Contents
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনাবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আমাদের মতামত
১৯ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তার অসীম অবদানের জন্য অমরত্ব লাভ করেছেন। তাকে প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে সাধারণত গণ্য করা হয়। আমাদের আজকের এই পোষ্টে আপনাদের জন্য সাহিত্যের সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা উল্লেখ করা হলো। উল্লেখিত প্রবন্ধ রচনা অনুসারে যে যে রচনা আপনি লিখতে পারবেন, সেগুলি হলোঃ- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জাতীয়তাবাদ, বঙ্কিম মৃত্যু শতবর্ষ পূর্তি উৎসব, বঙ্কিমচন্দ্র বিবিধ প্রবন্ধ, বঙ্কিম-স্মরণের প্রাসঙ্গিকতা, ইত্যাদি।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা
সংকেত সমূহঃ ভূমিকা, জন্ম, শিক্ষা ও চাকরিজীবন, অসামান্য শিল্পসিদ্ধি, সমালােচনা সাহিত্য, সাহিত্যিক আদর্শ, উপসংহার।
ভুমিকা: সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভার অধিকারী। তার অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিভার স্পর্শে জাতি নবচেতনায় জাগ্রত হয়, স্বাজাত্যবােধে উদ্বুদ্ধ হয়, নতুন আদর্শে অনুগ্রাণিত হয়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সঙ্কুচিত গণ্ডী পেরিয়ে বৃহত্তর আঙিনায় পদার্পণ করে। তার প্রতিভার ছোঁয়ায় দীর্ঘকালের সুপ্তি কেটে গেল, গতানুগতিকতা ও পুচ্ছানুগ্রাহিতার অবসান ঘটল, ভাস্বর হয়ে ওঠে সাহিত্যের অঙ্গন। আর ভাড়ামি নয়, নির্মল শুভ্র সংযত ও বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরস আস্বাদন করে বাঙালীর রুচি বদল হল। সেই বিজয় বসন্ত গােলেব কাত্তলি কেচ্ছাকাহিনীর দিন ফুরােলাে, সাহিত্য জীবনমুখী হল, জাতির চাওয়া-পাওয়া, জাতির জীবনের সমস্যা সাহিত্যে প্রতিফলিত হল। সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটল। সাহিত্যে বৈচিত্র্য আসে। তার সৃষ্টি-ধন্য হয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। তিনিই জাতীয় মন্ত্রের উদগাতা সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র।
জন্ম – শিক্ষা ও চাকরিজীবন: ১৮৩৮ খ্রীস্টাব্দের ২৬শে জুন অধুনা উত্তর ২৪ পরগনার কাঠাল পাড়া গ্রামে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন খুব মেধাবী ছাত্র। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি প্রথম স্নাতক ১৯৫৮। সরকারী চাকরিতে যােগদান করে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নীত হন। ন্যায় বিচারক হিসাবে স্বাধীনচেতা বঙ্কিমের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ইংরেজ সরকার কর্তৃক তিনি রায় বাহাদুর ও সি. আই. ই. উপাধিতে ভূষিত হন।
আরও পড়ুনঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট | একুশ আমার অহংকার রচনা
অসামান্য শিল্পসিদ্ধি: ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য সাধনার সূত্রপাত। ললিতা ও মানস কাব্য কীর্তি তাঁর প্রথম সাহিত্যিক নিদর্শন। মধুসূদনের মতাে প্রথম বয়সে বঙ্কিমচন্দ্র ও ইংরেজীর মােহে বিভ্রান্ত হয়ে ইংরেজী ভাষায় Rajmohan’s wife উপন্যাস রচনা করেন। কিন্তু অচিরেই তাঁর মােহভঙ্গ ঘটে। অনাদৃত মাতৃভাষায় তিনি ফিরে এলেন। তার প্রতিভা স্পর্শে বাংলা সাহিত্যের শুকনাে খাতে যেন বান ডাকল। সৃষ্টি বৈচিত্রে বাংলা সাহিত্যের ডালি ভরে উঠল। বদ্ধিম সম্পাদিত মাসিক পত্র বঙ্গদর্শন বাঙালী পাঠকসমাজকে চমকিত করল। ‘বঙ্গদর্শনে’র পাতায় বঙ্কিমের প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী যে নতুন ধারার সূচনা করল। তা দেশবাসীকে বিস্ময় সচকিত করে তুলল। গুরুগম্ভীর ও প্রাণস্পর্শী কবিত্বময় ভাষা, বর্ণনার চাতুর্য, ঐতিহাসিক ঘটনা ও রােমান্সের আশ্চর্য বিন্যাসে ‘দুর্গেশনন্দিনী’ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। এক যুগান্তর নিয়ে এল, অপূর্ব সৃষ্টি হিসাবে অভিনন্দিত হল। এর পর এল এক অনিন্দ্যসুন্দর কাব্য উপন্যাস – কপালকুণ্ডলা’। তরঙ্গমুখর নির্জন সমুদ্রতীরে সন্ধ্যালােকে এলায়িত কুস্তলা উদাসী সুন্দরী কপালকুণ্ডলার যে বাণীমুর্তি একেছেন, রােমান্স হিসাবে তা ভারতীয় সাহিত্যে শুধু নয়, বিশ্ব সাহিত্যে বিরল। এর পর একে একে অ্রষ্টা বঙ্কিমের হাত থেকে রচিত হল, মৃণালিনী’, যুগােলাঙ্গুরীয়’, ‘চন্দ্রশেখর’, ‘রাজসিংহ’, ‘আনন্দমঠ’, ‘দেবীচৌধুরানী’, ‘সীতারাম’, বিষবৃক্ষ, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘রজনী’ ও ‘রাধারানী’—এই সব উপন্যাসে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী সম্পদ রূপে পরিগণিত হল। আনন্দমঠে উত্তরবঙ্গের সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে গৌরবান্বিত ভূমিকায় স্থাপন করে তিনি যে দেশাত্মবােধের বাণী উচ্চারণ করলেন, তাতে সমগ্র ভারতবাসী উজ্জীবিত হয়। এর অগ্নিগর্ভ স্বাদেশিকতা বিপ্লবীদের মনে উদ্দীপনার সঞ্চার করে। এই উপন্যাসে কথিত স্বদেশ প্রেমের বীজমন্ত্র ‘বন্দেমাতরম দ্বারা আসমুদ্র হিমাচল মন্দ্রিত হয়। এই সব উপন্যাসের কাহিনী বিন্যাস, চরিত্র চিত্রণ, বিষয় ভাবনা বাংলা সাহিত্যে শুধু নয়, ভারতীয় উপন্যাস সাহিত্যের আদর্শ হয়ে আছে।
আরও পড়ুনঃ ছোটদের কম্পিউটার রচনা খুবই সহজ
সমালোচনা সাহিত্য: কথা সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র সমালােচনা সাহিত্যে আত্মনিয়ােগ করেন। লােকরহস্য, “বিজ্ঞানরহস্য’, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’, ‘সাম্য”, ‘মুচিরামগ্ডড়ের জীবন চরিত’, ‘কৃষ্ণচরিত্র’ ‘ধর্মতত্ত্ব, অনুশীলন’, “বিবিধ প্রবন্ধ প্রভৃতি বিচিত্র স্বাদের প্রবন্ধ তার লেখনী থেকে বেরিয়ে আসে। “বিবিধ প্রবন্ধ, ‘কৃষ্ণচরিত্র’ ও ‘গীতা’ প্রভৃতি মননসমৃদ্ধ রচনা। শ্লেষ গর্ভ কমলাকান্তের দপ্তর বাংলা সাহিত্যের একটি স্বর্ণপীঠিকা। তার এই সব রচনা প্রজ্ঞায়-মননে-কথনে বাংলা সাহিত্যের সম্পদ হয়ে আছে। কৃষ্টি-সভ্যতা দর্শন-বিজ্ঞান ধর্মতত্ত্ব-অর্থনীতি-সমাজতত্ত্ব-প্রত্নতত্ত্ব-ভাষাতত্ত্ব-ইতিহাস-সঙ্গীত-শিল্প ও সাহিত্য প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় ভাবনা এই সব প্রবন্ধের উপজীব্য হয়েছে। তার প্রজ্ঞা ও মনন এই সব রচনায় আভাসিত। শুধু ঔপন্যাসিক হিসাবে নয় সমালােচক হিসাবেও বঙ্কিম অদ্বিতীয়। একই সঙ্গে উপন্যাস মৌলিক ও মনন দীপ্ত সমালােচনা সাহিত্য বঙ্কিমচন্দ্রের হাত থেকে বেরিয়ে আসে। তাই রবীন্দ্রনাথ তাকে সাহিত্যের সব্যসাচী আখ্যায় ভূষিত করেন।
সাহিত্যিক আদর্শ: সত্য ও ধর্মই হল বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য সাধনার লক্ষ্য। একদিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন অন্যদিকে সাহিত্যের অবাঞ্ছিত জঞ্জাল পরিষ্কার করেছেন। আমাদের জীবনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অসঙ্গতির প্রতি তিনি দৃষ্টিপাত করেছেন এবং তা অপসারণের পথ নির্দেশ করেছেন। মানুষের হিতসাধনের জন্যই তাঁর এই মসীধারণ, সারস্বত সাধনা। সেই সাধনায় তিনি সফলও বটে।তার সামনে কোন আদর্শ ছিল না, তাঁর অনন্যসাধারণ প্রতিভাবলে তিনি নতুন আদর্শ স্থাপন করেন। তিনি নতুন পথের দিশারী, নতুন যুগের উদগাতা। জাতির আশা আকাঙক্ষা তাঁর সৃষ্টিতে মূর্ত হয়েছে। জাতীয়তার তথা জাতীয় সাহিত্যের প্রথম অঙ্কুর বঙ্গদর্শনে আত্মপ্রকাশ করে। এই জাতীয় সাহিত্যের কর্ণধার বঙ্কিমচন্দ্র। জীবনে সত্য-শিব-সুন্দরের যে আদর্শ তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা বঙ্কিমচন্দ্রের মতাে লােকোত্তর প্রতিভার পক্ষেই সম্ভব। তার উদ্দেশ্যমূলক সাহিত্য আজ কালােত্তীর্ণ, শাশ্বত। তা কেবল তার সেই অনন্যসাধারণ প্রতিভার গুণেই সম্ভব হয়েছে। সাহিত্যে উদ্দেশ্যবাদের সফল শিল্পী হিসাবে বঙ্কিমচন্দ্র নিদর্শন হয়ে আছেন।
আরও পড়ুনঃ কোভিড ১৯ রচনা বাংলা | করোনা ভাইরাস রচনা
উপসংহার: ১৮৯৪ খ্রীস্টাব্দের ৮ই এপ্রিল সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের পরলোক গমন করেন। জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে বঙ্কিম প্রয়াণ শতবর্ষ পূর্তি হয়ে গেছে। আমরা সভা-সমিতি করে প্রতি বছর বঙ্কিম জয়ন্তী পালন করি। ঘটা করে এই উৎসব পালনের চেয়ে আমাদের আত্মসমীক্ষা ও আত্মবিশ্লেষণের প্রয়ােজন বেশী। সেই নবজাগরণের পথিক, স্বাজাত্যবােধের উদ্গাতা নতুন আদর্শের দিশারী বঙ্কিমের পথ আমরা কতটা হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছি, তা পর্যালােচনা করার সময় এসেছে। সময় এসেছে বঙ্কিম সাহিত্যের পুনর্মূল্যায়নের। বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠে’র গীত বন্দেমাতরম মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হাজার হাজার দেশপ্রেমিক দেশের জন্য প্রাণবলি দিয়েছেন, দেশপ্রেমে ব্রতী হয়েছেন। দেশমাতৃকা আজ পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত। রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেলেও আমাদের দৈন্যদশার অবসান ঘটেনি। ভীরুতা, কাপুরুষতা, কুসংস্কার আমাদের আচ্ছন্ন করে আছে। এই তমসাচ্ছন্ন, আদর্শহীন, পরানুকরণ ও ভ্ৰষ্টাচারে আকীর্ণ ধর্মান্ধতার যুগে ঋষি বঙ্কিমের বলিষ্ঠ আদর্শ তুলে ধরার প্রয়ােজন দেখা দিয়েছে। জাতের নামে বজ্জাতি, ধর্মের গোড়ামি স্বদেশ প্রেমের ভণ্ডামি এখন জাতিকে বিপথগামী করতে উদ্যত। এখনই বঙ্কিমচন্দ্রের কথা বেশী করে মনে পড়ে। বঙ্কিম-স্মরণ ও তার আদর্শ বরণের মধ্য দিয়ে জাতির পুনর্জাগরণ ঘটলেই তার মৃত্যু শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের প্রাসঙ্গিকতা ও সার্থকতা প্রতিপন্ন হবে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা
সাহিত্যের সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা শিখুন খুব সহজে
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আমাদের মতামত
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ১৯ শতকের একজন বিশিষ্ট এক বাঙালি ঔপন্যাসিক। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন তার বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে অপরিসীম অবদানের জন্য। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়।
অন্যান্য রচনা পড়ুন এখানে
আপনাদের আজকের এই রচনাটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের সোসাল গ্রুপগুলিতে আমন্ত্রন রইলো। আপনারা যোগ দিতে পারেন।
TAG: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা pdf,বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা।