমাজে স্বাচ্ছন্দ্য ও সমৃদ্ধি আসবে। সব মানুষই কিছু কিছু পারে, কিছু কিছু পারে না। এই পারা, না-পারা নিয়েই মানুষ। আর এই নিয়েই তাকে শ্রম-সাধনা করতে হয়। শ্রমই তার পথ, এগিয়ে যাওয়ার পথ । পৃথিবীর সঙ্গে এভাবেই সে এগিয়ে যায়, শ্রম-সাধনার গুণে।
সুখ-সম্পদ ও পরিশ্রমঃ
উপসংহার:
‘পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি।‘ শ্রমের গৌরব ঘােষণা আজ দিকে দিকে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, God help those who help themselves.” অর্থাৎ যে নিজেকে সাহায্য করে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। সুর্যের সাথে উদ্ভিদ ও প্রাণীর সম্পর্কের মতোই শ্রমের সাথে সমাজ-সভ্যতার নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। শ্রম আসলে মানুষ ও তার সমাজ-সভ্যতার আশীর্বাদস্বরূপ।
শ্রমিকের শ্রম মানবসভ্যতার জনক। পৃথিবীতে স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিত্ব রূপে চিরকাল মানুষের মনে বেঁচে থাকতে হলে শ্রমের বিকল্প নেই। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কেউই তার লক্ষ্যে পৌছতে পারে। এ সম্পর্কে মার্কুস বলেন, “জীবন যার মহৎ কাজে পরিপূর্ণ মৃত্যুর পর তার কবরে মার্বেল পাথরের কারুকাজ না থাকলেও কিছু আসে যায় না।” তাই আমাদেরকে কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা নিজেদের ব্যক্তিত্ব ও দেশের উন্নতির জন্য কাজ করে যেতে হবে।
তাহলেই আমরা বিশ্বের বুকে উন্নত জাতি হিসেবে স্থান করে নিতে পারব।একমাত্র শ্রমশক্তির মাধ্যমেই জীবনে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য, স্থিতি ও পরিপূর্ণতা। নিরলস শ্রমসাধনায় সাফল্য অর্জন করে জীবজগতের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের আসন দখল করেছে! সুতরাং জীবনকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে শ্রম ব্যতীত অন্য কোনাে সহজ পথ নেই। আর তাই শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ব্যক্তিগত তথা জাতিগতভাবে প্রয়ােজন। কবি অক্ষয়কুমার বড়াল তার ‘মানব বন্দনা’য় সভ্যতার শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল শ্রমশীল ব্যক্তির উদ্দেশে বন্দনা করেছেনঃ
‘নমি আমি প্রতিজনে, আদ্বিজ-চণ্ডাল,/ প্রভু, ক্রীতদাস!
নমি কৃষি-তন্তুজীবী, স্থপতি, তক্ষক,/ কর্ম, চর্মকার!‘
শেষ কথাঃ
আপনি আরও পড়ুন এখানে>>
- বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা ২০ পয়েন্ট | বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা
- বাংলা নববর্ষ রচনা ২০ পয়েন্ট | বাংলা নববর্ষ রচনা সহজ
- সময়ের মূল্য রচনার ২০ পয়েন্ট | সময়ের মূল্য রচনা
- পড়ুন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা | বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট
- সত্যবাদিতা রচনা ২০ পয়েন্ট | সততা ও সত্যবাদিতা রচনা
- শীতের সকাল রচনা ২০ পয়েন্ট | একটি শীতের সকাল রচনা
- অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট | অধ্যবসায় রচনা PDF
- পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা | শিক্ষায় গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা
- ছোটদের গরুর রচনা | গরুর রচনা বাংলা