সত্যবাদিতা রচনা ২০ পয়েন্ট | সততা ও সত্যবাদিতা রচনা

সত্যবাদিতা-রচনা-সততা-ও-সত
Contents
    সত্যবাদিতা রচনা    ভূমিকাঃসত্যবাদিতার বৈশিষ্ট্যঃ সত্যবাদিতার সুফলঃসত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তাঃসত্যবাদিতার মূল্যায়নঃ আমাদের কর্তব্যঃ সততার শত্রুঃসত্যের জয়ঃসত্যবাদিতার দৃষ্টান্তঃউপসংহারঃ      সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 6     ভূমিকাঃসততার বৈশিষ্ট্যঃসততা শ্রেষ্ঠ গুণঃ সমাজজীবনে সততার প্রভাবঃসততার প্রয়ােজনীয়তাঃসততাহীনতার পরিণামঃউপসংহারঃ      সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 4     ভূমিকাঃসততা ও সত্যবাদিতাঃসততা ও সত্যবাদিতার বৈশিষ্ট্যঃআমাদের দেশে সততা ও সত্যবাদিতার অবস্থাঃসততা ও সত্যবাদিতার সাধনাঃমানবজীবনে সততা ও সত্যবাদিতার আবশ্যকতাঃধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সততা ও সত্যবাদিতার গুরুত্বঃঅসততা ও অসত্যবাদীতার পরিণামঃসততা ও সত্যবাদিতার উপায়ঃসততা ও সত্যবাদিতার দৃষ্টান্তঃউপসংহারঃশেষ কথাআমাদের আরও পোষ্ট >> 

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সবাই আলো আছেন, আমিও ভালো আছি। আপনারা এখানে এই পোষ্টে যারা আসছেন তারা নিশ্চই সত্যবাদিতা রচনা এই পোষ্টটি খুজছেন। তো আপনাদের আমি বলব, আপনি সঠিক পোষ্টে ক্লিক করেছেন। আমাদের আজকের আয়োজন সততা ও সত্যবাদিতা রচনা শুধু মাত্র আপনাদের জন্য। আশাকরি আপনারা পড়বেন এবং আপনাদের গুরুত্বপূর্ন মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। 

    সত্যবাদিতা রচনা    

ভূমিকাঃ

যে সব গুন মানব চরিত্রকে মহিমান্বিত করে তোলে তার মধ্যে একটি মূল্যবান গুন হলো সত্যবাদিতা বা সততা। এটি মানুষের অন্যতম একটি মহৎ গুন। সত্য মুক্তি দেয় আর মিথ্যা ডেকে আনে ধ্বংস।  তাই বলা হয়ে থাকে সত্যের চেয়ে বড় গুন আর নেই। এই মহাবিশ্ব চির সত্যের উপর দন্ডায়মান। সত্য ও বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে মানুষ তার নিজেকে আবিষ্কার করে এবং মনুষ্যত্বকে অর্জন করে। 
ধর্ম, জ্ঞান-বিজ্ঞান, যা কিছু এ পৃথিবীতে আছে তার সব কিছুর মূলে যে চির সত্য লুকায়িত, আমরা শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে সে চির সত্যকে অর্জন করি। তাই মানুষের সাধনা সত্যের সাধনা। সত্যবাদিতার গুন অর্জন করাই মানুষের নিরন্তন সাধনা হওয়া উচিত। কোনো কিছু গোপন না করে অকপটে প্রকাশ করার নামই সত্যবাদীতার বৈশিষ্ট্য। মিথ্যা ও অসত্যকে বিতাড়িত করে সত্য চিরদিন মাথা উঁচু করে থাকে বলে এর মূল্য যুগে যুগে স্বীকৃত হয়ে এসেছে।
 

সত্যবাদিতার বৈশিষ্ট্যঃ 

সত্যবাদিতা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে ও গুরুত্বে বিশেষ অবদান রাখতে পারে বলে আদিকাল থেকে মানুষ তার চর্চা করে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জীবনকে পৌঁছিয়েছে সফলতার দারপ্রান্তে। সত্য হলো আলোর পথ আর মিথ্যার পথ হলো অন্ধকার। সত্যবাদিতার মূল বৈশিষ্ট্য হলো ‘সত্য’ অর্থাৎ সত্য চিরকাল প্রকাশমান থাকে। শুধু মিথ্যা না বলা বোঝাতে সত্যবাদিতা বোঝায় না। সত্যকে অবলম্বন করে যে বৈশিষ্ট্য বিকশিত হয় তার নাম সত্যবাদিতা। 
 
সত্যের মধ্যে কোনো গোপনীয়তা নেই। সত্য জীবনের স্বরূপ বিকশিত করে। সত্যবাদী লোকের কথা ও কাজে কোনো পার্থক্য থাকে না। সত্যবাদিতা মানুষকে খাঁটি সোনার মতো  নিখাদ করে তোলে। সত্যের মধ্যে মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়। সত্যের মধ্য দিয়েই মানুষ অর্জন করে সততা। সততা মানব চরিত্রের অপর একটি মহৎ গুন। সত্যের অনুসারী মানুষ সৎ থাকার প্রবণতার মাধ্যমে সততার বৈশিষ্ট্য রূপায়িত করে তোলে।
কোনো প্রকার পাপের কাজ থেকে দূরে থেকে ন্যায় ও সত্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে পারলে তাতে সততার যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। ফলে সত্যবাদিতা জীবনকে সার্থক করার একটি চমৎকার পন্থা ও মানব চরিত্রের উজ্জল অলংকার। তাই যুগে যুগে সত্যের সাধন চলছে। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেনঃ- 
“এত সব যার প্রাণ উৎসব সেই আজ শুধু নাই,
সত্য-প্রাণ সে রহিল অমর, মায়া যাহা হল ছাই!
ভুল যাহা ছিল ভেঙে গেল মহাশূন্যে মিলালাে ফাঁকা,
সৃজন-দিনের সত্য যে, সে-ই রয়ে গেল চির আঁকা”
সত্যবাদিতা শ্ৰেষ্ঠ গুণ 
সত্যবাদিতা মানবজীবনের একটি শ্রেষ্ঠ গুণ। যে সব গুণ মানবজীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তােলে তার মধ্যে সত্যবাদিতার স্থান সবার ওপরে। সত্যের অনুসরণে জীবন সুন্দর হয়। সত্যকে অবলম্বন করলে জীবনে সাফল্য অনিবার্য। সত্যবাদী লােক সমাজে সম্মান ও মর্যাদার আসন পান। সবাই তাকে বিশ্বাস করে। প্রত্যেক ধর্মই সত্যকে গ্রহণ ও মিথ্যাকে বর্জন করার আদেশরয়েছে। বলা হয়েছে, সকল পাপের উৎস হল মিথ্যা। কেননা মিথ্যা থেকেই শুরু হয় প্রতারণা, জালিয়াতি, নানাবিধ কুকর্ম। তাই মিথ্যা বলা মহাপাপ। আর সত্যবাদিতা মানুষের মহৎ গুণ।

সত্যবাদিতার সুফলঃ

সততা মানুষের জীবনে চির মুক্তি ও কল্যাণের পথ। সত্যবাদীকে সবাই বিশ্বাস করে। সমাজে তাকে সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখে এবং ভালােবাসে। অপরদিকে মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না। সমাজে তাকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখে। মনে রাখতে হবে কোনাে মানুষ অসৎ হয়ে জন্মায় না। জন্মাবার পরে পরিবার, সমাজ ও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাকে অসৎ পথে পরিচালিত করে। বিশেষ করে সাংসারিক চাপের মুখে, নানা হাহুতাশ থেকে পরিত্রাণের জন্যে নিরুপায় হয়ে অসৎ পথে পা বাড়ায়। সত্য চিরস্থায়ী। 
আর যে সত্যের পথে চলে এবং অন্যকে সত্যবাদি হওয়ার উপদেশ দেয় তিনি হলেন প্রকৃত মানুষ। সত্যের সুফল কেউ একা ভোগ করে না। একটি সমাজ তথা দেশের উন্নতি অনেকাংশে নির্ভর করে দেশের জনগণের উপর। জনগণের ভালো কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করেই দেশের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। কাজেই জনগণের মাঝে যদি সত্যবাদিতার গুণটি থাকে তাহলে দেশ থেকে অন্যায় চিরতরে বিদায় নিবে। থাকবে না কোনো অসৎ কাজ, থাকবে না মারামারি খুন রাহাজানি। দেশে শান্তি থাকবে অটুট।

সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তাঃ

সত্যবাদিতা থেকে বিচ্যুত হলে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ঘটে ফলে সমাজজীবনে অবৈধ কার্যকলাপ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং মানুষের মহৎ গুণাবলির তিরােধান ঘটে। মানুষ তখন নানা অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। সমাজে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলতা। দেশে নানা অশান্তির সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যাপক আকারে অন্যায় অনাচার সমাজে প্রবেশ করে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। তাই মানবজীবনের স্বার্থে অন্যায়কে সমাজ থেকে বিদূরিত করতে হবে। অন্যায়পথে যে চলে তার বিবেক বলতে কিছু থাকে না। বিবেক না থাকলে সমাজ হিংসায় মত্ত হয়ে উঠবে। তাই সমাজে বসবাসের জন্য সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। ধর্মীয় দিক থেকেও সত্যবাদিকে উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাই ধর্মবােধসম্পন্ন আদর্শ জীবনযাপনের জন্য সততা ও সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

সত্যবাদিতার মূল্যায়নঃ 

সততা ও সত্যবাদিতা বাস্তব জীবনের একটি মহত্তর দিক হলেও বাস্তব জীবনে বিশেষত দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তা যথার্থ মর্যাদা লাভ করতে পারছে না। আমরা এই মহৎ গুণটির মূল্যায়ন সঠিকভাবে করছি না। সততা পরিহার করে মানুষ সত্যপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। ফলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিকেই তারা প্রাধান্য দিয়ে নানা রকমের অত্যাচার, অনাচার ও দুর্নীতি করে চলেছে। 
অসততার প্রতি মানুষের তেমন প্রতিবাদ বা বিরূপতা দেখা যাচ্ছে না। সততা বিসর্জন দিয়ে মানুষ এখন নিজের স্বার্থ সাধনে তৎপর। অন্যায় বা অবৈধ পথ অনুসরণ করায় এখন সমাজে এসেছে অবক্ষয়। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই আজ মনুষ্যত্বের দীনতার চিত্র। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় বড়দের কাছ থেকে ভালাে কিছু শেখার আশা করা যায় না। যুব সমাজকে নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মতাে আজ কোনাে পরিকল্পনা নেই, ফলে তারা প্রতিনিয়ত অবক্ষয়ের দিকে অগ্রসরমান। একদিকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-কলহ, অপরদিকে অর্থনৈতিক দুর্দশা, ফলে শিক্ষাজগতে নৈরাজ্য, সমাজসেবার নামে নিজের স্বার্থ হাসিল এবং স্বেচ্ছাচারিতা যুবসমাজকে বিপথগামী করছে। 
 
আজ আমরা অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করি, সমাজে সমাজ-বিরােধীর যে সম্মান, যে প্রতিপত্তি, সেখানে একজন জ্ঞানী, সৎ মানুষের মূল্য তুচ্ছ। সততা সেখানে লাঞ্ছিত, অসহায়। বিবেক সেখানে বিবর্জিত। জ্ঞানী-গুণীরাও তাদের খাতির করে। রাজনৈতিক নেতাদের তারা ডান হাত! জঘন্য, নিষ্ঠুর কাজকর্ম করেও তারা আইনের চোখে নিরাপদ। প্রশাসন প্রয়ােজন মতাে ওদের ব্যবহার করে। কী তাদের মূলধন? তারা অনায়াসে মানুষ খুন করে, ডাকাতি করে, জনজীবনে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এই মূলধন নিয়েই ওরা সমাজের বিশিষ্ট মানুষ। আজ তাই মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ গৌণ হয়ে উঠেছে। বস্তুত সমাজের সর্বস্তরে আজ যে সততা, সত্যবাদিতা ও মূল্যবোধের অভাব, তার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া যুবকদের মাঝে প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে। 

আমাদের কর্তব্যঃ 

জীবনকে অবশ্যই সত্যবাদিতার মাধুর্যে মণ্ডিত করতে হবে। অন্যায়ের মাধ্যমে বা অবৈধ উপায়ে যতই বিত্তশালী হােক না কেন তা যে পাপ তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। অসত্যের পরাজয় আসবেই ও ন্যায়ের পথ চির উজ্জ্বল থাকবেই। সৎ ব্যক্তি নৈতিক শক্তির বলে বলীয়ান। পরােপকারই তার জীবনের ভ্ৰত। কখনাে সে অন্যের ক্ষতির চিন্তা করে না। সততায় বিশ্বাসী বলেই সে সমাজের অন্ধ মায়ামোহে পথভ্রষ্ট হয় না, হাজার প্রলােভনে সত্যভ্রষ্ট হয় না। সে লােভী, ঠক ও প্রতারক নয় বলেই জীবনে পাওয়া না-পাওয়ার বেদনায় কখনাে হতাশ হন না। সর্বক্ষণই তার হৃদয়মনে শান্তির পরশ বিরাজ করে।
মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হয় সততার গুণে। যে সমাজে সত্য ও সততার মূল্যায়ন নেই, সেই সমাজে মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনাে পার্থক্য নেই। সেই সমাজ ক্রমে নানা পাপাচারে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকে। সেজন্য সততা ও সত্যবাদিতার অনুশীলন করতে হবে এবং জীবনে তার প্রতিফলন ঘটিয়ে যথার্থ মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে হবে। সমাজে সততাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে মানুষকে নৈতিক বলে বলীয়ান করতে হবে। পরিবার, সমাজজীবন, এমনকী কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি পর্যায়ে সৎ ব্যক্তির মূল্যায়ন করতে হবে। সৎ ব্যক্তিকে মূল্যায়ন ব্যতীত কখনাে সমাজ ও জাতীর উন্নয়ন সম্ভব নয়। অসৎ ব্যক্তিকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজে সৎ ও অসৎ ব্যক্তির পরিণাম যদি দৃষ্টান্ত হয়ে দেখা না দেয়, তবে সে সমাজে কোনাে আদর্শ থাকে না, কোনাে মানদণ্ড থাকে না। অফুরান প্রাণশক্তির আঁধার সম্ভবনাময় যুবসমাজ সৎ মানুষের আচার-ব্যবহার ও কর্মসাধনায় উদ্বুদ্ধ হয় না, অনুপ্রেরণা পায় না। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে সমাজে আজ সৎ মানুষের প্রয়ােজন খুব প্রকট। তাই আমাদের সকলের প্রয়ােজন সত্যের সাধনা করা।

সততার শত্রুঃ

লােভ ও মিথ্যা সততার সবচেয়ে বড় শত্রু। সীমাহীন উচ্চাকাঙক্ষা, ভােগ-বিলাস, বিবেচনাহীন জৈবিক কামনা মানুষকে অসৎ পথে পরিচালিত করে। পাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্বে মানুষ ভুল পথে পা বাড়ায়। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে বিবেকহীন অমানুষে পরিণত হয়। অপরদিকে মিথ্যা হল মানবজীবনের তথা মনুষ্যত্বের অন্তরায়। মিথ্যা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। একটি মিথ্যার আশ্রয় নিতে গিয়ে মানুষ অসংখ্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। মিথ্যা সততার অন্তরায়। তাই এসব বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রেখে সত্যের ও সততার চর্চা করতে হবে।

সত্যের জয়ঃ

সমাজে সত্যের জয় এবং মিথ্যার পরাজয় নিশ্চিত। স্বার্থান্ধ মানুষ অনেক সময় নিজের সুবিধার জন্যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। নিজের লােভী মন অপরের ক্ষতিসাধনে তৎপর হয়। মিথ্যার ছলনায় মানুষ নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়। আপাতদৃষ্টিতে মিথ্যার জয় প্রতীয়মান হলেও তা স্থায়ী নয়। বরং সত্যের প্রকাশ এক সময় অনিবার্য হয়ে ওঠে এবং পরিণামে সত্যের বিজয় ঘােষিত হয়। সত্য-বিশ্বাসীরা পরম ধৈর্য-সহকারে সত্যের অনুসরণ করে এবং পরিণামে জয়লাভ করে।
অন্যদিকে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মানুষ ধ্বংসের পথে পরিচালিত হয়। যে অসৎ সে হয়তাে কখনাে কখনাে ভােগে, সম্পদে বিলাসবাসনে অনেক বড়াে হয়ে ওঠে কিন্তু তা ক্ষণিকের। পরিণামে সে অসৎ পথের জন্য অশান্তি ও দুর্ভোগ পােহাতে হয়। পক্ষান্তরে সৎ ব্যক্তি সাময়িক দুঃখ-কষ্টে জীবন অতিবাহিত করলেও ব্যক্তিজীবনে সে সফল ও কৃতকর্মে তৃপ্ত এবং আনন্দ লাভ করে। মহাকাল সৎ পথের যাত্রীদের নামই লিখে রাখে, অসৎ ব্যক্তিদের মহাকালের বুকে ঠাই নেই, তারা নিক্ষিপ্ত হয় ইতিহাসে আস্তাকুড়ে। সততাই সত্য, আসল এবং খাঁটি। এর রূপের কোনাে পরিবর্তন নেই। মিথ্যায় রয়েছে প্রলােভন, ছলচাতুরি। হীরা রং বদল করে না বলেই মূল্যবান, মুক্তো তা করে বলেই তার কম দাম। সত্যই জীবনকে পরিপূর্ণ বিকশিত করে, মিথ্যা জীবনকে পঙ্গু করে দেয়।

সত্যবাদিতার দৃষ্টান্তঃ

মহামানবগণ সত্যের অনুসরণে তাদের জীবনের মহান সাধনাকে সফল করেছেন। মহৎ ও বরণীয় মানুষ মাত্রই সত্যবাদিতার দৃষ্টান্ত। সত্যবাদিতার জন্য যেমন তারা লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য লাভ করেছেন, তেমনি সত্যের বলে বলীয়ান হয়ে তারা প্রবল শত্রুকেও পরাজিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেছেন। সর্বকালের মহামানব, মহাপুরুষ, মানব মুক্তির অগ্রদূত হযরত মুহাম্মদ (স.) সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর সমস্ত জীবন নানা দুঃখকষ্ট সহ্য করে কঠোর সাধনা মগ্ন ছিলেন। সত্যের সাধনায় তিনি ছিলেন অটল-অবিচল। হাজার দুঃখ-যন্ত্রণায়ও তিনি সত্যের পথ থেকে কখনাে বিদ্যুৎ হন নি। সত্যের সাধনার বলেই তিনি সবার কাছে আল-আমিন বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত হন। সত্যের জন্য ক্রুশ বিদ্ধ হয়েছেন জিশুখ্রিস্ট। সত্যাশ্রয়ী জোন অব আর্ককে (Joan of Arc) ‘ডাইনি’ বলে মিথ্যা অভিযুক্ত করে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। সত্যকে সমুন্নত রাখতে হেমলক (Hemlock) বিষপানে জীবন দিতে হয়েছে জ্ঞানপ্রেমিক দার্শনিক সক্রেটিসকে (Socrates)। এমনি করে সত্যের সাধনায় মহাপুরুষগণ জীবনকে যেভাবে গৌরবান্বিত করে গেছেন তা মানুষের কাছে মহান আদর্শ হিসেবে যুগ যুগ ধরে প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এঁদের নাম লেখা হয়েছে স্বর্ণাক্ষরে।

উপসংহারঃ

সত্যকে যারা মর্যাদা দেয় না তারা উদার হতে পারে না, তাদের মনে চিরদিন ভয় বিরাজ করে। সত্যবাদিতার মহৎ গুণের অভাবে মানুষের মন সব সময়ের জন্য ছােট হয়ে থাকে। অন্যদিকে, সত্যবাদী মানুষ নির্ভীক হয়, দুর্বার সাহস তার মনে বাসা বাঁধে। সে জন্য সত্যের পথ দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকতে হবে, আর মনে রাখতে হবে কবির অমর বাণীঃ-
“মুক্ত করাে ভয়, আপন মাঝে শক্তি ধরাে,
নিজেরে করাে জয়, দুর্বলেরে রক্ষা করাে দুর্জনেরে হানো ,
নিজেরে দীন নিঃসহায় যেন কভু না জানাে। 
মুক্ত করাে ভয়,
নিজের পরে করিতে ভয় না রাখাে সংশয়।”

      সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 6     

ক্লাস 6 এর বন্ধুরা আমি আপনাদের জন্য সত্যবাদিতা রচনা টি এখানে উল্লেখ করলাম। আপনারা যারা সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 6 খুজছেন বা সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস ৬ এটি খুজছেন তাদের জন্য নিম্নে সততা ও সত্যবাদিতা রচনাটি উল্লেখ করা হলো।
সত্যবাদিতা রচনা ২০ পয়েন্ট
সত্যবাদিতা রচনা ২০ পয়েন্ট
সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 6
আরও পড়ুনঃ  ছোটদের কম্পিউটার রচনা খুবই সহজ

ভূমিকাঃ

যেসব মানবীয় গুণ মানুষকে সমাজের উঁচু স্তরে আসীন করে তার মধ্যে সত্যবাদিতা অন্যতম। মানব চরিত্রকে মহিমান্বিত করতে হলে মানুষকে যেসব গুণের অধিকারী হতে হয় তার মধ্যেও সত্যবাদিতা বা সততা সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য। সত্যকে কোনােরূপ বিকৃত না করে প্রকাশ করা এবং ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে সত্য চর্চারই নাম সত্যবাদিতা। যুগে যুগে সত্যবাদী মানুষরা জগতে নন্দিত হয়েছে সততার উপযুক্ত পুরস্কারে ।

সততার বৈশিষ্ট্যঃ

জীবনের ভিন্ন ভিন্ন পদক্ষেপে সত্যকে ধারণ করে যাওয়ার মধ্যেই সততার বৈশিষ্ট্য বর্তমান । জাগতিক জীবনে সত্য ও মিথ্যা দুই-ই আছে। সত্য ও মিথ্যার মধ্যে মানুষ সময়ে সময়ে কোনাে একটিকে গ্রহণ করে। সত্য ও মিথ্যার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে মিথ্যাকে পরিহার করে সত্যকে গ্রহণ করা সহজ কাজ নয়। কিন্তু সত্যবাদী মানুষের কাছে মিথ্যাকে গ্রহণ করাই কঠিন। জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতেও মিথ্যাকে দূরে ঠেলে যারা সত্যকে স্বাগত জানায় তাদের জীবনেই সততার বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ মেলে। সত্যবাদী ব্যক্তির প্রতিটি কাজকর্মে সততার লক্ষণ প্রকাশ পায়। সততা আছে এমন ব্যক্তির পক্ষে সৎ চিন্তা, সৎ কাজ, সদ্ব্যবহার ইত্যাদি প্রশংসনীয় গুণকে বাদ দিয়ে জীবন কল্পনা করা সম্ভব নয়। ফলে তার জীবন হয়ে ওঠে সমাজের জন্যে আদর্শ । মানুষকে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিভিন্ন প্রয়ােজনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। কখনাে কখনাে সাময়িক লাভ ও ব্যক্তিস্বার্থকে রক্ষা করার জন্যে মানুষ মিথ্যার পক্ষেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু সত্যবাদী ব্যক্তি নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হলেও সত্যের পক্ষেই অবস্থান গ্রহণ করে থাকেন। তাই ব্যক্তি জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়েও মানুষ তার সততা ও অসততাকে জানান দিতে পারে।

সততা শ্রেষ্ঠ গুণঃ 

প্রবাদ আছে ‘Honesty is the best policy’ তাই গুণ হিসেবে সততার স্থান সবার ওপরে । যে জীবনে সততার অভাব আছে তাকে যেমন যত্রতত্র নিগৃহীত হতে হয় তেমনি সততাকে ধারণ করে এমন ব্যক্তি সর্বত্র হয়ে ওঠে পূজনীয়। জগতে কীর্তিমান মহামানবদের জীবনেও সততা চর্চার উদাহরণ লক্ষ করা যায়। পরিবারে অন্তত একজন ব্যক্তিও যদি সততার চর্চা করে তবে দেখা যায় সে পরিবারের সকলের কাছে অনেক বেশি বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে। সমাজজীবনেও এরূপ উদাহরণ চোখে পড়ে। নিতান্ত দরিদ্র হয়েও অনেক ব্যক্তি সমাজে আস্থাভাজন হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে, প্রচুর অর্থ-বিত্ত থাকা সত্ত্বেও সততা নেই বলে অনেকেই সমাজে বিবেচিত হয় নিকৃষ্ট ব্যক্তি হিসেবে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনেও সততার মতাে শ্রেষ্ঠ গুণটি বড় ভূমিকা পালন করে। কোনাে সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সমবায় সমিতিতে কোষাধ্যক্ষ পদটিতে সততা আছে এমন ব্যক্তিকেই নিয়ােগ দেয়া হয়। কোনো কোনাে সময় রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশকে বদলে দেয় ততা। কোনাে রাজনৈতিক দলের পরাক্রমশালী নেতা হয়তাে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হবার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। পক্ষান্তরে, রাজনৈতিক দলগত পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও কোনাে ব্যক্তি স্বতন্ত্র হিসেবেই নির্বাচনে বিপুল ভােটে জয় লাভ করে। শুধু সততার শক্তিতেই। 

সমাজজীবনে সততার প্রভাবঃ

সমাজজীবনে সততার আছে শক্তিশালী প্রভাব। সৎ ব্যক্তি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পছন্দের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়। ফলে তার ওপরই সকলে ন্যস্ত করতে চায় নেতৃত্ব। তাই সততার বলে ব্যক্তি সমাজে উচ্চ ও দৃঢ় অবস্থানে আসীন হয়। যুগে যুগে শিক্ষাহীন, ধর্মহীন মানুষকে ধর্মের পথে দীক্ষিত করা সম্ভব হয়েছিল সমাজের সৎ ব্যক্তিদের মাধ্যমেই । ধর্ম প্রচারক, ও আল্লাহর প্রেরিত প্রিয়বান্দারা সকলেই ছিলেন সত্যবাদী। তাই তাদের আমন্ত্রণে পথহারা মানুষ। ধর্মের আওতায় এসে সঠিক পথের সন্ধান লাভ করেছে। ব্যক্তি হজরত মুহম্মদ (স.) তৎকালীন মূখ সমাজের মানুষকে আল্লাহর মনােনীত ধর্মে আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন তাঁর সততাপূর্ণ সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রগুণেই। এমনকি বিধর্মী ইহুদিরা পর্যন্ত তাকে ‘আল-আমিন’ বলে ডাকত তার জীবনে সততা ছিল বলেই । ফলে সমাজের মানুষ তাকে বিশ্বাস করেছে। আর বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েই ইসলাম ধর্মের বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলেন হজরত মুহম্মদ (স.)। তাই সমাজজীবনে এই সততার ব্যাপক প্রভাবের কথা অস্বীকার করা যায় না ।

সততার প্রয়ােজনীয়তাঃ

ব্যক্তি ও সমাজজীবনে সততার প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। জীবনের অনিবার্য প্রয়ােজনে মানুষকে কাজ করতে হয়, চাকরিতে যােগদান করতে হয়। কর্মজীবনে সততা না থাকলে সহকর্মীদের শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা লাভ করা যায়। লােভ-লালসা, প্রলােভন ইত্যাদির উর্ধ্বে থেকে মানুষকে সততা চর্চা করতে হয়, অন্যথা ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র কলুষিত হয় । সমাজজীবনে সততার অভাব হলে সমাজে অন্যায়-অবিচার বৃদ্ধি পায় । সমাজ হয়ে পড়ে অস্থিতিশীল। তাই একটি সুন্দর সমাজের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্যে চাই সততা চর্চা। রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় জীবনেও রয়েছে সততার অপরিসীম। প্রয়ােজনীয়তা। জাতীয় জীবনে সততার অনুশীলন যত বেশি হবে রাষ্ট্র তত নিরাপদ ও শান্তিময় হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, সততার অভাব থেকে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে জাতির জাতীয় উন্নয়ন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। তাই সততার প্রয়ােজনকে স্বীকার করে এর অনুশীলন বৃদ্ধি করা জরুরি।

সততাহীনতার পরিণামঃ

সততাহীন যে জীবন সে জীবন জননিন্দিত জীবন। মানুষ এ জীবনকে সমর্থন করে না, এমনকি সষ্টাও সততাবর্জিত মানুষকে অপছন্দ করেন। সততাহীন জীবনের কাছে কোনাে অন্যায়ই অন্যায় বলে বিবেচিত হয় না। ফলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পৃথিবীতে এমন রাষ্ট্র চোখে পড়ে যেখানে শুধু সততার অভাব আছে বলেই তারা পিছিয়ে আছে আর সে কারণেই উন্নয়ন আর গৌরব তাদের কাছে রয়ে গেছে অধরা।

উপসংহারঃ

সততা মানবজীবনের ভূষণ। এ সৎ গুণটি মানুষকে মহিমান্বিত করে। সমাজ ও রাষ্ট্রে সকল নাগরিক এ গুণটি চর্চা করলে জাতির ললাটে জুটবে গৌরবের রাজটিকা। সত্য, সুন্দর ও নান্দনিক জীবনের আনন্দ উপভােগ করতে হলেও সততা বা সত্যবাদিতার বিকল্প নেই।

      সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 4     

প্রিয় শিক্ষার্থীগন, আপনারা অনেক্ষন যাবত আমাদের এই পেইজে সত্যবাদিতা রচনা পড়লেন। এবার আমার ছোট্ট বন্ধুদের জন্য সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 4 এর রচনা উল্লেখ করে দিলাম। যারা ছোট ক্লাসে পড়েন তারা এই রচনাটিও শিখে নিতে পারেন।
সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 4
সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 4
আরও পড়ুনঃ  সাহিত্যের সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা শিখুন খুব সহজে

ভূমিকাঃ

মানুষের আচরণগত মানবিক মূল্যবােধের মধ্যে সততা ও সত্যবাদিতা অন্যতম। এ গুণ মানব চরিত্রকে সুষমামন্ডিত করেছে। মানবজীবনে সততা ও সত্যবাদিতার প্রতিফলন ঘটালে মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ। ঘটে। বিশ্বসভ্যতার শুরু থেকে মানুষ সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করে আসছে। জাতীয় জীবনে সততা ও সত্যবাদিতার প্রতিফলন ঘটিয়ে মানুষ আজ সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান করছে। এ গুণ ব্যতিত মানুষ কোনাে কাজ করতে পারে না।
‘মরে না মরে না কভু সত্য যাহা, শত শতাব্দীর
বিস্মৃতির তলে, 
নাহি মরে উপেক্ষায়, অপমানে না হয় অস্থির 
আঘাতে না টলে।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

সততা ও সত্যবাদিতাঃ

সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকাই হলাে সততা আর সত্যের আলােকে পরিচালিত মানব গুণই সত্যবাদিতা। মানব জীবনের সকল সদগুণই সততা ও সত্যবাদিতার অন্তর্ভুক্ত। দৃঢ় চিত্তে, । সাহসের সঙ্গে সত্যের পথ অবলম্বন করলে শাশ্বত কল্যাণ লাভ করা যায়।

সততা ও সত্যবাদিতার বৈশিষ্ট্যঃ

কোনাে কিছুর হুবহু প্রকাশ করা হলাে সত্য অর্থাৎ কোনাে কিছু গােপন না করে, মিথ্যা বা কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে সম্পূর্ণভাবে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করা হলাে সত্য। আর সত্যের পথে পরিচালিত, সত্যকে প্রায়ােগিক জীবনে প্রতিফলন ঘটিয়ে জীবনযাপন করা হলাে সততা। সৎ পথে থেকে সত্যের পথ অবলম্বন করে সত্য প্রকাশ হলাে সত্যবাদিতা। সততা ও সত্যবাদিতা মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণ। সৎ ও সত্যবাদী ব্যক্তি কখনাে মিথ্যা বলে না, কোনাে কিছু গােপন করে না। মানুষের মধ্যে কুৎসা রটায় না। ন্যায় ও নীতির পথ অবলম্বন করে। অন্যায় কাজ করে না এবং অন্যায় কাজের সাথে আপােস করে না।

আমাদের দেশে সততা ও সত্যবাদিতার অবস্থাঃ

আমাদের দেশে সততা ও সত্যবাদিতার অবস্থা খুবই নাজুক। এদেশে দুর্নীতি জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। এমন কোনাে ক্ষেত্র নেই যেখানে দুর্নীতির কালাে থাবা আঘাত হানেনি। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ, গুম-হত্যা, রাহাজানি বর্তমানে নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। সৎ পথে উপার্জনের চেয়ে অসৎ পথে উপার্জনের দিকে জাতি বেশি ঝুঁকে পড়েছে। অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের প্রতিযােগিতা চলছে। সততা সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হলেও আমাদের মানবিক মূল্যবােধ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সত্যের পথ ছেড়ে আমরা অন্ধকারের পথে হাঁটছি।

সততা ও সত্যবাদিতার সাধনাঃ

সততা ও সত্যবাদিতার জন্য সাধনার প্রয়ােজন। মিথ্যার বেড়াজাল ভেদ করে সত্যকে অবলম্বন করতে কঠোর সাধনা করতে হয়। পৃথিবীতে কোনাে সত্য আপনা-আপনি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণ করে, অসৎ পথ এড়িয়ে সৎ পথে চলতে সাধনা করতে হয়। সত্যের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়। মাওলানা আকরাম খাঁ বলেনঃ-

‘পৃথিবীতে যখন কোনাে সত্য আত্মপ্রতিষ্ঠা করিতে চাহিয়াছে তখনই তাহার বিরুদ্ধাচরণ হইয়াছে, এই বিরুদ্ধাচরণের ধারা ও নীতি মূলতঃ সকল ক্ষেত্রেই অভিন্ন।’

মানবজীবনে সততা ও সত্যবাদিতার আবশ্যকতাঃ

সততা ও সত্যবাদিতা মানুষকে সুন্দর, সঠিক ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। আর যদি এ মহৎ গুণটি না থাকে তবে মানুষ হিংস্র হয়ে উঠে, তার ভিতরে । পাপবােধ কাজ করে না। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে এ সব মানুষ অন্যায় কাজ করে সমাজ কলুষিত করে। মানবতা বলতে তাদের মধ্যে কিছুই থাকে না। জীবনে সফলতা লাভ করতে হলে সততা ও সত্যবাদীতার পথ অনুসরণ করতে হয়। ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলেনঃ-

‘সত্যকে আশ্রয় করাে আর অসত্যের অনুগমন করাে না, শান্তি তােমাকে কিছুতেই ছেড়ে যাবে না।’ 

সত্য ও সততা থাকলে মানুষের মধ্যে কোনাে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি থাকবে না। কেউ দুর্নীতি করবে না, ঘুষ নিবে না, অবৈধ উপায়ে উপার্জনের চেষ্টা করবে না। সবাই সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারবে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সততা ও সত্যবাদিতার গুরুত্বঃ

প্রত্যেক ধর্মেই সত্যের পথ অবলম্বন করতে আর সৎ উপায়ে উপার্জন করতে বলা হয়েছে। যাবতীয় কলুষতা দূর করে নিষ্কলঙ্ক জীবনযাপন করতে প্রত্যেক ধর্মই সততা ও সত্যবাদিতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম ধর্মেও এ গুণটির সম্পর্কে আলােকপাত করা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) বলেনঃ-

‘সত্যবাদিতা সুকর্মের পথ দেখায় আর সুকর্ম বেহেস্তের পথ দেখায়।’

অসততা ও অসত্যবাদীতার পরিণামঃ

সততা ও সত্যবাদিতা ছাড়া মানুষের কোনাে গুণই বিকশিত হতে পারে না। সত্য যখন অসত্যের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে তখন মানুষের মান বিক মূল্যবােধ হ্রাস পায়। তখন সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। মানুষ স্বার্থপর ও দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে ওঠে। তাদের মধ্যে ন্যায়-অন্যায়। বলে কোনাে বােধ থাকে না। সততা ও সত্যবাদিতা তাদের বিবেককে নাড়া দিতে পারে না। মানুষ যখন সত্যের আলাে থেকে দূরে সরে যায়, তখন জাতির জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। জাতি ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেনঃ-
‘দ্বার রুদ্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি, 
সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি।’

সততা ও সত্যবাদিতার উপায়ঃ

শিশুকাল থেকে শিশুদেরকে সততা ও সত্যবাদিতার শিক্ষা দিতে হবে। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের এ গুণটির আদর্শকে ধারণ করতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। আর আমাদের ব্যক্তি জীবনের প্রাত্যহিক কাজকর্মে এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সৎ ও সত্যবাদী জীবনকে আদর্শ জীবনরূপে গ্রহণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করতে পারলেই জীবনের সার্থকতা বাড়ে।

সততা ও সত্যবাদিতার দৃষ্টান্তঃ

যুগে যুগে মহা মনীষীরা সত্য ও সত্যবাদিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তারা সত্যকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে জীবনকে মহিমান্বিত করেছেন। তারা সমাজে সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য। আজীবন সাধনা করেছেন। হযরত মুহম্মদ (স.) সারাজীবন সত্যের পথে ছিলেন এবং সত্য প্রচার করেছেন। সত্যের মাধ্যমে তিনি মানুষের মন জয় করেছিলেন। মনীষীরা তাঁদের কাজ-কর্মে সত্যবাদিতার পরিচয় দিয়েছেন। এক্ষেত্রে হযরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) এর সত্যবাদিতার কাহিনী চমকপ্রদ।

উপসংহারঃ

সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। সত্য কখনাে চাপা থাকে না। সত্য সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে তার স্বরূপে ফিরে আসবে। সততা ও সত্যবাদিতা হবে সকল অন্যায়-অত্যাচার, খারাপ কাজের বিরুদ্ধে হাতিয়ার। সততা ও সত্যবাদিতার আলােকে সমাজকে আলােকিত করতে হবে। সত্যের সাথে কোনাে অন্যায়, অসৎ কাজ জয়ী হতে পারেনা। শেকস্পিয়ার বলেছেনঃ-

‘সততার নিকট দুর্নীতি কোনাে দিনই জয়ী হতে পারে না।’

শেষ কথা

প্রিয় শিক্ষার্থী ও বন্ধুরা কেমন লাগলো আমাদের আজকের সত্যবাদিতা রচনা ২০ পয়েন্ট এই পোষ্টটি। আশাকরি জ্ঞানার্জন করেছেন। যদি রচনাগুলো আপনি আয়ত্ত করেন তবে আপনি পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হবেনই। তাই সততা ও সত্যবাদিতা রচনা টি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

আমাদের আরও পোষ্ট >> 

TAG: সত্যবাদিতা রচনা,সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 6,সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস ৬,সততা ও সত্যবাদিতা রচনা,সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 4,সত্যবাদিতা রচনা ২০ পয়েন্ট,সত্যবাদিতা রচনা class 6,সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 3,সত্যবাদিতা রচনা ষষ্ঠ শ্রেণি,সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস ৭,সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস 5,সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস ৫,সত্যবাদিতা রচনা ক্লাস ৪,sottobadita bangla rochona,sottobadita bangla rochona for class 7।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link