বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ সমৃদ্ধি ও নতুন জীবনের প্রতীক। অতীতের ভুল ও ব্যর্থতার দুঃখ ভুলে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ। বাংলা নববর্ষ উদযাপন মূলত হিন্দু রাজা শশাঙ্কের সময় থেকেই শুরু হয়। সেই থেকে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত বাঙালীরাপহেলা বৈশাখ পালন করত। বাংলা নববর্ষ সেপ্টেম্বর মাসে উদযাপিত হয় এবং সারা দিন স্থায়ী হয়। তারিখটি চন্দ্র সৌর হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে বার্ষিক পরিবর্তিত হয়, তবে সাধারণত বিক্রমের 14 বা 15 তারিখে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) হয়।
“বাংলা নববর্ষ রচনা ২০ পয়েন্ট” শিক্ষার্থীদের বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করার জন্য একটি রচনা। এতে বাংলানববর্ষের ইতিহাস, কীভাবে এটি উদযাপন করা হয় এবং বাঙালিদের কাছে এর অর্থ কী তা সম্পর্কে তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আপনারা আমাদের লেখা বাংলা নববর্ষ রচনা টি পড়ুন। ভালো লাগলে কমেন্ট করুন বা শেয়ার করুন।
বাংলা নববর্ষ রচনা
সংকেত: সূচনা; বাংলা সনের ইতিহাস; পহেলা বৈশাখ; রাজধানীতে নববর্ষ উদযাপন; রাজধানীর বাইরে নববর্ষ উদযাপন; নববর্ষ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী; পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ; নববর্ষে বাঙালি; বৈশাখী মেলা; হালখাতা ও নানা আয়োজন; নববর্ষের প্রভাব; নববর্ষের তাৎপর্য; দিন বদলের পালায় নববর্ষ; উপসংহার।
সূচনাঃ
নববর্ষ পৃথিবীর প্রায় সকল জাতিসত্ত্বার ঐতিহ্যের একটি অনিবার্য অংশ। বাঙালির ঐতিহ্যকে যে সকল উৎসব–অনুষ্ঠান ধারণ করে আছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ। সুপ্রাচীনকাল থেকে বাঙালিরা বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটিকে নববর্ষ হিসেবে পালন করে আসছে। নববর্ষ বাঙালির সহস্র বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রীতি-নীতি, প্রথা, আচার অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্ববৃহৎ সার্বজনীন উৎসব।বাঙালিরা এদিনেপুরনো বছরের ব্যর্থতা, নৈরাশ্য, ক্লেদ-গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে মহানন্দে বরণ করে নেয়, সমৃদ্ধি ও সুখময় জীবন প্রাপ্তির প্রত্যাশায়।
তাই তো কবিকণ্ঠে প্রতিধ্বনিত
হয়-
নিশি অবসান,ওই পুরাতন
বর্ষ হলো গত
আমি
আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন
করিলাম নত
বন্ধু হও শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও
ক্ষমা করো আজিকার মতো
পুরাতন বছরের সাথে
পুরাতন অপরাধ যতো।
অনুচ্ছেদ পহেলা বৈশাখ
পহেলা বৈশাখকে নববর্ষ বলার কারণ
বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন বৈশাখ। কৃষিভিত্তিক আমাদের এই দেশের সব আনন্দ উৎসবের নিবিড় যােগ রয়েছে ফসলের সঙ্গে। আমাদের নববর্ষের সাথেও সম্পৃক্ত রয়েছে ফসল বােনার আনুষ্ঠানিকতা। চৈত্র মাসে ফসল বুনলে ফলনের দিক থেকে ভালাে হয় না এমন ধারণার বশবর্তী হয়ে বাংলার কৃষক সমাজ বৈশাখ মাসে ফসল বােনার সূচনা করে। তাছাড়া পহেলা বৈশাখে বাঙালিরা অতীতের সুখ-দুঃখ ভুলে নতুনের আহ্বানে সাড়া দেয়। নতুনকে গ্রহণ করার জন্য উদ্দীপ্ত হয়। তাই পহেলা বৈশাখকে নববর্ষ বলা হয়।
নববর্ষের সময়কাল
বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর মধ্যে দিয়ে দুটি করে বারােটি মাস আবর্তিত হয়। নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। নববর্ষ বলে বরণ করে নেওয়া হয় এ দিনটিকে। নতুন সব জিনিসেরই আলাদা একটা বৈচিত্র্য আছে। পুরনাে বছরের অবসানে নববর্ষ আসে তারুণ্যের প্রদীপ্ত প্রদীপ হাতে নিয়ে। আমাদের জীবনে ঐতিহ্যপূর্ণ এই দিনটি বছরের অন্য সব দিন থেকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে ধরা দেয়। বাঙালিরা নববর্ষকে বরণ করে অন্তরের গভীর অনুরাগ দিয়ে। পহেলা বৈশাখ আমাদের যাত্রা শুরু লগ্ন। আমাদের নববর্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে ফসল বােনার আনুষ্ঠানিকতা। চৈত্রের অবসানে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে নবজাগরণের ঢেউ জাগে। কালবৈশাখির প্রমত্ত নৃত্যের তালে তালে আসে গ্রামীণ জীবনে ফসলের আশ্বাস- ফসল বােনা ও ফসল কাটার প্রাণচাঞ্চল্য। প্রকৃতিকেও নববর্ষে নতুন রূপ ধারণ করতে দেখা যায়। চৈত্রের পাতা ঝরা বিবর্ণ গাছগাছালি সব পত্র-পুষ্প-. ফলে অপরূপ হয়ে ওঠে। পৃথিবী যে তার নিজের নিয়মে চলছে নববর্ষের আগমনে সবার মনে এই চির পুরনাে কথাটি নতুন করে জাগ্রত হয়। পহেলা বৈশাখে বিগত বছরের বহু সুখ-দুঃখের স্মৃতি মনকে বিষাদময় করে তােলে বটে; কিন্তু তার সঙ্গে ভাবী বছরের সম্ভাবনা আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে।
বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপনের বৈশিষ্ট্য
পহেলা বৈশাখ বাংলার জনসমষ্টি অতীতের সুখ-দুঃখ ভুলে গিয়ে নতুনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ওঠে। জানে এ নতুন অনিশ্চিতের সুনিশ্চিত সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। তাই মন সাড়া দেয়, চঞ্চল হয়। নতুনকে গ্রহণ করার প্রস্তুতি নেয়। আর সে দিন প্রাত্যহিক কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে ঘরবাড়ি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে। আটপৌরে জামা কাপড় ছেড়ে ধােপদুরস্ত পােশাক-পরিচ্ছদ পরে, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে পানাহারে মেতে ওঠে। রমনার বটের তলায় জড়াে হয়ে গান গায়, হাততালি দেয়। সবকিছু মিলে দেশটা যেন হয়ে ওঠে উৎসবে আনন্দে পরিপূর্ণ। এছাড়াও এদেশের স্থানীয় কতকগুলাে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষের বৈশিষ্ট্যসমূহ ফুটে ওঠে। যেমন : মেঘের কাছে জল ভিক্ষা করা’, ‘বার্ষিক মেলা’, ‘পুণ্যাহ’, ‘হালখাতা‘ ইত্যাদি।
নববর্ষ উদযাপনে গ্রামীণ জীবন ও নগরজীবন
নববর্ষের উৎসব গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত, ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। নববর্ষে পল্লি অঞ্চলের কোথাও কোথাও বেশ বর্ণাঢ্য মেলা বসে। মেলার বিচিত্র আনন্দ-অনুষ্ঠানে, কেনা-বেচার বাণিজ্যিক লেনদেনে, মিলনের অমলিন খুশিতে, অবারিত আন্তর প্রীতির স্পর্শে নববর্ষের বিশেষ দিনটি মুখর হয়ে ওঠে। এই পুণ্য দিনেই শুরু হয় ব্যবসায়ীদের হালখাতার শুভ মহরত। প্রায় প্রতি বিক্রয়প্রতিষ্ঠানেই ক্রেতাদের মিষ্টান্ন সহযােগে আপ্যায়ন করা হয়। সর্বত্রই এক মধুর প্রীতিপূর্ণ পরিবেশ। এ ছাড়া দরিদ্র ভােজনে, নৃত্য-গীতে, সভা-সমিতিতে, আনন্দে-উৎসবে বছরের প্রথম দিনটি মহিমােজ্জ্বল হয়ে ওঠে। গৃহস্থরাও নানাবিধ অনুষ্ঠানব্রতে পুণ্য দিনটিকে স্মরণীয় করায় মেতে ওঠে। পল্লির কোথাও কোথাও রচিত হয় নববর্ষ উদযাপনের উৎসব-মঞ্চ। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বৈশাখী মেলা
নববর্ষকে উৎসবমুখর করে তােলে বৈশাখী মেলা। এটি মূলত সার্বজনীন লােকজ মেলা। এ মেলা অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য, লােকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সকলপ্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী এই মেলায় পাওয়া যায়। এছাড়া শিশু-কিশােরদের খেলনা, মহিলাদের সাজ-সজ্জার সামগ্রী এবং বিভিন্ন লােকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন : চিড়া, মুড়ি, খই, বাতাসা ইত্যাদি, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় সমারােহ থাকে। মেলায় বিনােদনেরও ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লােকগায়ক ও লােকনর্তকদের। উপস্থিতি থাকে। তারা যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গাজীর গানসহ বিভিন্ন ধরনের লােকসঙ্গীত, বাউল-মারফতি-মুর্শিদি-ভাটিয়ালি ইত্যাদি বিভিন্ন আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন। লাইলী-মজনু, ইউসুফ-জোলেখা, রাধা-কৃষ্ণ প্রভৃতি আখ্যানও উপস্থাপিত হয়। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি মেলার বিশেষ আর্কষণ। এছাড়া শিশু-কিশােরদের আকর্ষণের জন্য থাকে বায়ােস্কোপ। শহরাঞ্চলে নগর সংস্কৃতির আমেজে এখনও বৈশাখি মেলা বসে এবং এই মেলা বাঙালিদের কাছে এক অনাবিল মিলন মেলায় পরিণত হয়। বৈশাখি মেলা বাঙালির আন্দঘন লােকায়ত সংস্কৃতির ধারক।
ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষ কিছু আনন্দ এবং স্মৃতিকে আপন করে নেয়। আর এ আপন করে নেওয়ার বিভিন্ন স্তর এবং সময়ের পথ ধরে সংস্কৃতির বিকাশ। প্রতিটি জাতি ও সভ্যতা সংস্কৃতির মাধ্যমে খুঁজে পায় তার নিজস্ব অনুভূতি এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশী ও বাঙালী জাতি হিসেবে, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আমাদের এমন একটি উঠসব হল পহেলা বৈশাখ। কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন বাংলা বর্ষপঞ্জি এসেছে ৭ম শতকের হিন্দু রাজা শশাঙ্কের কাছ থেকে। আকবরের সময়ের অনেক শতক আগে নির্মিত দুটি শিব মন্দিরে বঙ্গাব্দ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। আর এটাই নির্দেশ করে, আকবরের সময়ের আরও অনেক আগেও বাংলা বর্ষপঞ্জির অস্তিত্ব ছিল। বৈদিক আচার অনুষ্ঠানের জন্য কোন সময়ে কি কাজ হবে এধরনের ধারণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বৈদিক যুগের জ্যোতিঃশাস্ত্রে পারদর্শীগণ তখন মহাকাশের বিভিন্ন জ্যোতিষ্কের চলাফেরা দেখে সময় সম্পর্কিত হিসাব নিকাশ ও এই সব আচার অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করার কাজ করতেন। জ্যোতিঃশাস্ত্র বিষয়ক পাঠ ছিল ছয়টি প্রাচীন বেদাঙ্গ বা বেদ সংক্রান্ত ছয়টি প্রাচীন বিজ্ঞানের একটি- যেগুলো হিন্দুধর্মগ্রন্থের অংশ। বৈদিক আচার অনুষ্ঠানের জন্য প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি একটি উন্নত ও পরিশীলিত সময় নির্ণয় কৌশল এবং বর্ষপঞ্জি প্রস্তুত করে। হিন্দু বিক্রমী বর্ষপঞ্জির নামকরণ করা হয় বিক্রমাদিত্যের নাম অনুসারে, এটা শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭ অব্দ থেকে। ভারত ও নেপালের অনেক স্থানের মত গ্রামীণ বাঙ্গালী সম্প্রদায়ে বাংলা বর্ষপঞ্জির কৃতজ্ঞতা বিক্রমাদিত্যকে দেয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য অঞ্চলে খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭ অব্দে সেই বর্ষপঞ্জির সূচনা হলেও বাংলা বর্ষপঞ্জি শুরু হয়েছিল ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথম বাঙালি নৃপতি ছিলেন শশাঙ্ক। ৫৯৩ সালের( ৩ মাসের একটু বেশি) রাজা শশাঙ্ক গৌড়ের নৃপতি লাভ করেন। আর আমাদের বাংলা সন সেই সময় থেকে গণনা হয়ে আসছে। অর্থাৎ রাজা শশাঙ্কই বাংলা সন এর প্রবর্তক। (আরও পড়ুন)
শশাঙ্কের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের শাসনামলে সর্বপ্রথম পহেলা বৈশাখে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে আইয়ুবের শাসনকালে নববর্ষ পালনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ১৯৬৪ সালে বাঙালির তীব্র আন্দোলনের মুখে নববর্ষের এ দিনে পুনরায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। সর্বোপরি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক নিপীড়ন ও শোষণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সাল থেকে রমনার বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণ উৎসবের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ জাতীয় উৎসবের দিনে রূপ নেয়।
রাজধানীতে নববর্ষ উদযাপনঃ
নববর্ষের উৎসবের সাথে যদিও আবহমান গ্রাম-বাংলার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তবে বর্তমানে গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে বর্ষবরণ উৎসবের আবেদন শহরগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর “এসো হে বৈশাখ, এসো,এসো” গানের মাধ্যমে রাজধানীর বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়। উৎসবের মূল আয়োজক ছায়ানট পহেলা বৈশাখ ভোরে এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। রাজধানীর বর্ষবরণ উৎসবের অন্যতম অনিবার্য অংশ ‘মঙ্গলশোভাযাত্রা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখ সকালে এ শোভাযাত্রাটি চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এ শোভাযাত্রায় চারুকলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম চারুকলা ইনস্টিটিউট আয়োজিত আনন্দ শোভযাত্রাই পরবর্তীতে ১৯৯৫ সাল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হয় বাঙালি সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী শিল্পকর্ম, রঙ- বেরঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিলিপি বহনের মধ্য দিয়ে।
রাজধানীর বাইরে নববর্ষ উদযাপনঃ
গ্রামীণজীবন ও নববর্ষ পরস্পর সম্পর্কিত। নববর্ষে গ্রামীণ জনপদ ও গ্রামের লোকজনের মধ্যে নতুন খাবার ও পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। সাধ্যমতো নতুন জামা-কাপড় পরে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই একে অপরের সাথে মিলিত হয় অনাবিল আনন্দে।ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও নতুন গতি যুক্ত হয়। ঢাকার বাইরের অন্যান্য শহরগুলোতে মহাধুমধামে স্থানীয় লোকজন নববর্ষ পালন করে থাকে। এতে বিভিন্ন ধরণের মেলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
নগরজীবনে নববর্ষ উদযাপন
বর্তমানে নগরজীবনে নগর-সংস্কৃতির আদলে অত্যন্ত জাঁকজমজপূর্ণভাবে নববর্ষ উদযাপিত হয়। পয়লা বৈশাখের প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানাের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষের উৎসব। এ সময় নতুন সূর্যকে প্রত্যক্ষ করতে উদ্যানের কোনাে বৃহৎ বৃক্ষমূলে বা লেকের ধারে অতি প্রত্যুষে নগরবাসীরা সমবেত হয়। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করে। এদিন সাধারণত সকল শ্রেণীর এবং সকল বয়সের মানুষ ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পােশাক পরিধান করে।
নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তরুণীরা লালপেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, খােপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপ পরে। আর ছেলেরা পরে পাজামা ও পাঞ্জাবি। কেউ কেউ ধুতি-পাঞ্জাবিও পরে। এদিন সকালবেলা পানতা ভাত খাওয়া একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। সঙ্গে থাকে ইলিশ মাছ ভাজা। এভাবে লোকজ বর্ষবরণ প্রথাগুলাের কোনাে কোনােটির অনুসরণের মাধ্যমে গ্রামীণ ঐতিহ্য অনেকটা সংরক্ষিত হচ্ছে।
বর্ষবরণের চমকপ্রদ ও জমজমাট আয়ােজন ঘটে রাজধানী ঢাকায়। এখানে বৈশাখি উৎসবের অনুষ্ঠানমালা এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। নববর্ষের প্রথম প্রভাতে রমনা উদ্যান ও এর চারপাশের এলাকায় উজ্জ্বল। জনস্রোতে সৃষ্টি হয় জাতীয় বন্ধন। ছায়ানটের উদ্যোগে জনাকীর্ণ রমনার বটমূলে রবীন্দ্রনাথের আগমনী গান ‘এসাে হে বৈশাখ এসাে, এসাে’-এর মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলার প্রভাতি অনুষ্ঠানেও নববর্ষকে স্বাগত জানানাে হয়। এখানকার চারুশিল্পীদের বর্ণাঢ্য শােভাযাত্রা নববর্ষের আহ্বানকে করে তােলে নয়ন-মনােহর। এ শােভাযাত্রা উপভােগ করে সকল শ্রেণীর আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। এদিন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, টি. এস. সি. এবং চারুকলাসহ সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত হয় এক বিশাল জনসমুদ্রে।
জাতীয় কর্মসূচি ও নববর্ষ পালন
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, জাতীয় জাদুঘর, ছায়ানট, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, নজরুল একাডেমী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলাে বিভিন্ন জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করে।
নববর্ষ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীঃ
বাঙালিদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরাও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকে।তিন পার্বত্যজেলায় (বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি) অঞ্চলের নববর্ষ উদযাপন অনেকটা বৈসাবী কেন্দ্রিক। চাকমারা নববর্ষ উৎসবকে‘বিজু’, মারমারা ‘সাংগ্রাই’ এবং ত্রিপুরারা বৈসুক বলে থাকে। এই তিনটি উৎসবের সম্মিলিত নামই বৈসাবী।ক্ষুদ্র–নৃগোষ্ঠীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী এই ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব সকলে মিলে আনন্দঘন পরিবেশে পালন করে থাকে।
নববর্ষে বাঙালিঃ
নববর্ষ উদযাপনে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করে। এদিন বাঙালি মেয়েরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ী এবং পুরুষেরা পাজামা-পাঞ্জাবি পরিধান করে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে থাকে বিশেষ খাবার বিশেষত পান্তা-ইলিশ, নানা রকম পিঠাপুলির ব্যবস্থা। সর্বোপরি সকল স্তরের বাঙালি নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে উদযাপন করে। ‘’ঈশানের পুঞ্জমেঘ অন্ধবেগে ধেয়ে চলে আসে বাধাবন্ধহারা গ্রামান্তরে বেণুকুঞ্জে নীলাঞ্জনছায়া সঞ্চারিয়া হানি দীর্ঘধারা। বর্ষ হয়ে আসে শেষ, দিন হয়ে এল সমাপন, চৈত্র অবসান… গাহিতে চাহিছে হিয়া পুরাতন ক্লান্ত বরষের সর্বশেষ গান।‘’-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বাংলা নববর্ষ
বৈশাখী মেলাঃ
বাংলা নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ বৈশাখী মেলা। শহরের তুলনায় গ্রামে এ মেলা অধিকতর জাকজমকপূর্ণ হয়ে থাকে। এ মেলার সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি কোনো ধর্মীয় ঐতিহ্য নির্ভর নয় বরং এটি বাঙালির সর্ববৃহৎ সার্বজনীনউৎসব। প্রাচীন বাংলার নানা সংস্কৃতি যেমন- যাত্রা, পুতুল নাচ, সার্কাস, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা ইত্যাদি মেলার প্রধান আকর্ষণ। বৈশাখী মেলাতে নানা রকম কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, মাটির হাঁড়ি, বাসন-কোসন, পুতুল, বেত ও বাঁশের তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, তালপাখা প্রভৃতি পাওয়া যায়। এটি মূলত গ্রামীণ জীবনের অনন্য প্রতিফলন।
হালখাতা ও নানা আয়োজনঃ
হালখাতা মূলত ব্যবসায়ীদের পুরনো বছরের হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলার উৎসব।সম্প্রাট শশাঙ্কের সময় থেকেই এটি প্রচলিত হয়ে আসছে।তৎকালীন সময়ে চৈত্র মাসের শেষদিনের মধ্যে খাজনা পরিশোধ করতে হত এবং পহেলা বৈশাখে ভূমি মালিকেরা নিজ নিজ অঞ্চলের প্রজাদের মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করত। এটিকেই হালখাতা বলা হয়। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের দিনে পুরনো হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলে। পুরান ঢাকায় বেশ জাকজকমপূর্ণভাবে “হালখাতা” উৎসব পালিত হয়। এছাড়াও গ্রামে-গ্রামে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য– নৌকাবাইচ, লাঠিখেলা, কুস্তি,গম্ভীরা, লোকগীতি ও লোকনৃত্যের আঞ্চলিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে কুস্তি বা বলিখেলার সবচেয়ে বড় আয়োজনটি হয় মূলত চট্টগ্রামে।
নববর্ষের প্রভাবঃ
বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের ভিত মজবুত করতে প্রতিবছরই ফিরে আসে পহেলা বৈশাখ। সারা বছরের ক্লেষ-গ্লানি, হতাশা ভুলে এ দিন মানুষ উৎসবেমেতেওঠে।বিশেষত, নগরজীবনে এর প্রভাব অনেক বেশি । কেননা, নাগরিক জীবনের চাপে নগরবাসী মানুষ সারাবছর বাঙালি ভাবধারা বলতে গেলে প্রায় ভুলেই থাকে। বাংলা নববর্ষে এসে নগরবাসীর মনে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া দিয়ে যায়। নববর্ষের প্রেরণায় বাঙালি নতুন করে উজ্জ্বীবিত হয়ে ওঠে। নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রথা, আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।
নববর্ষের তাৎপর্যঃ
নববর্ষ আমাদের জাতীয় উৎসব। আমাদের জাতীয় চেতনা তথা একান্ত বাঙালি সত্ত্বার সঙ্গে পহেলা বৈশাখ অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেয়। এদিন আমরা কোনো বিশেষ ধর্ম-বর্ণ নয় বরং একটিমাত্র অখন্ড বাঙালি সত্তা এই বোধে উত্তীর্ণ হতে পারি। এ দিনটিকে সামনে রেখে শিশুরা জানতে পারে বাঙালির ইতিহাস। নববর্ষ আমাদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। সর্বোপরি নববর্ষের প্রেরণায় আমাদের মধ্যকার সুপ্ত মানবিক মূল্যবোধ নতুনভাবে জাগ্রত হয়, মানুষে মানুষে গড়ে ওঠে সম্প্রীতি।
পহেলা বৈশাখ অনুচ্ছেদ
দিন বদলের পালায় নববর্ষ
আজ উৎসবের অঙ্গে যুগ-পরিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট। উৎসবে যেখানে একদা হৃদয়-আবেগের প্রাধান্য ছিল, ছিল প্রীতিময় আন্তরিকতা, আজ কৃত্রিমতা তাকে গ্রাস করেছে। সেখানে হৃদয়হীন আচার-অনুষ্ঠানের মাতামাতি। চোখ-ঝলসানাে চাকচক্য আজ উৎসবের বৈশিষ্ট্য। নাগরিক সভ্যতার যান্ত্রিকতা আজ আমাদের হৃদয়-ঐশ্বর্য লুণ্ঠন করেছে। নির্বাসিত করেছে শুষ্ক, নিষ্প্রাণ জড়জগতে। উৎসবে তাই আজ আমাদের হৃদয়-দৈন্যের নগ্নতা। উৎসবের মহতী কল্যাণী রূপটি তাই আজ আমাদের কাছে অনুদ্ভাসিত।
নববর্ষের উৎসব-অনুষ্ঠানেও আজ আন্তরিক প্রীতির অনেক অভাব। মাইকে চটুল গানের বাড়াবাড়ি। সেখানেও উল্লাস মত্ততার চিত্র। সেখানে আমাদের হৃদয়-সংকুচিত, আমাদের দ্বার রুদ্ধ। বর্ষবরণ উৎসবেও দীপালােকের উজ্জ্বলতা, খাদ্য-প্রাচুর্য, আয়ােজন-বৈচিত্র্য। সেখানে আমাদের শুষ্কতা, আমাদের দীনতা, আমাদের নির্লজ্জ কৃপণতারই প্রকাশ। তাই আজ এই সর্ব-বন্দনার পুণ্য-মুহূর্তে আমাদের মনে রাখতে হবে, সমারােহ সহকারে আমােদ প্রমােদ করায় আমাদের উৎসব কলা কিছুমাত্র চরিতার্থ হয় না। তাহার মধ্যে সর্বদলের আন্তরিক প্রসন্নতা ও ইচ্ছাটুকু না থাকিলেই নয়। নববর্ষে যেন ফিরে পাই আমাদের সেই হৃত-গৌরব। আবার যেন আমাদের হৃদয় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে আন্তরিক প্রসন্নতা ও কল্যাণী ইচ্ছার ভাবরসে। আবার যেন আমরা বর্ষারম্ভের উৎসবে খুঁজে পাই মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করার মহত্ত্ব। আজ নববর্ষ উৎসব ‘সত্যের গৌরবে, প্রেমের গৌরবে, মঙ্গলের গৌরবে, নির্ভীক মহত্বের গৌরবে’ উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক।
উপসংহারঃ
নববর্ষ আমাদের জীবনে কেবল মাত্র একটি উৎসবনয়বরংএটিএকটিচেতনারপ্রতিরূপক। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিয়ে নববর্ষ আমাদেরকে উজ্জীবিত করে একান্তই মানবতাবোধে। এ দিনটি আমাদের দরিদ্র, নিপীড়িত, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রেরণা যোগায়। নববর্ষ একদিকে যেমন নির্মল আনন্দের খোরাক, অন্যদিকে তেমনি একটি চেতনার ধারক। আর তাই কোনো সাংস্কৃতিক সন্ত্রাস যেন আমাদের ঐতিহ্যকে গ্রাস করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রত্যেক বাঙালিকেই সচেতন হয়ে উঠতে হবে।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিই হলো পয়লা বৈশাখ। পুরো একটি বছরের দুঃখ বেদনা, ক্লান্তি নৈরাশ্য পেছনে ফেলে দিয়ে বছরের নতুন এ দিনটি যখন আমাদের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়, তখন আমরা আনন্দে মেতে উঠি, উৎসবে মুখর হই। এদিনে গ্রামে গ্রামে মেলা বসে। লাঠি খেলা, গরুর লড়াই, বলী খেলা কত-না আনন্দের প্লাবন নিয়ে আসে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস:
পৃথিবীর প্রায় সব জাতিই তাদের নিজ নিজ বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নেয়। প্রাচীনকাল থেকে এরূপ বর্ষবরণের প্রথা চলে আসছে। পৃথিবীর এক এক জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে এ নববর্ষ বা বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নেওয়ার ইতিহাস জড়িয়ে আছে। প্রাচীন সভ্যতার অধিকারী মিসরীয়, ফিনিশীয় ও ইরানিরা যেমন বহুকাল আগে থেকে তাদের নববর্ষ পালন করে আসছে তেমনি তাদেরও আগে গ্রিক ও রোমকরা যীশুখ্রিস্টের জন্মের পঞ্চম শতাব্দী আগে থেকে এরূপ উৎসব পালন করতো বলে জানা যায়। প্রাচীন আরবীয়রা ‘ওকাজ’ মেলা, ইরানীয়রা ‘নওরোজ’ উৎসব ও প্রাচীন ভারতীয়রা ‘দোল’ পূর্ণিমার দিনে নববর্ষ উদযাপন করতো।
নববর্ষ পালনের তাৎপর্য:
পৃথিবীর নানা দেশের নানা জাতির মধ্যে নববর্ষ উদযাপনের সময়ের বিভিন্নতা ও রকমফের যতই থাকুক না কেন এ বিশেষ দিনটি যে আনন্দের সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। পুরাতনকে ধুয়ে মুছে মানুষ যে চিরকাল নতুনের স্বপ্ন রচনা করে চলছে এ তাৎপর্যটি নববর্ষ উদ্যাপনের মধ্যে লুকিয়ে আছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাই নববর্ষের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন-
এসো হে বৈশাখ এসো, এসো,
নববর্ষ উদযাপনের রীতি:
বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন হয় ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট আকবরের সময়। তখন বাংলাদেশ ছিল মোগল সম্রাটের করদ (খাজনা দাতা) রাজ্য। খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বছরের এ ত মৌসুমের প্রথম দিনটিতে অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের দিনে জমিদাররা খাজনা আদায় করতো। জমিদারদের সভাঘরে বসত ‘পুণ্যাহ’।
হালখাতা:
ব্যবসায় বাণিজ্যের এক বছরের লেনদেনের লাভ ক্ষতির হিসাব মিটিয়ে বছরের নতুন দিনে হালখাতা খোলার রীতি এখন নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
বৈশাখী মেলা:
পয়লা বৈশাখের দিনটিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোর থেকেই মেলা বসে। এ মেলায় মাটির, কাঠের, লোহার নানাবিধ আকর্ষণীয় খেলনা, সরঞ্জাম, তৈজসপত্র বিক্রয়ের জন্য আনা হয়। মুড়ি মুড়কি, খইয়ের তৈরি নানা রকমের খাদ্যদ্রব্য, ফল ফলাদি বৈশাখী মেলাকে করে তোলে বৈচিত্র্যময়। গত কয়েক বছর থেকে আমাদের দেশে বৈশাখী লোক উৎসবও উদ্যাপন করা হচ্ছে।
বইমেলা:
রাজধানী শহর ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখের মেলায় বইমেলা বসে। এ বইমেলা পয়লা বৈশাখের একটি প্রধান আকর্ষণ।
আঞ্চলিক উৎসব:
অঞ্চলভেদে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। যেমন- চট্টগ্রাম শহরে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত ‘বলী খেলা’ (কুন্তি প্রতিযোগিতা)। আবদুল জব্বারের ‘বলী খেলা’ নামে খ্যাত এ খেলা অত্যন্ত প্রসিদ্ধ।
উপসংহার:
বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ উদযাপন এদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্য। নতুনকে গ্রহণ করার, পুরাতনকে মুছে ফেলার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষাও আমরা গ্রহণ করে থাকি নববর্ধ উদযাপনের মাধ্যমে।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা আজ আমরা বাংলা নববর্ষের রচনা সম্পর্কে জানলাম। আমাদের প্রায় প্রতিটা পরিক্ষাতেই এই বাংলা নববর্ষ রচনা এসে থাকে, তাই আমাদের বাংলা নববর্ষ রচনা শিখতে হয় ভালোমত। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আমরা এই ব্লগপোষ্টে বাংলা নববর্ষ রচনা লিখেছি সহজ ভাষায়। আজকের বাংলা নববর্ষ রচনা ২০ পয়েন্ট যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে ফেসবুকে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এরকম নতুন নতুন লেখা পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
TAG:বাংলা নববর্ষ রচনা সহজ,বাংলা নববর্ষ রচনা 15 পয়েন্ট,বাংলা নববর্ষ রচনা class 8,বাংলা নববর্ষ রচনা class 6,বাংলা নববর্ষ রচনার কবিতা,বাংলা নববর্ষ রচনা class 10,বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ রচনা,বাংলা নববর্ষ রচনা পয়েন্ট,বাংলা নববর্ষ রচনা 15 পয়েন্ট,বাংলা নববর্ষ রচনার কবিতা,বাংলা নববর্ষ রচনা hscবাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদ,বাংলা নববর্ষ ১৪২৯,বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা,বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ১৪২৯,পহেলা বৈশাখ অনুচ্ছেদ,পহেলা বৈশাখ রচনা,bangla noboborsho,bangla noboborsho onucched in bangla,bangla noboborsho 1426,bangla noboborsho 2022,পহেলা বৈশাখ অনুচ্ছেদ।