ভাবসম্প্রসারণ: পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর | সকল শ্রেনীর জন্য

পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর
কেমন আছেন পাঠকেরা, এই গরমে আশাকরি ভালো আছেন। জাইহোক লেখাপড়াতো আর থেমে থাকে না। সেজন্য আমরা আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর ভাবসম্প্রসারন। কারন এই ভাবসম্প্রসারনটি প্রায় প্রত্যাক পরিক্ষাতেই আসে। সেজন্য আজ আমরা পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর ভাবসম্প্রসারন লিখেছি। চলুন নিচ থেকে ভাবসম্প্রসারনগুলি পড়ে নেই। আমাদের Facebook Page এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। 

 পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর ভাবসম্প্রসারন 

মূলভাবঃ 

জন্মগ্রহণের সময় কেউ পাপী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না, বরং জন্মপরবর্তী সময়ে পারিপার্শ্বিক কারণে পাপ কার্যে লিপ্ত হয়। 

সম্প্রসারিত ভাবঃ 

পৃথিবীতে মানুষের জীবন চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়, বরং বাধাবিঘ্নতে পূর্ণ। প্রতি পদে পদেই মানুষকে কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। সংসার-সাগরে দুঃখ, বিপদ, লাঞ্ছনা, অপমান সবই আছে। আছে নৈরাশ্য, হতাশা, পরাজয়ের গ্লানি। তারপরও মানুষ জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। এতে কেউবা জয়ী হয়ে অতিবাতি করে, কেউবা পরাজিত হয়ে পাপ-পঙ্কিলতায় ডুবে যায়। 
 
তবে মানুষই সৃষ্টির সেরা জীব। প্রতিটি মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও ন্যায়-অন্যায় বিচারবােধ আছে। তাই সবাই চায় ভালাে কাজ করতে, মান-সম্মান সহকারে বেঁচে থাকতে। কিন্তু রিপুর তাড়নায় অনেকে ভুল পথে পরিচালিত হয় এবং পাপ করে। এ অবস্থায় তাকে পাপী হিসেবে শনাক্ত করে ঘৃণা করা মােটেই উচিত নয়। কেননা পাপীও মানুষ। পাপীর পাপের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, পাপী ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করে নি। তার পাপের জন্য সে পুরােপুরি দায়ী নয়। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতা দায়ী। সামাজিক বৈষম্য, প্রতিকূল পরিবেশ, মানসিক অস্থিরতা সর্বোপরি দারিদ্র্যের কষাঘাতে বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সে পাপ করেছে। কিন্তু যখনই তার হিতাহিত জ্ঞান ফিরে আসে এবং বিবেকের পুনর্জাগরণ ঘটে তখনই সে তার পাপকার্যের জন্য অনুতপ্ত হয়। অনুশােচনায় দগ্ধ হয়ে খাটি মানুষে পরিণত হয়। 
 
কিন্তু যদি তাকে ঘৃণা করা হয় তাহলে তার পক্ষে স্বাভাবিক জীবনে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ে। ফলে সে পাপ-পঙ্কিলতায় ডুবে যেতে বাধ্য হয়। আর পাপী পাপ-পঙ্কিলতায় ডুবে গেলে পাপী শুধু নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সমাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেননা সমাজের প্রতিটি মানুষের ভালাে-মন্দের কাজের প্রভাব সমাজে পড়ে। আর এজন্যই বলা হয়ে থাকে, “পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর।”

মন্তব্যঃ

পাপকে ঘৃণা করেই পাপ নির্মূল সম্ভব। পাপীকে ঘৃণা করে পাপকে নির্মূল করা সম্ভব নয়।

ভাবসম্প্রসারণ পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর

  ভাবসম্প্রসারণ পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর  

 

আরও পড়ুনঃ  পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ | পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ সহজ

মূলভাব: 

কোনাে মানুষই পাপী হয়ে জন্মায় না। প্রতিকূল পরিবেশে পাপ মানুষকে কলুষিত ও কলঙ্কিত করে তােলে। সুতরাং, পাপী বলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না, কেননা সে স্বেচ্ছায় পাপী হয়নি। তাই পাপীকে নয়, তার পাপী হয়ে ওঠার কারণ তথা পাপকে ঘৃণা করা উচিত।

ভাবসম্প্রসারণ: 

প্রতিটি মানুষই সুখী, নির্বিঘ্ন জীবন অতিবাহিত করতে চায়, কিন্তু সবসময় সৎ জীবনযাপন করা সবার পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে । নিয়তির খেলায় জীবনধারণের জন্যে অনেক মানুষকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও অসৎ পন্থা বেছে নিতে হয়। সে জড়িয়ে পড়ে অন্যায় কাজে, অসৎ কাজে। আবার দেখা যায়, যে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে সেও নানা কারণবশত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। জড়িয়ে পড়ে পাশবিক ও অমানবিক কাজে। তখন সে চিহ্নিত হয় পাপী হিসেবে। অথচ এরা কেউ জন্মগতভাবে পাপী ছিল না। কখনাে নােংরা পরিবেশ, প্রতিকূল সমাজের বিষাক্ত আবহাওয়া, দুর্জনের সাহচর্য অথবা অভিভাবকের তত্ত্বাবধানের জুটি মানুষকে অসৎ পথে ঠেলে দেয়।
আবার অনেক সময় ভালাে মানুষও রাগে, ক্ষোভে, দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে পাপ নামক জঘন্য কাজে জড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের মানুষরা পরে অনুশােচনার আগুনে দগ্ধ হয়। এদেরকে পাপী ভেবে, পাপের কারণ অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। শুধু পাপী ভেবে শাস্তি দিলে পাপের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। এমনকি ফলাফল ভয়ংকরও হতে পারে। আবার পাপীকে তার পাপ কর্মের জন্যে ঘৃণা না করলে অনেক সময় পাপের মাত্রা সমাজে আরও বেড়ে যেতে থাকে। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে সমাজ ও দেশের কথা ভেবে, সর্বোপরি সূক্ষ্মভাবে বিচারবিশ্লেষণ করে পাপীর পাপ কাজের বিচার করা উচিত। অনেক পাপী তার পাপ কাজের জন্যে অনুশােচনায় দগ্ধীভূত হয়, আবার অনেকের মধ্যে লেশমাত্র অনুতপ্ত ভাব দেখা যায় না।
পাপী এবং পাপের মূল্যায়ন আমাদের সঠিকভাবে করা উচিত। পাপীকে ঘৃণা না করে তার প্রতি যদি সহানুভূতি দেখানাে হয় এবং ভুল সংশােধনের সুযােগ দেওয়া হয় এবং সমাজ থেকে অপরাধের উৎস নির্মূল করা যায় তাহলে সমাজে অপরাধীদের সংখ্যা কমে আসবে।
পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা করো ভাব সম্প্রসারণ
পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা করো ভাব সম্প্রসারণ

  পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা করো ভাব সম্প্রসারণ  

 

আরও পড়ুনঃ  পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন ভাব সম্প্রসারণ

মূলভাব: 

আশরাফুল মাখলুকাত’ মানুষ কখনও ঘৃণাহ হতে পারে না, বরং তার দুষ্ট কর্মকেই আমাদের ঘৃণা করা উচিত।

সম্প্রসারিত ভাব: 

মানুষ নিস্পাপ পৃথিবীতে আসে। ধীরে ধীরে সে বড় হয়। তার চাহিদার বিস্তৃতি ঘটে। কিন্তু অনেক সময়ই তার চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়। না চাইতেই যে পায় সে হয়তাে এ সংঘাতকে এড়াতে পারে। কিন্তু যেশিশু জন্মের পর থেকে বা পরবর্তীতে বিরূপ পরিবেশে বড় হয়, দুঃখ-কষ্ট, ক্ষুধা আর নির্যাতনের সাথে যার বাস, জীবনের প্রয়ােজনে তার পক্ষে সমাজের নিষিদ্ধ পথে, পাপের পঙ্কিল পথে পা বাড়ানাে অস্বাভাবিক নয়। বাধ্য হয়েই সে পাপী হয় ।কিন্তু জন্মের সময় তাে সে পাপী ছিল না। বরং পরিবেশের প্রতিকূলতাই তাকে পাপী করেছে। অনুকূল পরিবেশ পেলে, একটু স্নেহ-ভালােবাসার পরশ পেলে হয়তােবা তার হৃদয়ে সৃষ্টি হতে পারে অনুতাপের অমিয় ধারা। হয়তােবা সেই অমিয় ধারায় স্নান করে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে একসময়। এভাবে সমাজের বন্ধুর পথে চলতে গিয়ে বিপথগামী হওয়া ব্যক্তিদের সুপথে ফিরিয়ে এনে সমাজকে কলুষমুক্ত করা অসম্ভব কোনাে কাজ নয়। শত খুনের নায়ক ইতিহাসখ্যাত হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া বা উন্মুক্ত তরবারি হাতে নবিজি (স)-কে হত্যা করতে যাওয়া ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু পাপীকে ঘৃণা করে সমাজকে কলুষমুক্ত করা সম্ভব নয়। আর তাই মায়ের ঘৃণা সন্তানের বিরুদ্ধে নয়, সন্তানের গায়ে মাখা মলের বিরুদ্ধে সাবানের জেহাদ কাপড়ের বিরুদ্ধে নয়, ময়লার বিরুদ্ধে।

মন্তব্য: 

অপরাধীকে ঘৃণা না করে তার পুনর্বাসনে এগিয়ে এলে সমাজে অপরাধীর সংখ্যা হ্রাস পাবে। তাই আমাদেরসকলের উচিত পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করে পাপীকে পাপমুক্ত হতে সহায়তা করা।

পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর ভাবসম্প্রসারণ 

  পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর ভাবসম্প্রসারণ   

 

আরও পড়ুনঃ  ভাব সম্প্রসারণ: জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো

মূলভাবঃ  

মানুষ জন্মের সময় নিস্পাপ হয়েই জন্মগ্রহণ করে। পরবর্তীতে চলমান সমাজজীবনের পাল্লায় পড়ে নিজের অজ্ঞাতেই একদিন সে পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাই পাপীকে ঘৃণা না করে সবারই পাপকে ঘৃণা করা উচিত।

ভাব-সম্প্রসারণঃ

মানুষ সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষ যখন পৃথিবীতে আসে তখন সে থাকে নিস্পাপ। ক্রমশ সে বড় হতে থাকে। একসময় সে জিবনের তাগিদে অর্থের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে এবং বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। কিন্ত তার এ চলার পথে নিজের অজান্তেই কিংবা সার্বিক পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই তাকে ধাবিত করে অন্যায় পথে। ফলে সে হয় পাপী। অথচ সে ‘পাপী‘ হয়ে জন্মায় নি। আমাদের সমাজে এরূপ অসংখ্য পাপীর সন্ধান পাওয়া যায়।
তাদের জীবন ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে, তাদের ‘পাপী‘ হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। আমরাই তাদেরকে পাপী হতে বাধ্য করছি। অথচ আমরা তাদের সঠিক পথে আনার চেষ্টা না করে আরাে অবহেলা করি। এটি মােটেও ঠিক নয়। অনুকূল পরিবেশ আর মায়া-মমতায় পাপীরাও চায় সুন্দরভাবে বাঁচতে । আর আমরা সে সুযােগ না দিয়ে উল্টো পাপীদের এড়িয়ে চলি। আমাদের এ ধরনের মানসিকতা একজন পাপীর সংশােধনের অন্তরায়। এর ফলে পাপের মাত্রা আরাে বেড়ে যায়। পাপী অবহেলিত হলে সাধারণের প্রতি তার মনের ক্ষোভ আরাে বেড়ে যায়। কাজেই পাপীকে ঘৃণা করা উচিত নয়।

মন্তব্যঃ

আমাদের সবাইকে এ সমাজ গঠনে এগিয়ে আসতে হবে। সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য পাপীকে বুকে টানতে হবে। আর পাপকে ঘৃনা করতে হবে।

শেষ কথাঃ

তো শিক্ষার্থীরা আমাদের আজকের ব্লগপোষ্ট পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর ভাবসম্প্রসারন কেমন লেগেছে? উপকৃত হয়েছেন তো? তবে যাই করেন না কেনো, অবশ্যই পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর ভাবসম্প্রসারন টি খাতায় নোট করে ফেলুন। তাহলে আপনাদের মনে রাখতে সুবিধা হবে। এছাড়া আপনি চাইলে আমাদের অন্যান্য পোষ্ট পড়তে পারেন। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নীতিমালা ২০২৩

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link