আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট | একুশ আমার অহংকার রচনা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট
Contents
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনাসূচনা:আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য: উপসংহার: একুশ আমার অহংকার রচনাভূমিকা:মাতৃভাষা: ভাষা আন্দোলনের পটভূমি: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন: ১৯৫৪ সালের স্বীকৃতি: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও গুরুত্ব: মাতৃভাষার বর্তমান অবস্থা: মাতৃভাষা রক্ষায় আমাদের করণীয়: উপসংহার: শেষ কথা, FAQs: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনাআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি কি? মাতৃভাষা রক্ষায় আমাদের করণীয় কি?

আপনাদের সবাইকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট এই আর্টিক্যালে স্বাগতম। একুশ আমার অহংকার রচনা টি মূলত একই। আর এই রচনা বর্তমানে প্রায় পরিক্ষাতেই এসে থাকে। আর আমি আপনাদের পড়া সহজ করে দেয়ার জন্য নিয়ে এলাম এই রচনাটি। রচনাটি ২-৩বার মনযোগসহকারে পড়লে আশাকরি পারবেন। নিচ থেকে রচনাটি পড়ে নিন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্মন্ধে জানতে Wikipidia তে যান।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

সূচনা:

মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা মানব অস্তিত্বের প্রধান তিনটি অবলম্বন। মানুষের পরিচয়ের সেরা কষ্টিপাথর মাতৃভাষা, দেশের ভাষা, জাতির ভাষা। মাতৃভাষার অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকারসমূহের মধ্যে অন্যতম। এ অধিকার নিজের মতাে করে কথা বলার অধিকার, স্বতঃস্ফূর্ত চেতনায় উদ্ভাসিত স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছিল বরকত, সালাম, রফিক, শফিক, জব্বার এবং আরও অনেক নাম না জানা বাঙালি। তাদের সে রক্তে রঞ্জিত একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বজনীন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি:

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রয়েছে একটি গৌরবদীপ্ত ঐতিহাসিক পটভূমি । ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারিতে পূর্ববাংলার জনগণ বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল । বাঙালির সেই ঐতিহাসিক ভাষা শহীদ দিবস ২১-এ ফেব্রুয়ারি আজ সারাবিশ্বের ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। ১৪ই আগস্ট, ১৯৪৭-এর পাকিস্তান সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই বাঙালি জাতির চেতনায় বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের তরঙ্গ প্রবাহিত হয়েছিল ।

তদানীন্তন পাকিস্তান রাষ্ট্রের গােড়াপত্তন ঘটে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা, কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বাংলা ভাষাকে পাশ কাটিয়ে গােপনে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও উর্দু ছিল মাত্র ৬ শতাংশ লােকের মাতৃভাষা। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পাকিস্তানি শাসকদের এ অপপ্রচেষ্টা বাঙালিকে বিদ্রোহী করে তােলে। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার স্বপক্ষে একটি প্রস্তাব পাশ করা হলে পূর্ব পাকিস্তানের জাগ্রত ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিল প্রচণ্ড ক্ষোভের সাথে। তবে এ আন্দোলন জোরদার হয় ১৯৪৮ সালে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘােষণার পর থেকেই। 

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী যতই বাংলা ভাষার বিরােধিতা করতে থাকে ততই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। সমগ্র পূর্ববাংলা একই অঙ্গীকারে ঐক্যবদ্ধ হয়। বাঙালি ঘােষণা করেছিল, উর্দুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাকে দিতে হবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ দাবি না মেনে ঘােষণা করে উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’।

এ অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের ফলে সরকার ও ছাত্রসমাজের মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হয়। এরই জের হিসেবে বায়ান্নর ২১-এ ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। অনেক প্রাণের তাজা রক্তে সেদিন রঞ্জিত হয় রাজপথ। এ নৃশংসতা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তােলে, গর্জে ওঠে সারা বাংলা। আতঙ্কিত সরকার বাধ্য হয়ে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে রক্তাক্ত একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। সময়ের দাবিতে ভাষা আন্দোলন পরিণত হয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে। একুশের চেতনাই বাঙালিকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শক্তি জুগিয়েছে। মাতৃভাষার জন্য।

বাঙালির সেদিনের আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। একুশ এখন আর কেবল বাঙালির ‘শহীদ দিবস’ নয়। একুশ এখন সারা বিশ্বের । বিশ্বের ১৮৮টি দেশে ভাষা শহীদদের অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করা হয় এ দিনে বাঙালির ‘শহীদ দিবস’ এখন বিশ্ববাসীর ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এককথায়, একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনাজাত প্রয়াসের ফসল ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি:

‘৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের গণমানুষের দৃঢ় অঙ্গীকারই বিশ্বসভায় বাংলা ভাষাকে মর্যাদার আসন দিয়েছে সত্যিকার অর্থে মা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি আমাদের হৃদয়ছোঁয়া আবেগই বাংলা ভাষার বিশ্বায়নে সহায়তা করেছে। ২১-এ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে কানাডায় বসবাসরত প্রবাসীদের সংগঠন “Mother Language Lovers of the world Society, এর পেছনে যে দু জন বাঙালির কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি তারা হলেন—আব্দুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম। তাঁরাই ১৯৯৮ সালের ৯ই জানুয়ারি ২১-এ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘােষণার জন্য জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি আবেদনপত্র পাঠান। 

আরও পড়ুনঃ  ছোটদের গরুর রচনা | গরুর রচনা বাংলা

সাতটি ভাষার ১০ জন মানুষ এ আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন। কফি আনান ইউনেস্কোর সাথে যােগাযােগ করার পরামর্শ জানালে ইউনেস্কোকে একটি আবেদনপত্র পাঠানাে হয়। কিন্তু ইউনেস্কোর শিক্ষা বিভাগের প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ মিসেস আনা মারিয়া এর প্রত্যুত্তরে বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে কোনাে প্রস্তাব গ্রহণের অপারগতা জানান। তিনি বলেন, সরকারের মাধ্যমে আবেদন করা হলে ইউনেস্কো তা বিবেচনা করে দেখবে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হয়।

১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের সমর্থন নিয়ে ২১-এ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ স্বীকৃতি হচ্ছে মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের অনন্য ত্যাগের স্বীকৃতি প্রদান। এরই আলােকে ২০০০ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হলাে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালির ‘শহীদ দিবস’ এখন পালিত হয় ইউনেস্কোর ১৮৮টি সদস্য দেশে এবং ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য:

যেকোনাে দেশের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে সে দেশের মাতৃভাষাতেই। তাই ভাষাই একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক। ইউনেস্কোর সম্মেলনে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলা হয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। মাতৃভাষা দিবস কেবল কোনাে দেশ বা জাতির গােষ্ঠী চেতনাকেই সম্মানিত করে না বরং বিশ্বের প্রতিটি জাতির ভাষার প্রতিই মর্যাদা প্রদর্শন করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর তাৎপর্য হলাে সকল মাতৃভাষাকে বিকশিত হওয়ার সুযােগ দেওয়া, যথাযােগ্য মর্যাদা দেওয়া, বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা, দুর্বল বলে কোনাে ভাষার প্রতি প্রভুত্ব আরােপের অপচেষ্টা না করা, ছােট-বড় সকল জাতির ভাষাকে সমমর্যাদা দান করা। 

একুশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে কেবল বাঙালির মাতৃভাষার প্রতিই নয়, বিশ্বমানবের আপন ভাষার মর্যাদার দিকটিও এতে শনাক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবস পালনের ফলে বিশ্ব সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবােধ সম্পর্কে কৌতূহল সৃষ্টি হচ্ছে। একুশের অনন্য চেতনা বিশ্ববাসীকে নিজ নিজ ভাষাকে ভালােবাসার প্রেরণা জোগাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের মাধ্যমে আন্তঃরাষ্ট্রীয় নৈকট্য বাড়ছে। বিশ্ববাসীর পদচারণায় আমাদের ভাষা হচ্ছে শক্তিশালী এবং ক্রমবিকাশমান । ভাষার প্রতি বাঙালির আত্মত্যাগ আর ভালােবাসা বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে দিল আপন ভাষা, আপন সংস্কৃতিকে ভালােবাসার মন্ত্র। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর তাৎপর্য উপলব্ধি করে ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, ‘আমি মুগ্ধ, আমি প্রীত, আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আমার প্রাণের কথা আমার ভাষায় জানাতে পারব বলে আমার হৃদয়-স্পন্দন বেড়েছে। সত্যিই গর্বিত আমি।’

উপসংহার:

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পর বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিশ্ব দরবারে লাভ করেছে ব্যাপকতা, পেয়েছে বিশেষ মহত্ত্ব। আন্তর্জাতিকীকরণের মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে নতুন মহিমা, নতুন গরিমা, নতুন মর্যাদা। ভাষার এ বৈশ্বিক স্বীকৃতি আমাদের দুর্লভ অর্জন । ভাষার প্রশ্নে তাই আমরা আনন্দিত, গর্বিত, তবে আমরা মাতৃভাষাকে ভালােবাসা এবং সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি বিশ্বের সকল মানুষের মাতৃভাষার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করব— এ চেতনায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেই এ মহান দিবসের সার্থকতা।

একুশ আমার অহংকার রচনা

একুশ আমার অহংকার রচনা

(সংকেত: ভূমিকা,মাতৃভাষাভাষা আন্দোলনের পটভূমি,১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন,১৯৫৪ সালের স্বীকৃতি,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও গুরুত্ব,মাতৃভাষার বর্তমান অবস্থা,মাতৃভাষা রক্ষায় আমাদের করণীয়,উপসংহার,শহীদ দিবস রচনা।)

ভূমিকা:

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাে একুশে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি”

একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন। বাঙালির জাতীয় জীবনের সকল চেতনার উৎস হচ্ছে এ দিনটি। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার ঐতিহাসিক দিন এটি। এদিনেই বাঙালির তাজা রক্ত রাজপথে ঝরেছিল। বাঙালির রক্তঝরা এ দিনটিকে সারা বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সম্মান জানিয়েছে ভাষাশহীদদের প্রতি।

আরও পড়ুনঃ  বিজয় দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট | বিজয় দিবস রচনা

মাতৃভাষা: 

বিশ্বের প্রতিটি জাতির রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। আর এ নিজস্ব ভাষাই হচ্ছে মাতৃভাষা। যেমন— বাঙালিদের মাতৃভাষা বাংলা, ইংরেজদের ইংরেজি, আরবীয়দের আরবি ইত্যাদি। কবির ভাষায় ‘যে ভাষাতে প্রথম বােলে, ডাকনু মায়ে মা মা বলে’ সে ভাষাই আমাদের মাতৃভাষা।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি: 

বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের ভাষা বালা হলেও রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বালা উপেক্ষিত হতে থাকে। বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্র ব্রিটিশ আমল থেকেই চলছে। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান যুবকর্মী সম্মেলনে প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের অফিস ও আইন-আদালতের ভাষা এবং শিক্ষার বাহন হিসেবে বাংলাকে চালু করার দাবি জানানাে হয়।

১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে পাকিস্তান সরকারের এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন মন্ত্রীর সাথে দেখা করে বালা ভাষার সমর্থনে প্রতিশ্রুতি আদায়ের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। ১৯৪৮ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের গণপরিষদের এক অধিবেশনে ইংরেজির পাশাপাশি উর্দু ভাষাতে অধিবেশনের কার্যক্রম রেকর্ড হওয়ায় এর প্রতিবাদ করেন এবং বাংলার স্বীকৃতির জন্য দাবি জানান।

কিন্তু এ দাবি প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় পূর্ব বাংলার শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তাল হতে থাকে। এমন সময়ে ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মুহম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণে বলেন “Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan.” ২৪ মার্চ কার্জন হলে তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করলে উপস্থিত ছাত্ররা ‘No, no, It can’t be.” বলে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং ২৬ মার্চ ধর্মঘট পালন করে। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন ঢাকার এক জনসভায় জিন্নাহর কথার পুনরাবৃত্তি করলে পূর্ব বাংলার গণমানসে প্রচন্ড ক্ষোভ দেখা দেয়। এরপরই শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের মূল সগ্রাম।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন: 

মাতৃভাষা প্রীতি ও প্রতিষ্ঠার সত্যমে বাঙালি জাতির ইতিহাস সারা বিশ্বে গৌরবদীপ্ত এক বিরল ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনকে সামনে রেখে সমগ্র দেশে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন জোরদার করা হয়। পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসক ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সকল প্রকার মিটিং, মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘােষণা করে। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানে প্রত্যয়ী ছাত্রসমাজ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। সাথে সাথে পুলিশ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ আরও অনেকে শহীদ হয়। এ হত্যাযজ্ঞ ও দমননীতির ফলে আন্দোলন আরও বেগবান হয়।

১৯৫৪ সালের স্বীকৃতি: 

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের খবর সারা দেশে বিদ্যুদ্বেগে পৌছে যায় এবং দেশবাসী প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানগণ পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে পূর্ব বাংলার ভাষার দাবি মেনে নেয়ার জন্য অনবরত চাপ দিতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি: 

একুশে ফেব্রুয়ারিকে আভর্জাতিক মর্যাদা দেওয়ার ব্যাপারে সর্বপ্রথম সচেষ্ট হন কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম। এ দুজন আরও কয়েকজন মাতৃভাষাপ্রিয় ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে তােলেন ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামক সংস্থা। ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি এ সংস্থার পক্ষ থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘােষণার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের কাছে আবেদন পাঠানাে হয়। কিন্তু বেসরকারি সংস্থা হওয়ায় তা অগ্রাহ্য করা হয়। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আবেদন করেন। অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাবটি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর ৩১তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বিশ্বের ২৮টি দেশ এ সনদে স্বাক্ষর করে। বাঙালি জাতির জন্য একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্তি এক অভাবনীয় অর্জন।

আরও পড়ুনঃ  আমাদের দেশ রচনা ক্লাস ৫ | আমাদের দেশ রচনা ক্লাস 4

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন: 

আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে যারা নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে তাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়েই আমরা পেয়েছি মধুর বাছা ভাষা। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমরা শ্রদ্ধাভরে তাঁদের স্মরণ করি। এদিন শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে তাঁদের প্রতি সম্মান জানাই। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এ দিনটি পালন করা হয়। বর্তমানে একুশে ফেব্রুয়ারিকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশ অত্যন্ত আনন্দের সাথে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও গুরুত্ব: 

মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস পৃথিবীতে আর নেই। আমাদের বীর সন্তানদের আত্মত্যাগের জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করেছে। ভাষার এ মর্যাদা বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি আজ বীরের মতাে মাথা উঁচু করে আছে। আমাদের ভাষাপ্রীতি অন্যান্য দেশের মানুষের মধ্যেও তা জাগিয়ে তুলেছে। আমাদের দেখে তারাও তাদের মাতৃভাষাকে ভালােবাসতে শিখবে।

মাতৃভাষার বর্তমান অবস্থা: 

বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের অহংকার। এ ভাষার প্রতিটা বর্ণেই ভেসে উঠে বায়ান্নর শহীদদের জমাট রক্তের চিহ্ন। এই ভাষার প্রতিটা বর্ণে আছে শতশত মায়েরা কান্না, অসংখ্যা যুবকের মরা লাশের গন্ধ। কিন্তু আমাদের এক শ্রেণির দ্বারা এই মধুর ভাষা আজ চরম লাঞ্ছিত। বিদেশি ভাষার অনুপ্রবেশ এই ভাষার মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করছে প্রতিনিয়ত। বাংলাভাষায় ভিনদেশী ভাষার সংমিশ্রণে একদিকে যেমন হয় বাংলামায়ের প্রতি অবমাননা, তেমনি ভাষার জন্য জীবননাৎসর্গকারী বাংলা মায়ের সন্তানদের প্রতিও হয় অবিচার। বর্তমানে বাঙালির মুখে ভিনদেশী ভাষার প্রতিযােগিতা দেখে শহীদ যুবকদের করুণ কণ্ঠ ভেসে উঠে বাংলাদেশে। এই কণ্ঠগুলােই একদিন দিয়েছিল বক্ষভেদী স্লোগান। রাজপথে বয়ে দিয়েছিল তাজা রক্তের স্রোত। কিন্তু আজকে ভিনদেশী ভাষার প্রতি আমাদের অধিক আগ্রহ আর চর্চাসক্তি দেখে লজ্জিত হয় ভাষা শহীদদের আত্মা।

মাতৃভাষা রক্ষায় আমাদের করণীয়: 

ভাষার জন্য আত্মত্যাগ করা আমরাই বিশ্বে প্রথম জাতি। তাই এই ভাষার সম্মান রক্ষায় ভিনদেশী ভাষার সীমাতীত ব্যবহার পরিত্যাগ করা অত্যাবশ্যক। আমাদের শিশু ও আগামী প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দিতে হবে। তাদের গড়ে তুলতে হবে নব চেতনায়। তাদের মাঝে সৃষ্টি করতে হবে মাতৃভাষার প্রতি ভালােবাসা, আগ্রহ ও আসক্তি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার শুদ্ধ চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। কথায় কথায় বাংলা ভাষার সাথে বিদেশি ভাষার মিশ্রণ পরিত্যাগ করতে হবে।

উপসংহার: 

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বাঙালির জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। এর ফলে আমাদের বীর সন্তানদের আত্মত্যাগ যেমন আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করেছে, তেমনি আমাদের জাতীয় জীবনে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও উন্নতি ত্বরান্বিত হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে। তাই বাংলার সন্তানরা একুশ শতকে মাথা উচু করে দাঁড়াতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। একুশের এ চেতনাকে ধারণ করে আমাদের যে কোনাে অসাধ্য সাধন করার দৃঢ় প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

শেষ কথা, 

আমাদের সর্বশেষ মতামত হচ্ছে আপনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট রচনাটি পড়লে আমি নিশ্চিত আপনি পরিক্ষায় ভালোভাবে আন্সার দিতে সক্ষম হবেন। কারন রচনাটি অনেক সহজ ভাবে উল্লেখ করেছি। আপনাদের পরিক্ষায় আসে এমন রচনা আমাদের ওএয়বসাইটে পেয়ে যাবেন। আর তাই দেরিনা করে আমাদের অন্যান্য রচনাগুলি পড়ুন। ধন্যবাদ।

FAQs: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

  1. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি কি?

    ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারিতে পূর্ববাংলার জনগণ বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল । বাঙালির সেই ঐতিহাসিক ভাষা শহীদ দিবস ২১-এ ফেব্রুয়ারি আজ সারাবিশ্বের ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। ১৪ই আগস্ট, ১৯৪৭-এর পাকিস্তান সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই বাঙালি জাতির চেতনায় বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের তরঙ্গ প্রবাহিত হয়েছিল।

  2. মাতৃভাষা রক্ষায় আমাদের করণীয় কি?

    এই ভাষার সম্মান রক্ষায় ভিনদেশী ভাষার সীমাতীত ব্যবহার পরিত্যাগ করা অত্যাবশ্যক। আমাদের শিশু ও আগামী প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দিতে হবে। তাদের গড়ে তুলতে হবে নব চেতনায়।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link