পড়ুন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা | বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট

প্রিয় বন্ধুরা আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা। যা পড়ে আপনি পরিক্ষায় লিখতে পারবেন। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা প্রতিবারই যেকোনো ক্লাসের পরিক্ষায় আসে। তাই এই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা সকলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। আশাকরি সবাই এই রচনাটি অধ্যায়ন করবেন এবং শিখে সাথে সাথে খাতায় লিখে ফেলবেন। 

   বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা   

(সংকেতঃ ভূমিকা; প্রাকৃতিক দুর্যোগ; বাংলাদেশের অবস্থান এবং দুর্যোগ; প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ; বন্যা; সাইক্লোন ও জলােচ্ছাস; ঝড়-ঝঞা; অনাবৃষ্টি বা খরা; নদী ভাঙন; ভূমিকম্প; লবণাক্ততা; প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরােধের উপায় বা দুর্যোগ মােকাবিলা করার উপায়; দুর্যোগ মােকাবিলায় বিভিন্ন সংস্থা; দুর্যোগ মােকাবিলায় সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাবলি; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী। প্রায় প্রতিবছর কোনাে না কোনাে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে দেয়। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ

যেসব ঘটনা মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারাকে ব্যাহত করে, মানুষের সম্পদ ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে এবং যার জন্য আক্রান্ত জনগােষ্ঠীকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যতিক্রমধর্মী প্রচেষ্টার মাধ্যমে মােকাবিলা করতে হয় তাদের দুর্যোগ বলে । আর প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট দুর্যোগকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হয়।

বাংলাদেশের অবস্থান এবং দুর্যোগঃ

হিমালয় ও ভারত থেকে নেমে আসা ৫৪টি নদী, বিশাল পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার প্রবাহের সাথে মিশে শত শত নদী বয়ে গেছে এদেশের ওপর দিয়ে। নদী মিশেছে সাগরে। মূলত নদীবাহিত পলিমাটিতে তৈরি একটি বদ্বীপ এই বাংলাদেশ। এর সঙ্গে মিলেছে বঙ্গোপসাগর থেকে ওঠা উপকূলীয় অঞ্চল এবং দ্বীপসমূহ। বাংলাদেশের দক্ষিণাংশ জুড়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগর । ফলে সাগরে ঝড় উঠলে তা প্রবল বেগে ধেয়ে আসে উপকূলে। সঙ্গে ভয়ংকর জলােচ্ছাস ৮/১০ ফট উচ হয়ে আছড়ে পড়ে, মুহূর্তে ভাসিয়ে নিয়ে যায় উপকূলীয় অঞ্চলের বাড়িঘর,মানুষ, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় ভেঙে পড়ে গাছপালা । ঐসব অঞ্চল পরিণত হয় এক বীভৎস মৃত্যুপুরীতে। যারা বেঁচে থাকে তাদের হাহাকারে আর স্বজন হারানাের বেদনায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। সর্বস্ব হারানাে নিঃস্ব মানুষগুলাের বেঁচে থাকাই যেন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

প্রাকতিক দুর্যোগের কারণঃ

পরিবেশ দূষণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বহু দেশে সৃষ্টি হচ্ছে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ জলবায়ু পরিবর্তন প্রাকৃতিক কারণে হয়তাে হতে পারে। তবে বেশিরভাগ পরিবর্তন হচ্ছে মনুষ্য সৃষ্ট। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলাে। এদের অতি ভােগবিলাসিতা ও যন্ত্রনির্ভরশীলতার জন্য পৃথিবীতে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এসব দেশের কলকারখানা ও গাড়ি থেকে অতিমাত্রায় কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে তাপমাত্রা তাতে মেরু অঞ্চল ও বিভিন্ন পর্বতে জমে থাকা বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। 

সমুদ্র ও নদীর কম্পন বাড়ছে ফলে নদী ও সমুদ্রের উপকূলে ভাঙনের হারও বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলাে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের বেশিরভাগ নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। পলি জমে বেশকিছু নদী দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। দেশের প্রধান নদীগুলাে বিভিন্ন স্থানে এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার মাধ্যমে হিমালয় থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশের নদীগুলােতে পানি এলেও এগুলাের স্রোতধারা অনেকটা কমে গেছে । 

আরও পড়ুনঃ  বাংলা নববর্ষ রচনা ২০ পয়েন্ট | বাংলা নববর্ষ রচনা সহজ

ব্রহ্মপুত্রের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। পদ্মার বুকেও বিভিন্ন স্থানে চর পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কার প্রভাবে গত তিন দশকে বাংলাদেশের ৮০টি নদীর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এক সময়ের খরস্রোতা নদী হিসেবে পরিচিত দেশের ১৭টি নদী মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। আরও ৮টি নদী মৃতপ্রায়। এসব নদী ড্রেজিং করে সচল করারও কোনাে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে বর্ষাকালে নদীর উপচে পড়া পানি প্লাবিত করে ফসলের মাঠ, জনবসতি। প্রতি বছরই বন্যা এদেশের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন উজাড় করাও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আরেকটি কারণ। প্রত্যেক দেশের মােট আয়তনের ২৫% বনাঞ্চল থাকা যেখানে প্রয়ােজন সেখানে বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে মাত্র ১৬% ভাগ বনাঞ্চল রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ

নদ-নদী, বন-বনানী, এল নিনাে ও লা-নিনার (প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে ঘটে যাওয়া এনসো (ENSO) চক্রের দুটি বিপরীত অবস্থা হল এল নিনো ও লা নিনা।) প্রভাবে এদেশে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়ত হানা দেয়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে : বন্যা, সাইক্লোন, জলােচ্ছ্বাস, ঝড়-ঝঞা, খরা, নদী ভাঙন, ভূমিকম্প, লবণাক্ততা ইত্যাদি।

বন্যাঃ

প্লাবন বা বর্ষার ভয়াল রূপ হলাে বন্যা। বন্যার করাল গ্রাসে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়ে যায় । অসংখ্য মানুষ ও গৃহপালিত পশু প্রাণ হারায়, ঘর-বাড়ি ও কৃষিফসল বিনষ্ট হয়। বিগত চার দশক থেকে বন্যা বাংলাদেশের একটি বার্ষিক সমস্যায়। পরিণত হয়েছে। 

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট

১৯৪৫ ও ১৯৫৫ সালের বন্যা মানুষের মনে এখনও বিভীষিকারূপে বিরাজ করছে। ১৯৬৪ সালের বন্যায় সারা দেশ প্লাবিত হয়েছিল। ১৯৭০ সালেও দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৭৪ ও ১৯৮৮ সালের বন্যায় দেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের বন্যাও ছিল ভয়াবহ। এসব বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানিসহ ফসল ও সম্পদের প্রচুর ক্ষতি সাধিত হয় । শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয় ১৯৯৮ সালে। এ দীর্ঘস্থায়ী মহাপ্লাবনে দেশের বহু ক্ষেতের ফসল, ঘর-বাড়ি ও মূল্যবান সম্পদের। মারাত্মক ক্ষতি হয়। স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হলাে ২০০৪ সালের বন্যা। এ বন্যায় দেশের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা।

সাইক্লোন ও জলােচ্ছ্বাসঃ

সাইক্লোন ও জলােচ্ছ্বাস এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ । এ দুর্যোগ প্রায় প্রতি বছরই বাংলাদেশে কম-বেশি আঘাত হানে। বাংলাদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ১৯৭০, ১৯৯১, ২০০৭ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া স্মরণকালের সাইক্লোন ও জলােচ্ছ্বাস ছিল খুবই ভয়াবহ। 

সুপার সাইক্লোন
সুপার সাইক্লোন

এসব সাইক্লোন ও জলােচ্ছ্বাসে ১৯৭০ সালে প্রায় ৫ লাখ, ১৯৯১ সালে প্রায় দেড় লাখ এবং ২০০৭ সালে প্রায় লক্ষাধিক লােকের প্রাণহানি ঘটে। আশ্রয়চ্যুত হয় লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ। এ সাইক্লোন ও জলােচ্ছ্বাসের ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসহ যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, ল ভন্ড হয়ে যায় সবকিছু। ফলে মানুষ পতিত হয় অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশায়।

ঝড়-ঝঞ্জাঃ

গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আমাদের দেশে প্রতি বছরই অনেক ঝড়-ঝঞা সংঘটিত হয়ে থাকে। এসব ঝড় সাধারণত বৈশাখ ও আশ্বিন মাসে হয়। ঝড়ের তাণ্ডব নৃত্যে এদেশের প্রচুর ঘর-বাড়ি এবং খেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।

আরও পড়ুনঃ  সকল ক্লাসের জন্য বেগম রোকেয়া রচনা | বেগম রোকেয়া রচনা ২০ পয়েন্ট
কালবৈশাখী ঝড়
কালবৈশাখী ঝড়

অনাবৃষ্টি বা খরাঃ

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের কৃষিব্যবস্থা সম্পূর্ণ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল । কিন্তু প্রকৃতির হেয়ালিপনার। শিকার এদেশ প্রায় প্রতি বছরই অনাবৃষ্টি বা খরার মতাে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পতিত হয়। খরার প্রচণ্ড তাপদাহে মাঠঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায়। 

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা
অনা বৃষ্টি

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সংঘটিত খরার প্রকোপে ব্যাপক ফসলাদিসহ জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। খরার হিংস্র থাবার ফলে দেখা দেয় খাদ্যাভাব ও বিভিন্ন রােগ-শােক।

নদী ভাঙনঃ

নদীমাতৃক বাংলাদেশের বুক চিরে বয়ে গেছে হাজারাে ছােটো-বড়াে নদী। নদীর ধর্মই হলাে – এপাড় ভেঙে ওপাড় গড়া। কিন্তু নদীর এ সর্বনাশা ভাঙন এক মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। 

প্রতি বছরই এদেশের প্রচুর সম্পদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ দুর্যোগের কবলে পড়ে এদেশের বহু লােককে তাদের ঘর-বাড়ি, ধন-সম্পদ হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করতে হয়।

ভূমিকম্পঃ

প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক ভয়াবহ রূপ হলাে ভূমিকম্প। বিভিন্ন কারণে এদেশে মাঝে মাঝে ছােটো-বড়াে ভূমিকম্প আঘাত হানে। তবে অন্যান্য বছরের মতাে ভূমিকম্প আঘাত হানলেও ২০১৫ সালের ভূমিকম্প ছিল ভয়ানক। একই সালে কয়েকবার ভূমিকম্প আঘাত হানে। 

এতে বিভিন্ন এলাকায় দালানকোঠা ধসে যাওয়াসহ নানা ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। যদি ভূমিকম্পের মাত্রা বাড়ে তাহলে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট ভেঙে পড়ে, যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ জানমালের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ভূ-তাত্ত্বিকরা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুরভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার আওতাভুক্ত।

লবণাক্ততাঃ

সমুদ্র তীরবর্তী এদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলের এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলাে লবণাক্ততা। সমুদ্রের লবণাক্ত পানির প্রভাবে এদেশের উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল লবণাক্ত থাকে। এতে কোনাে ফসল উৎপাদিত হয় না ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরােধের উপায় বা দুর্যোগ মোকাবিলা করার উপায়ঃ

বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীই একমত যে, জলবায়ু দূষণের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণেই প্রাকতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। জলবায়ু দূষণের ক্ষেত্রে পৃথিবীর শিল্পোন্নত দেশগুলােই বেশি দায়ী। বাংলাদেশসহ দরিদ্র দেশগুলাের দায় অনেক কম, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। কাজেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে বা একে মােকাবিলা করতে হলে সারা বিশ্বকেই একযােগে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের মতাে দরিদ্র দেশগুলাে রক্ষার জন্য শিল্পোন্নত দেশ গুলােকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাহায্য দিতে হবে । তা দিয়ে সমদ্র উপকূলীয় দেশগুলাে উপকূলে উচু বাধ নির্মাণ করে। এবং বাধের ওপর ও আশপাশে ব্যাপক বনায়ন করে সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় ও জলােচ্ছ্বাসের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে অনেকটা প্রতিরােধ গড়ে তােলা যায়। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মােকাবিলা করার জন্য নিমােক্ত উপায় অবলম্বন করা যেতে পারেঃ

১। পৃথিবীর সব দেশ বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলাে যদি সমঝােতার মাধ্যমে অন্তত ১০/১৫ বছর গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে তাহলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহজ হতে পারে।

২। গ্রিন হাউস গ্যাস কমাতে হলে জ্বালানি পােড়ানাে কমাতে হবে।

৩। উন্নয়ন বান্ধব কার্বন কনটেন্ট বানাতে হবে।

৪। জলবায়ু দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে শিল্পকারখানার মালিক ও জনগণকে সচেতন হতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে বলিষ্ঠ উদ্যোগ নিতে হবে।

৫। কলকারখানার বর্জ্য ও শহরের মল-মূত্র এবং আবর্জনা সরাসরি নদীতে না ফেলে পরিশােধন করে ফেলতে হবে।

৬। বায়ু দূষণ রােধকল্পে প্রতিটি দেশের মােট আয়তনের  শতকরা ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা  একান্ত আবশ্যক। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৬% বলা হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে আছে ৯% থেকে ১০% । সুতরাং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য ব্যাপক ভাবে বনায়ন করতে হবে । বনভূমি উজাড়করণ এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  অধ্যবসায় রচনা খুবই সহজ ভাষায়, সকল ক্লাসের জন্য বংলা রচনা

৭। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গাছ লাগিয়ে বনাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে ।

৮। কৃষি জমি, জলাভূমি, পাহাড় ইত্যাদি ধ্বংস করে বসতবাড়ি বা কলকারখানা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।

৯। দেশের ছােটো-বড়াে সকল নদীকে পর্যায়ক্রমে ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়াতে হবে।

১০। যে নদী মরে গেছে বা যাচ্ছে সেগুলাে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়াতে হবে।

১১। দুর্যোগ ঘটার পূর্বে জনগণকে সতর্ক করতে হবে।

১২। সম্ভাব্য দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে । সেজন্য প্রয়ােজনীয় নিরাপদ জায়গা বা বহুতল বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে।

১৩। দুর্যোগ মােকাবিলায় নিয়ােজিত কর্মীবাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব কাজে এবং স্থাপনা নির্মাণে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নিতে হবে।

দুর্যোগ মােকাবিলায় বিভিন্ন সংস্থাঃ

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মােকাবিলায় বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন সংস্থা, বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন রাজনীতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী দল, এমনকি সর্বস্তরের মানুষ তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা দুর্যোগ মােকাবিলায় বিভিন্ন কাজে নিয়ােজিত থাকে। এসব সংস্থার মধ্যে রয়েছে – খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (UNICEF), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP), বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি (WFP), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাইকমিশনারের দপ্তর (UNHCR)। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের প্রায় দুশ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন কাজে জাতিসংঘকে সহযােগিতা করে থাকে।

দুর্যোগ মােকাবিলায় সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাবলিঃ

দুর্যোগ মানব জীবনে বয়ে আনে অবর্ণনীয় দুঃখ-যন্ত্রণা । দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়-ক্ষতিতে দেশের অবকাঠামাে নড়বড়ে হয়ে যায়, অচল হয়ে যায় দেশের অর্থনীতির চাকা। তাই বাংলাদেশেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় ভিত্তিতে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। ১৯৯৫ সালে একটি জাতীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কার্য পরিকল্পনা (NEMAP) গহীত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযােগী সংস্থার কাছেও সরকার প্রয়ােজনে সাহায্য-সহযােগিতা চেয়েছেন। বিশেষ করে ১৯৮৭, ৮৮ ও ৯৮’র বন্যা ‘৯১-এর ঘূর্ণিঝড় এবং ২০০৭-এর জলােচ্ছ্বাসে দুর্গতের জন্য বাংলাদেশের আহ্বানে ব্যাপক আকারে বৈদেশিক সাহায্য এসেছে।

উপসংহারঃ

পাকতিক দুর্যোগ যেকোনাে দেশের মানুষের জন্য অভিশাপস্বরূপ। এটি কেবলই অনাকাক্ষিত ও অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার দিকে ঠেলে দেয় জনজীবনকে। বাংলাদেশের মতাে একটি সমতল ভূমিতে অবিরত দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে এদেশের জাতীয় অর্থনীতিকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে, রুদ্ধ করছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা। এ দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে মানুষের কোনাে হাত না থাকলেও সরকার এবং সর্বস্তরের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর মােকাবিলা করার প্রয়াস চালাতে হবে। 

Read More >>

TAG: বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা,বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট,বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা for class 10,বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা 20 পয়েন্ট,বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ৩০ পয়েন্ট,বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনার পয়েন্ট,বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ssc।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link