মশার কয়েল তৈরি করে লাখ টাকা আয় – জানুন কিভাবে!

মশার কয়েল তৈরি করে লাখ টাকা আয় এর থাম্বনেইল পিকচার

সবচেয়ে লাভজনক ব্যাবসা হচ্ছে মশার কয়েল তৈরি করে বিক্রি করা। আজকে আমরা এটি নিয়েই এই প্রতিবেদনে আলোচনা করব।

রাত্রে যখন আমরা ঘুমাতে যাই সেসময় মশার কামড় খেয়ে মনে পড়ে যায় মশার কয়েল এর কথা। যখন মশারি টাঙানো হয় তখনো মশার উপদ্রব কমেনা। যারফলে সহজেই আমাদের মনে পড়ে যায় মশার কয়েলের কথা।

আমাদের দেশে মশার উপদ্রবের কারনে মশার কয়েলের চাহিদা অনেক বেশি। আর তাই এই ব্যাবসা অনেক লাভজনক। মশার কয়েলের ব্যাবসা করার মত যদি আপনার হাতে মূলধন থেকে থাকে তবে আমি আপনাকে একটা কথাই বলব যে, “আপনার জন্য মশার কয়েল তৈরির ব্যাবসা খুবই ভালো অপশন”। আপনি এই ব্যাবসা করে খুব তারাতারিই মুনাফা(লাভ) অর্জন করে নিতে পারবেন।

মশার কয়েল তৈরি করে ব্যাবসা

আমি এখান থেকে আপনাদের ধাপে ধাপে বলব কিভাবে আপনি এই ব্যাবসা শুরু করবেন, মশার কয়েল তৈরির উপাদান কি কি লাগে, A to z মশার কয়েল এর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরব।

পরিকল্পনা ও রিসার্চঃ

এই ব্যাবসা শুরু করার আগে আপনি বিভিন্ন মাধ্যমে রিসার্চ করুন। এমন কিছু কারখানা ঘুরে দেখুন যে তারা কিভাবে কাজ করছে। আপনার যদি পরিচিত কেউ থাকে তবে তার নিকট থেকে জানুন। কম মূলধনে সাশ্রয়ী ভাবে কিভাবে শুরু করলে এই মশার কয়েলের ব্যাবসা শুরু করতে পারবেন সেটিও জেনে নিন। কোনো পরিস্থিতিতেই অবৈধ ব্যাবসা করা যাবেনা। অসৎ ভাবে আপনি বেশি লাভ করলেউ একটা সময় জনগন আপনার তৈরি জিনিস ক্রয় করা বন্ধ করে দিবে। এখনকার সময়ে লাখ লাখ টাকা ডিল করে মানুষ এই ব্যাবসা থেকে ইনকাম করছে।

মশার কয়েল তৈরি ব্যাবসা শুরু করার আগে কিছু দরকারি টপিক নিয়ে আলোচনা করে নিব। তাহলে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে।

মূলধন সংগ্রহঃ

আপনি যে ব্যাবসাই শুরু করেন না কেনো, ব্যাবসা শুরু আগে অবশ্যই মূলধন নিয়েই মাঠে নামতে হবে। কি পরিমান আপনার কাছে মূলধন আছে সেটির উপর ভিত্তি করেই আপনাকে বাজেট বানাতে হবে। আপনার যদি আরও মূলধন প্রয়োজন হয় তবে আপনি কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  অল্প বিনিয়োগে দুর্দান্ত পাঁচটি খেলনা ব্যাবসার আইডিয়া, কম পুঁজি এবং খাটনিও কম - এখনি জানুন

আপনাকে বোঝানোর প্রেক্ষিতে ধরে নিচ্ছি আপনার কাছে পর্যাপ্ত মূলধন আছে। এটি নিয়ে আলোচনা করব নিচের ধাপে।

আরও পড়ুনঃ অল্প বিনিয়োগে দুর্দান্ত পাঁচটি খেলনা ব্যাবসার আইডিয়া, কম পুঁজি এবং খাটনিও কম

বাজেট কিভাবে করবেনঃ

আপনি মর্কেটে মশার কয়েল তৈরির জন্য ৪০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকার মধ্যে ভালো অটো মেশিন পেয়ে যাবেন। নিচে কিছু মেশিনের দাম উল্লেখ করছি দেখে নিনঃ

মশার কয়েল তৈরির মেশিনের চিত্র
মশার কয়েল তৈরির মেশিনের চিত্র
  • ১২ লাখ টাকাঃ ৪ পাঞ্চ মেশিন।
  • ১৮ লাখ টাকাঃ ৭ পাঞ্চ মেশিন।
  • ৩২ লাখ টাকাঃ ১২ পাঞ্চ বেশিন।
  • ৬৫ লাখ টাকাঃ ২১ পাঞ্চ মেশিন।

এইসব মেশিনের আলাদা আলাদা পার্টস রয়েছে। সেগুলি আপনাকে অবশ্যই কিনে নিতে হবে। না কিনলে আপনি কাজ করতে পারবেন না।

  • মিক্সার মেশিন ৬০ কেজি।
  • কেপাসিটি ঘন্টায় ২ হাজার, যা একটি পাঞ্চ কাটিং মেশিন।
  • ২টি আলাদা আলাদা মডেলের ২সেট কয়েল ডাইস কিনতে হবে।
  • ৬ লাখ টাকার মধ্যে ৩ সেট কয়েল কাটিং পাঞ্চ মেশিন কিনতে হবে।
  • হাইপ্রেসারের কুন্ডলী লেয়ার তৈরির মেশিন কিনতে হবে।
মশার কয়েল তৈরির ব্যাবসার আইডিয়া

মশার কয়েল তৈরির জন্য এগুলি আবশ্যিক মেশিন। আপনার যখন কলকারখানা তৈরি করা হবে বা ভাড়া করা হয়ে যাবে তারপর আপনি দেশ থকে বা বিদেশ থেকে এইসব মেশিন কিনতে পারেন। মেশিন কেনার জন্য বিদেশি একটি লিংক দিলাম।

যদি বাংলাদেশ থেকে কিনতে চান তবে সেটির ঠিকানাঃ

দোকানের ঠিকানাঃ আল-রাফি ইন্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস তেঁতুলঝোরা কলেজের বিপরীত পার্শ্বে,হেমায়েতপুর,সাভর,ঢাকা। মো: রাজিব হোসেন:- 01798443769, 01620593577

এগুলি কেনার পরে আপনাকে আপনার কলকারখানায় স্থাপন করতে হবে। আর সেজন্য ইঞ্জিনিয়ার,শ্রমিক, ইলেক্ট্রনিক্স ও অন্যান্য জিনিসের প্রয়োজন পড়বে। আর যেকোনো ব্যাবসা শুরু করতে গেলে অবশ্যই সরকারি অনুমোদন দরকার।

আরও পড়ুনঃ শীতকালের ব্যাবসা: ৪ ঘন্টা কাজ করলেই লাখ লাখ টাকা আয়!

প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র (Documents)

এই ব্যাবসা শুরু করতে গেলে অবশ্যই আপনার কাছে লিগাল কিছু কাগজপত্র থাকতেই হবে। সরকারি অনুমোদনের এপ্লাই করার জন্য কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। কি কি কাগজ পত্র লাগবে তা উল্লেখ করে দিলাম।

  • ট্রেড লাইসেন্স: সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন পরিশপদ থেকে করে নিতে পারবেন।
  • PHP লাইসেন্স: আপনি এই কাগজটি ঢাকার খামারবারি থেকে করে নিতে পারবেন। এটা না থাকলে আপনাকে জেলে পর্যন্ত যেতে হতে পারে।
  • ট্রেডমার্ক: আপনার কয়েলটি যেহেতু বাজারজাত করবেন নিজের লগো, নাম ইতায়দি ব্যাবহার করে সেজন্য আপনাকে লগোটি ট্রেডমার্ক করে নিতে হবে। এটা আপনি শিল্পমন্ত্রনালয় থেকে করে নিতে পারবেন।
  • ভ্যাটের ও টিন সার্টিফিকেট: যদি আপনার কম্পানি একক মালিকানা হয়ে থাকে তবে টিন সার্টিফিকেট হলেই হবে। যদি একক মালিকানা না হয় তবে ব্যাবসার নামে ট্রেডলাইসেন্স থাকতে হবে।
  • BSTI লাইসেন্স: বি এস টি আই লাইসেন্স করতে হলে আপনার উপরের সবগুলি কাগজ থাকতে হবে। আর এটি বিভাগীয় শহরেই করা যায়। আর এটি দেবার আগে বিএসটিয়াই এর লোক আপনার কারখানা ভিজিট করবে তারপর সার্টিফিকেট প্রদান করবে।
আরও পড়ুনঃ  দূর্দান্ত ব্যাবসার আইডিয়া, প্রতিদিন আয় করুন ১৫০০টাকা - পড়ুন

এতক্ষন যে যে ডকুমেন্টের কথা বল্লাম এগুলি ছাড়া আপনি ব্যাবসা শুরু করতেই পারবেন না। এগুলি বাদেউ নিচে উল্লেখিত কাগজপত্র থাকাটা ভালো। আমি নিচে উল্লেখ করে দিলামঃ

  • Fire license
  • Factory layout
  • Process Floorchat
  • Environmental clearance letter
  • Income tax certificate
  • Environmental No Objection Certificate
  • Certificate issued by Agricultural Extension

এগুলি ছাড়াও যদি সরকার আপনার থেকে আরও কাগজপত্র চায় তবে আপনাকে অবশ্যই সেগুলি জমা দিতে হবে।

উৎপাদন কিভাবে করবেনঃ

উপরের সকল প্রসেস হয়ে গেলে আপনার পরের কাজ হবে কারখানা চালু করা। এই মশার কয়েলের ব্যাবসা করতে হলে আপনার কয়েল তৈরির জন্য কাঁচামাল, কেমিক্যাল ইত্যাদির প্রয়োজন পড়বে। যা আপনাকে আমদানি করে আনতে হবে। বিভিন্ন ধরনের নারিকেল এর ছোলা, গাছ, বালু ইত্যাদি জিনিসের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও অনেক ধরনের কেমিক্যাল এর প্রয়োজন হয় কয়েল তৈরির ব্যাবসায়। আমি নিচে এগুলির নাম উল্লেখ করে দিলামঃ

মশার কয়েলের ছবি ১
মশার কয়েলের ছবি
  • Pyrethrum
  • MGK N
  • BHT (Butylated Hydroxytoluene)
  • Dimflthrim
  • Ambithotrin
  • pyrethroid
  • Mefluthrin
  • Pipernyl butcride
  • MGK 264 n
  • Allethrin

একেক রকম মশার কয়েল বানাতে একেক রকমের কাচামালের প্রয়োজন হয়। আমি কিছু কেমিক্যাল ও কাচামালের বিস্তারিত তুলে ধরলাম।

কারখানায় মশার কয়েল তৈরির চিত্র
কারখানায় মশার কয়েল তৈরির চিত্র

Pyrethrum

এটি কসিনিয়াম নামক উদ্ভিদের গুঁড়ো। কিন্তু পাউডার বা পাইরেথ্রাম গাছের ফুল থেকে তৈরি হয়। এই ফুলগুলো দেখতে খুব সুন্দর।

MGK 264 N

এই উপাদানটি পাইথ্রেয়েডকে বাড়াতে এবং উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়।

Dimflthrim

এটা এক ধরনের কীটনাশক। যা মশার কয়েল তৈরির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান। এটা ছাড়া মশার কয়েল বানানো সম্ভব নয়।

আরও পড়ুনঃ  চাকরির টেনশন ভুলে যান, ঘরে বসে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করুন, মাসে ভালো পরিমানে আয়!

মশার কয়েল তৈরি করতে এই রাসায়নিকগুলির প্রয়োজন হবে। আপনাকে অবশ্যই দক্ষ, প্রশিক্ষিত কারিগর বা শ্রমিক দিয়ে মশার কয়েল তৈরি করতে হবে।

যাতে কয়েল তৈরির সময় কেমিক্যাল কম বা বেশি ব্যবহার না হয়। রাসায়নিক কয়েলের অতিরিক্ত ব্যবহারে মানুষের অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

মানুষের এবং আপনার ব্যবসারও ক্ষতির উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। আবার যদি কম কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তাহলে মশার কয়েল কাজ করবে না এবং কেউ আপনার কারখানা থেকে মশার কয়েল কিনবে না। তার জন্য আপনার কারখানায় কিছু দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন।

পণ্য বিক্রি করবেন কিভাবেঃ

ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল এই ধাপটি যেখানে আপনাকে আপনার মশার কয়েল বিক্রি করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার সবচেয়ে বড় গ্রাহক গ্রামের দিকে। কারণ মর্টিন,গুড নাইটের মতো বড় কোম্পানি ঢাকায় মশার কয়েল বিক্রি করে। এখানে, আপনি তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

গ্রাম সাইডে বিক্রি করতে আপনাকে যা করা লাগবে-

  • দোকানদারদেরকে কয়েল বিক্রির কমিশন বেশি দিতে হবে।
  • সাপ্লাই বাড়াতে হবে পন্যের।
  • আপনার কয়েলের ব্যানার এবং পোষ্টার লাগাতে হবে বাজারে এবং দোকানগুলির সামনে।
  • যতটা সম্ভব বেশি পরিমানে মার্কেটিং করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ চাকরির টেনশন ভুলে যান, ঘরে বসে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করুন, মাসে ভালো পরিমানে আয়!

উপসংহার

মশার কয়েল তৈরি করে লাখ টাকা আয় করুন – এটিই ছিলো আমাদের লেখার মূল বিষয়বস্তু। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে সময়,ধৈর্য ছাড়া কেউই এক লাফে গাছে উঠতে পারেনা। প্রথম প্রথম হয়ত আপনার লাভ কম হতেউ পারে নাও হতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে ব্যাবসা আয়ত্তে এসে গেলে আপনি ভালো রকমের লাভের মুখ দেখবেন।

আপনার মনে ব্যাবসা করার অনেক ইচ্ছা, উদ্যোগতা হবার অনেক ইচ্ছা, কিন্তু ঝুকি নেবার মন-মানসিকতা না থাকলে এই ব্যাবসা আপনার জন্য না। ব্যাবসার মানেই হচ্ছে ঝুকি নেয়ার ক্ষমতা। যে যত বেশি ঝুকি নেয় ব্যাবসায় সে তত বেশি সফল হয়। তবে বাকি ব্যাবসা থেকে দূরে থাকবেনবাকি ব্যাবসায় আপনার হার্টের সমস্যা অথবা মস্তিষ্কে চাপ পড়তে পারেচোর চুরি করলে আপনার ব্যাবসা বন্ধ হবেনা, কিন্তু যদি একবার বাকি যায় তবে আপনার ব্যাবসা লাটে উঠবার সম্ভাবনা বেশি

Written By Bikrom Das

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link