কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট | কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা

কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট

প্রিয় ভিজিটরস, আজকের এই কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা টি যেকোন শ্রেণির জন্য। যারা ৭ম শ্রেনীতে আছে তাদের জন্যও এই কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনাটি। আবার ক্লাস দশম শ্রেনীতে আছো তাদের জন্য এই কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা। অর্থাৎ ক্লাস ৭ম শ্রেনী থেকে ১০ম দশম শ্রেনী পর্যন্ত সবার প্রযোজ্য এই কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা

 কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা 

দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা কিছু করি সব কিছুতেই বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান রয়েছে। আমাদের কৃষি নির্ভর দেশে কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অবদানও অপরিসীম। চাষের কঠোর পরিশ্রমের কাজ গুলিকে বিজ্ঞান অনেক সহজ সরল করে দিয়েছে।উন্নত মানের বীজ,সার,কীটনাশক,কিভাবে আমাদের দেশের কৃষি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তা নিয়েই আজকের উপস্থাপন কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা
কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট
কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট

ভূমিকা:

কৃষিকাজ হলো আমাদের সমাজের প্রধান ভিত্তি স্বরূপ। মাথার ওপর কৃষিকাজের ছাউনি থাকার ফলেই আমরা দুবেলা পেট ভরে খেয়ে পড়ে অন্য চিন্তার অবকাশ পাই। সে কারণে সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে আমাদের সমাজে কৃষিকাজের গুরুত্ব সর্বাধিক। অতীত কাল থেকেই কিভাবে কৃষিকে উন্নত করে সহজে অধিক ফলন লাভ করা যায় সে বিষয়ে মানুষ নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। সময় যত এগিয়েছে, বিশ্বের জনসংখ্যা যত বেড়েছে, ততোই বেড়েছে কৃষিতে অধিক ফলনের প্রয়োজনীয়তা। কৃষি মানুষের প্রাথমিক চাহিদা মেটায়। পৃথিবীর মানুষের এই প্রাথমিক চাহিদা মেটানোর তাগিদে কৃষির সঙ্গে সংমিশ্রণ ঘটেছে বিজ্ঞানের। বিজ্ঞান কৃষিকে উপহার দিয়েছে কাঙ্খিত অধিক ফলন। বিজ্ঞানের দানেই কৃষি আজ আর অতীতের মতো পরিশ্রমসাধ্য নেই। তাই কৃষিকাজে বিজ্ঞানের এই ব্যাপক ও বহুমুখী অবদানকে স্মরণে রেখেই এই প্রতিবেদনের উপস্থাপনা।

 

মানবজীবনে কৃষির গুরুত্ব: 

কৃষি মানুষের অস্তিত্বের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। মানবজীবন ও মানবসমাজে এর গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে এটি মানুষের আদিমতম জীবিকার উপায়। দেশে দেশে কৃষিই সমাজের মেরুদণ্ড, কৃষিই সমাজের ভিত্তি। স্বভাবতই কৃষির ক্রমোন্নতিতেই সমাজের ও দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি। এই উন্নতিতে অনন্য ও অভাবনীয় ভূমিকা রেখেছে বিজ্ঞান। আজকের বিশ্বে প্রতিটি ক্ষেত্রের মতো কৃষিক্ষেত্রেও বিজ্ঞানই আজ বাড়িয়ে দিয়েছে তার সুদূরপ্রসারী কল্যাণী হাত।

মানবজীবনে কৃষির গুরুত্ব
মানবজীবনে কৃষির গুরুত্ব

কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রবেশ:

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বিশেষ জ্ঞানের সংমিশ্রণে কৃষিকাজ শুরু হলেও সময়ের সাথে সাথে মানুষ তথাকথিত অপ্রাসঙ্গিক নানা বস্তুকে কৃষিকাজের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে শেখে। এই পর্বকেই কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রবেশের পর্ব হিসেবে মনে করা হয়। এই পর্বে মানুষ প্রথম মাটি খোঁড়ার জন্য ধারালো অস্ত্র হিসেবে আবিষ্কার করে লাঙ্গলের। অতি দ্রুত অধিক পরিমাণ জমি ধারালো লাঙ্গল দ্বারা কর্ষণের জন্য শেখে বিভিন্ন গবাদিপশুকে ব্যবহার করতে। এই সকল গবাদি পশু মানুষকে লাঙ্গল ব্যবহার করে অনেক খালি জমি তুলনামূলক কম পরিশ্রমে স্বল্প সময়ে কর্ষণ করতে সাহায্য করত। কৃষিকাজে বিজ্ঞান প্রবেশের এই পর্বেই মানুষ শিখেছিল নিকটবর্তী নদী কিংবা পুকুর থেকে খাল কেটে নিজের জমিতে নিয়ে আসতে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক জলসেচের ধারণাও এই যুগেই পরিণতি লাভ করেছিল।

এই যুগের পরবর্তীতেই বিজ্ঞান মানুষকে শিখিয়েছিল জৈব সার দ্বারা জমির উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করতে; শিখিয়েছিল উৎপাদিত ফসলকে দীর্ঘকাল নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করতে। এরপর সময় যত এগিয়েছে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগমূলক চরিত্রে হয়তো বিবর্তন এসেছে; কিন্তু কৃষিকাজ ও বিজ্ঞানের এই প্রাথমিক সম্পর্ক এখনো পর্যন্ত বদলায়নি।

কৃষির আধুনিকায়নে বিজ্ঞান:

আঠারো শতকের শেষদিকে এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিকে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা ঘটে। এর ফলে কৃষকেরা কৃষিক্ষেত্রে উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি ও কৃষিপদ্ধতির সাথে পরিচিত হয়। জন্তু আর কাঠের লাঙলের পরিবর্তে কৃষকদের হাতে আসে কলের লাঙল, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার। বিজ্ঞানের কল্যাণে উন্নত দেশগুলোতে জমিকর্ষণের পুরোনো পদ্ধতিগুলো লোপ পেয়েছে। সেচ ব্যবস্থাতেও বিজ্ঞান অনেক পরিবর্তন এনেছে। কৃষকদের এখন ফসলের জন্যে প্রকৃতির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে জমিতে পানিসেচের ব্যবস্থা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেচের জন্যে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎশক্তি চালিত পাম্প। 

কৃষির আধুনিকায়নে বিজ্ঞান
কৃষির আধুনিকায়নে বিজ্ঞান

অতিবৃষ্টিও আজ কৃষককে ভীত করছে না। বিজ্ঞানের বদৌলতে জমির অতিরিক্ত জল নিষ্কাশন আজ অত্যন্ত সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে নতুন অকল্পনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছেন। উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে যে ভূমিকা রেখেছে তাও অভাবনীয়। বিশেষ করে কৃত্রিম উপায়ে উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদনে সাফল্য বিস্ময়কর। এসব বীজ সাধারণ বীজের তুলনায় ফসল উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে সময়ও কম নেয়। সুতরাং বীজ নিয়ে কৃষকদের অতীতের অনিশ্চয়তা দূর করেছে বিজ্ঞান। শক্তিশালী রাসায়নিক সার আবিষ্কৃত হওয়ায় ফসল উৎপাদনে এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। সাম্প্রতিককালে বিশ্বের বৃষ্টিহীন শুষ্ক মরু অঞ্চলে চাষাবাদ শুরু করার প্রচেষ্টা চলছে বিজ্ঞানের সহায়তায়। সেদিন দূরে নয় যেদিন এ ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা সাফল্য অর্জন করবেন।

প্রাগৈতিহাসিক কৃষিকাজ:

যতদূর ধারণা করা হয় মানুষ কৃষিকাজ শিখেছিল প্রকৃতিকে দেখে। কৃষিকাজ শেখার আগে মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রাহক ও যাযাবর। মনে করা হয়, যে সব ফলের বীজ মানুষ খাওয়ার পর ছুঁড়ে ফেলে দিত, মানুষ সর্বপ্রথম কৃষিকাজের ধারণা লাভ করে। এর পরবর্তীতে মানুষ শেখে হাত বা কোনো অস্ত্র জাতীয় কিছু দিয়ে মাটি খুঁড়ে বীজ প্রতিস্থাপন করে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে নতুন গাছ নির্মাণ করতে। এই হলো মানুষের প্রাগৈতিহাসিক কৃষিকাজ। প্রাগৈতিহাসিক এই পদ্ধতিতে মানুষ বসতির আশে পাশের জমিতে কোথাও পূর্ব সংগৃহীত বীজ ছড়িয়ে, আবার কোথাও বা মাটি খুঁড়ে বীজ প্রতিস্থাপন করে কৃষিকাজ করতো। অর্থাৎ বিজ্ঞানের অর্থ যদি বুদ্ধি দ্বারা লব্ধ বিশেষ জ্ঞান হয়, তাহলে একথা মানতেই হবে যে প্রাগৈতিহাসিক কৃষিকাজের সময় থেকেই মানুষের কৃষিকাজে সেই বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটেছিল।

আরও পড়ুনঃ  পদ্মা সেতু রচনা ২০২৩ - সকল শ্রেণির জন্য কমন
প্রাগৈতিহাসিক কৃষিকাজ
প্রাগৈতিহাসিক কৃষিকাজ

কৃষি ও বিজ্ঞান গবেষণা:

আধুনিক যুগে কৃষির উন্নতির প্রয়োজনে কৃষি ও বিজ্ঞানের সার্থক মিলন ঘটিয়ে কৃষিবিজ্ঞান নামক একটি সুসংহত বিষয়ের প্রচলন ঘটানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলে বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ থেকেই কৃষি ও বিজ্ঞানকে মিলিয়ে দিয়ে কৃষিবিজ্ঞান নামক একটি সুসংহত পাঠ্যবিষয়ের উদ্ভাবন ঘটানো হয়। এই বিষয়ের অন্তর্গত থেকে পৃথিবীর নানা বুদ্ধিদীপ্ত সম্ভাবনাময় ছাত্র-ছাত্রী কৃষির উন্নতির জন্য নানা প্রকার বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিয়োজিত থাকেন। 

কোন কোন ক্ষেত্রে এরা আধুনিক চাষী হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করে থাকেন। এই বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলেই পৃথিবীতে আবির্ভাব ঘটেছে উচ্চ ফলনশীল নানা বীজের। এই প্রকার বীজ ব্যবহার করে অতি সহজে, স্বল্প ব্যয়ে প্রচুর পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া সবুজ বিপ্লব বা গ্রীন রেভোল্যুশন কৃষিক্ষেত্রে প্রধানত এই উচ্চ ফলনশীল বীজের প্রয়োগের ফলেই ঘটেছিল। তাছাড়া আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পৃথক প্রকারের ফসলের মধ্যে জিনগত মিলন ঘটিয়ে একটি নতুন প্রকারের ফসল তৈরি করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা গিয়েছে। 

উন্নত বিশ্বের কৃষি: 

উন্নত দেশগুলোর কৃষিব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিজ্ঞাননির্ভর। জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত সমস্ত কাজেই রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক কৃষিযন্ত্র, যেমন : মোয়ার (শস্য-ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাঁধার যন্ত্র)থ্রেশিং মেশিন (মাড়াই যন্ত্র), ম্যানিউর স্প্রেডার (সার বিস্তারণ যন্ত্র) ইত্যাদি উন্নত দেশগুলোর কৃষিক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক সাফল্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের খামারে একদিনে ১০০ একর পর্যন্ত জমি চাষ হচ্ছে কেবল এক-একটি ট্রাক্টরের মাধ্যমে। সেগুলো আবার একসাথে তিন-চারটি ফসল কাটার যন্ত্রকে একত্রে কাজে লাগাতে সক্ষম। তারা বিভিন্নভাবে কৃষিকাজের এমন অনুকূলপরিবেশ সৃষ্টি করছে যার ফলে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে অগ্রগামী। যেমন বলা যায় জাপানের কথা। জাপানে জমির উর্বরাশক্তি বাংলাদেশের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে তারা এ দেশের তুলনায় ৬ গুণ বেশি ফসল উৎপাদন করছে।

কৃষি ও বাংলাদেশ: 

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এ দেশের মাটি ও জলবায়ু বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় কৃষির অনুকূলে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো যখন প্রতিকূল অবস্থা ঘুচিয়ে ফসল উৎপাদনের বৈজ্ঞানিক নেশায় মেতেছে, সেখানে বাংলাদেশের কৃষকেরা তার কাঠের লাঙল আর একজোড়া জীর্ণ-শীর্ণ বলদ নিয়ে চেয়ে আছে আকাশের পানে বৃষ্টির প্রতীক্ষায়। তবে ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে জমি চাষের জন্য প্রায় ১ লক্ষ ইঞ্জিন চালিত চাষযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়াও কৃষিকাজে ট্রাক্টর, সিডড্রিল (গতখনক), ধান-বুনন যন্ত্র, বিরিড্রাম সিডার, স্প্রেয়ার, উন্নত সেচ-পাম্প, ড্রায়াফ্রাম পাম্প, ট্রেডল পাম্প, রোয়ার পাম্প, শস্যকাটা যন্ত্র, ঘাসকাটা যন্ত্র, মাড়াই যন্ত্র ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ছে। এ কথা অবশ্য সত্যি যে বাংলাদেশেও কৃষি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় সফলতা এসেছে। 

কৃষি শিক্ষা ব্যবহারিক চিত্র
কৃষি শিক্ষা ব্যবহারিক চিত্র

কিন্তু বাংলাদেশের শতকরা আশিভাগ কৃষক এখনও সনাতন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে চলেছে। শিক্ষা, সচেতনতা, মূলধন, পুঁজি ইত্যাদির অভাবে তারা কৃষিকাজে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তারা শ্রম দিচ্ছে কিন্তু উপযুক্ত ফসল পাচ্ছে না। কেননা তারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করতে পারছে না।

কৃষিতে বিজ্ঞান ও অপপ্রয়োগ:

কৃষিকাজে বিজ্ঞানকে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করে আধুনিক বিশ্বের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো যেমন সম্ভব হয়েছে, তেমনি অধিক ফলনের আশায় কৃষিকাজে বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে সাময়িকভাবে লাভের জন্য বিভিন্ন সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করার মতো ঘটনাও ঘটে চলেছে অহরহ।

ফলে প্রতিনিয়ত জমিতে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে তেমন সেই কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার বৃষ্টির জলে ধুয়ে নিকটবর্তী নদী-নালায় মিশে ব্যাপক জলদূষণ ঘটাচ্ছে।

 

প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় কৃষিতে সেচের প্রয়োজনে ব্যাপকভাবে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় গভীর নলকূপ ব্যবহার করে জল তুলে ফেলার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বিপদজনক সীমার নিচে নেমে গিয়েছে। ফলে পানীয় জলে ক্রমশ ব্যাপক থেকে ব্যাপকতার হচ্ছে আর্সেনিকের মতন বিষের মাত্রা।

কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ প্যারা
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ প্যারা

উপসংহার: 

বিজ্ঞান আজ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। উন্নত দেশগুলোতে বিজ্ঞানের সাহায্যে পাহাড় কেটে জঙ্গল পরিষ্কার করে বিভিন্নভাবে কৃষিজমি তৈরি করা হচ্ছে। ফসল আবাদের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা বিজ্ঞানকে কাজে লাগাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ তারা কৃষিক্ষেত্রে লাভ করছে বিরাট সাফল্য। কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সুজলা-সুফলা আমাদের এই দেশে বিজ্ঞানের জাদুর ছোঁয়া আমরা যত বেশি কাজে লাগাতে পারব ততই কৃষি আমাদের দেবে সোনালি ফসলসহ নানা ফসলের সম্ভার। কৃষকদের সচেতনতা, সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাদের সাহায্য প্রদান এবং বাংলাদেশে কৃষি নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাই পারে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে, বাংলাদেশকে একটি সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা দেশ হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে।

আরও পড়ুনঃ 

  1. অনুচ্ছেদ রচনা বৈশাখী মেলা – কমন পড়বেই
  2. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট | একুশ আমার অহংকার রচনা
  3. স্বদেশ প্রেম রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10, 11, 12
  4. অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট | অধ্যবসায় রচনা PDF

কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ssc
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ssc

    কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ssc    

ঘুরেফিরে আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বারবার আসে কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে এই রচনা মুখস্ত না করেই নিজের মতো লেখা যায় কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা টির কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরা হল।

ভূমিকাঃ

কৃষি অর্থনীতি উন্নয়নের বিজ্ঞান অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কারণ কৃষি উদ্বৃত্তের ক্রমাগত স্তর প্রযুক্তিগত এবং বাণিজ্যিক বৃদ্ধির অন্যতম উৎস। কৃষিকাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দিন দিন মজবুত হচ্ছে। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই অগ্রগতিকে টেকসই করতে প্রয়োজন কৃষি সংক্রান্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে সহজলভ্য করা।কৃষি বিজ্ঞান হল কৃষিক্ষেত্রের সাথে জড়িত অনুশীলনের অধ্যয়ন। কৃষি বিজ্ঞান এবং কৃষি, একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হলেও, মূলত একে অপরের থেকে খুব আলাদা।কৃষি হল মানুষের ব্যবহারের জন্য গাছপালা, ফল ও সবজি উৎপাদনের শিল্প। অন্যদিকে কৃষি বিজ্ঞান সেচ ব্যবস্থাপনা, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির মতো উৎপাদন কৌশলগুলিতে গবেষণা,উন্নতি এবং উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। এতে কৃষি পণ্যের গুণমান এবং পরিমাণের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান-প্রবন্ধ রচনা

কৃষি বিজ্ঞানঃ

কৃষি বিজ্ঞান কৃষি কাজের প্রাথমিক পণ্যগুলিকে সমাপ্ত,ব্যবহার-প্রস্তুত পণ্যে রূপান্তর করার সাথে সম্পর্কিত। কৃষি বিজ্ঞান ফসলের উৎপাদনশীলতাকে বাধাগ্রস্তকারী প্রতিকূল কারণগুলির প্রতিরোধ এবং সংশোধনেও জড়িত। স্থানীয় এলাকার সাথে এর দৃঢ় সম্পর্কের কারণে এটিকে স্থানীয় বিজ্ঞান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি প্রায়শই ইকো-অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞান হিসাবে বিবেচিত হয়।কারণ এটি মূলত একটি নির্দিষ্ট এলাকার জলবায়ু এবং মাটির বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। এই কারণগুলি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। অনেক লোকের অভিমত যে কৃষি বিজ্ঞান স্থানীয় আবহাওয়া এবং স্থানীয় মাটির বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে, তাই নির্দিষ্ট ফসল স্থানীয়ভাবে অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।

কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নঃ

বাংলাদেশ মূলত কৃষি খাতের উপর নির্ভরশীল একটি দেশ। এছাড়াও কৃষি এদেশের মানুষের শুধু জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম নয়, বরং তাদের জীবন যাপনের একটি উপায়। তাছাড়া গোটা জাতি খাদ্যের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সরকার কৃষি খাতের উন্নয়নে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার বছর ধরে আমরা কৃষি চর্চা করছি কিন্তু তবুও এটি দীর্ঘকাল ধরে অনুন্নত ছিল। স্বাধীনতার পর আমরা আমাদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে অন্যান্য দেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি শুরু করি। কিন্তু সবুজ বিপ্লবের পর আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠি এবং আমাদের উদ্বৃত্ত অন্যান্য দেশে রপ্তানি শুরু করি। আগে আমরা খাদ্যশস্য চাষের জন্য বর্ষার ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতাম কিন্তু এখন আমরা বাঁধ, খাল, নলকূপ, পাম্প সেট নির্মাণ করেছি। আমাদের কাছে এখন সার, কীটনাশক এবং বীজের আরও ভাল বৈচিত্র্য রয়েছে, যা আমাদের পুরানো সময়ে আমরা যা উৎপাদন করেছি তার তুলনায় আরও বেশি খাদ্য বাড়াতে সাহায্য করে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে উন্নত যন্ত্রপাতি, উন্নত সেচ সুবিধা এবং কৃষির বিশেষ জ্ঞানের উন্নতি হতে থাকে। অধিকন্তু আমাদের কৃষি খাত অনেক দেশের তুলনায় শক্তিশালী হয়েছে এবং আমরা অনেক খাদ্যশস্যের বৃহত্তম রপ্তানিকারক।

কৃষি কাজে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ

কৃষি বিজ্ঞান, খাদ্য এবং ফাইবার উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াকরণের সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান।  এর মধ্যে রয়েছে মাটি চাষের প্রযুক্তি,শস্য চাষ ও ফসল কাটা,পশু উৎপাদন,এবং মানুষের ব্যবহার ও ব্যবহারের জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজ পণ্যের প্রক্রিয়াকরণ।প্রযুক্তি এবং আইওটি অনেক দিক থেকে কৃষিকে রূপান্তরিত করার সম্ভাবনা রাখে। যথা- আইটি  কৃষিকে উন্নত করতে পারে এমন পাঁচটি উপায় রয়েছে: ডেটা, টন ডেটা, স্মার্ট এগ্রিকালচার সেন্সর দ্বারা সংগৃহীত, যেমন  আবহাওয়া পরিস্থিতি, মাটির গুণমান, ফসলের বৃদ্ধির অগ্রগতি বা গবাদি পশুর স্বাস্থ্য।

GMOS হল প্রযুক্তির ব্যবহার। যখন একটি নির্দিষ্ট উদ্ভিদ বা প্রাণী থাকে, ব্যবহারকারীর প্রয়োজনে জেনেটিকালি পরিবর্তিত হয়। জেনেটিকালি পরিবর্তিত খাবার সাধারণত বেশি উপাদান এবং বড় আকার দিয়ে তৈরি করা হয়। GMOS-এর উদাহরণ হল ভুট্টা, সয়া, ক্যানোলা এবং সুগার বিট।

বৈজ্ঞানিক জ্ঞান জিএমওএস ব্যবহার করে কৃষিতে অনুশীলনের বিকাশকে প্রভাবিত করেছে। GMOS হল প্রযুক্তির ব্যবহার যখন একটি নির্দিষ্ট উদ্ভিদ বা প্রাণী থাকে, ব্যবহারকারীর প্রয়োজনে জেনেটিকালি পরিবর্তিত হয়। ভুট্টার মতো খাবার এখন জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত হয়ে বড় হতে পারে, বেশি প্রোটিন থাকে।

কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাঃ

একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর কোনাে কাজেই বিজ্ঞানের অনুপস্থিতি নেই। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আজ সর্বত্র অব্যাহত। বিজ্ঞানের বদৌলতে অন্ধকার ধরণী আজ আলোকিত। জগৎ ও জীবনের কর্মপ্রবাহের প্রতিটি স্তরে বিজ্ঞান তার অবদানের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বর্তমান শতাব্দীতে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহারকে সাফল্যজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের প্রয়াসে নিবিড় চাষের জন্যে যান্ত্রিক সরঞ্জামের আবিষ্কার কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা করেছে। 

ট্রাক্টর ও পাওয়ার-টিলারের সঙ্গে আরও নানা ধরনের যান্ত্রিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির আবিষ্কার মানুষ ও পশুশ্রমকে মুক্তি দিয়েছে। গােবর সার, কম্পােস্ট সার ও সবুজ সারের স্থলে রাসায়নিক সার; যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, এসএসপি ইত্যাদির আবিষ্কারের ফলে একর প্রতি উৎপাদন দ্বিগুণের ওপরে চলে গেছে। একই সঙ্গে উল্লেখ করা যায়, বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কারের কথা। 

ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রে ইরি ধান আবিস্কৃত হয়। ফলনশীল ধান আবিষ্কার করে এদেশের কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়ােগজনিত সাফল্য শুধু ধান ও গমের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানের এ সাফল্য প্রায় সকল ফসলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়ােগের মাধ্যমে পােকা-মাকড় দমন ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়ােগ ঘটেছে অন্য সকল ক্ষেত্রের মতােই। নানা ধরনের পােকার আক্রমণ থেকে শস্যকে রক্ষার জন্যে ইনসেকটিসাইড বা পােকা দমনকারী রাসায়নিক দ্রব্য আবিস্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে এড্রিন, ডায়াজিন, ক্লোর ছাড়াও রয়েছে অনেক পােকা ধ্বংসকারী ওষুধ।

উন্নত দেশসমূহের মতাে আমরাও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অধিক উৎপাদন করে আমাদের খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পারি। বলতে গেলে মানুষের মৌলিক চাহিদার সবটাই যােগান দেয় কৃষি। তাই কৃষিকে অবহেলা করে বেঁচে থাকা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণসাধনও অসম্ভব। আশার কথা, এদিকে লক্ষ রেখেই সরকার কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতন হয়ে উঠছে। কৃষিব্যবস্থার সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে এদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে কৃষির ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবঃ

আমরা যে খাবার খাই তা কৃষিকাজ এবং বাংলাদেশের কৃষকদের উপহার। তারা তাদের ঘাম ঝরিয়ে আমাদের এই খাবার সরবরাহ করে। এছাড়া কৃষি খাত দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এবং জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান অবদানকারী। কৃষি কাজের জন্য একটি বৃহৎ শ্রমশক্তি এবং মোট নিযুক্ত লোকের প্রায় ৮০% কর্মচারী প্রয়োজন। তাছাড়া আমাদের মোট রপ্তানির প্রায় ৭০% কৃষি পণ্য। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হল চা, তুলা, বস্ত্র, তামাক, চিনি, পাটজাত দ্রব্য, মসলা, চাল এবং অন্যান্য অনেক পণ্য। কৃষি কাজ অর্থনীতি ও জনগণের জন্য খুবই উপকারী হলেও এর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। 

আরও পড়ুনঃ  ভাষা আন্দোলন রচনা ২০ পয়েন্ট | ভাষা আন্দোলন রচনা PDF

এই প্রভাবগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বন উজাড় হল কৃষির প্রথম নেতিবাচক প্রভাব। কারণ অনেক বন কেটে কৃষি জমিতে পরিণত করা হয়েছে। এছাড়াও, সেচের জন্য নদীর পানি ব্যবহারের ফলে অনেক ছোট নদী ও পুকুর শুকিয়ে যায় যা প্রাকৃতিক আবাসস্থলকে ব্যাহত করে। অধিকন্তু কৃষি কাজে ব্যবহার করা বেশিরভাগ রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক জমির পাশাপাশি কাছাকাছি জলাশয়গুলিকে দূষিত করে।  শেষ পর্যন্ত এটি মাটির উপরের ক্ষয় এবং ভূগর্ভস্থ পানির দূষণের দিকে পরিচালিত করে। কৃষি সমাজকে অনেক কিছু দিয়েছে। তবে এর নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে যা আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। তদুপরি সরকার কৃষির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সর্বাত্মক সহায়তা করছে। তবুও কৃষির নেতিবাচক প্রভাবগুলির জন্য কিছু করা দরকার।

আমাদের দেশে কৃষি ও কৃষকঃ

বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য যে কোনো পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একজন ক্ষুধার্ত, অসন্তুষ্ট মানুষকে সুখী, সুস্বাস্থ্যের মানুষে পরিণত করা।  খাদ্য আমদানির মাধ্যমে বা ঘরে উৎপাদনের মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশকে তার নিজের খাদ্য তৈরি করতে হবে। তাই কৃষি উন্নতির জন্য পরিশ্রম করে আমাদের আরও খাদ্য বাড়াতে হবে। বৈজ্ঞানিকভাবে অন্যান্য পদ্ধতি রয়েছে। রসায়নবিদ, জীববিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এমনকি পদার্থবিদদেরও বিজ্ঞানকে বৃহৎ আকারের উৎপাদনে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে একটি মহান ভূমিকা পালন করতে হবে এবং তাদের অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত সুযোগ দিতে হবে। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, প্রতি একরে ফসলের উচ্চ ফলন নিশ্চিত করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে।  

আগের দিনে কৃষকরা গোবরের মতো সহজলভ্য সারের উপর নির্ভর করত। তাকে অবশ্যই বুঝতে শেখানো উচিত যে রাসায়নিক সার জমির উৎপাদনশীলতাকে অনেকাংশে উন্নত করতে পারে। জৈব ও অজৈব সারের অনুপাত মাটির প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। আমাদের দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ লােকই কৃষিজীবী। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, উন্নত দেশগুলােতে কৃষিকাজের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠলেও আমাদের দেশে এ ব্যাপারে তেমন কোনাে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। 

এখনও প্রাচীন আমলের মতাে কৃষকেরা কৃষিকাজের জন্যে জীর্ণ-শীর্ণ গরু আর লাঙল ব্যবহার করছে। কৃষকদের অবস্থাও শােচনীয়। কৃষি কাজের জন্যে তারা প্রয়ােজনীয় মূলধন যােগাতে পারে না। তারা নিরক্ষর তাই উন্নত ও আধুনিক কৃষিব্যবস্থা প্রবর্তনের উপযােগী জ্ঞান ও অর্থ তাদের নেই। ফলে আমাদের কৃষিব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে সংগতি রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিবর্তনের সিঁড়ি বেয়ে গােটা বিশ্ব আজ অপ্রতিহত গতিতে ধেয়ে চলেছে উন্নয়নের স্বর্ণ-শিখরের পানে। দিনবদলের পালায় বাংলার কৃষক আর কৃষি আজও সেই তিমিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। 

যুগ-তরঙ্গ তাদের মাঝে কোনাে আলােড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি। তাই আজও বাংলার কৃষক প্রকৃতির খেয়াল-খুশির খেলনা হয়ে ধুকে ধুকে মরছে।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হতভাগ্য কৃষকদের ইতিবৃত্তে বলেছেন, “ওই যে দাড়ায় নত শির মূক সবে, ম্লানমুখে লেখা শুধু শত শতাব্দীর বেদনার করুণ কাহিনি, স্কন্ধে যত চাপ তার বহি চলে মন্থরগতি যতক্ষণ থাকে প্রাণ তার।’

উন্নত বিশ্বে কৃষিঃ

উন্নত দেশগুলাের কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিজ্ঞাননির্ভর। জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তােলা পর্যন্ত সমস্ত কাজেই রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার। বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন মােয়ার (শস্য ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাঁধার যন্ত্র), থ্রেশিং মেশিন (মাড়াই যন্ত্র), ফিড গ্রাইন্ডার (পেষক যন্ত্র), ম্যানিউর স্পেডার (সার বিস্তারণ যন্ত্র), মিল্কার (বৈদ্যুতিক দহন যন্ত্র) ইত্যাদি উন্নত দেশগুলাের কৃষিক্ষেত্রে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের খামারে ট্রাক্টরের মাধ্যমে একদিনে ১০০ একর পর্যন্ত জমি চাষ করা সম্ভব হয়। একই ট্রাক্টর আবার একসঙ্গে ফসল কাটার যন্ত্র হিসেবেও কাজ করে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীন, জাপান, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশও কৃষি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলেছে।

উপসংহারঃ

কৃষি ছাড়া মানব সভ্যতা কল্পনা করা যায় না। কৃষিকাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দিন দিন মজবুত হচ্ছে। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষির উন্নতির উপরেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই কৃষি-বিজ্ঞান ও কৃষি-প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণার কোনাে বিকল্প নেই। এটা অত্যন্ত আশার কথা যে, বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ইতিমধ্যে বহু নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল ফসল উদ্ভাবন করেছে, বহু কৃষিবান্ধব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে।

আরও পড়ুনঃ 

  1. অনুচ্ছেদ রচনা বৈশাখী মেলা – কমন পড়বেই
  2. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট | একুশ আমার অহংকার রচনা
  3. স্বদেশ প্রেম রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10, 11, 12
  4. অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট | অধ্যবসায় রচনা PDF

পরিশেষে

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজকে আমরা জানলাম কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ প্যারা সম্পর্কে। যদি আজকের এই কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের এই কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা টি তারাতারি মুখস্ত করতে ব আয়ত্ত করতে রচনাটি খাতায় নোট করে ফেলুন। নোট করে তারপর কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা টি পড়ুন। তারাতারি শেখা হয়ে যাবে। 
রচনা কৃষিকাজে বিজ্ঞান
রচনা কৃষিকাজে বিজ্ঞান

TAG: কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা,কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট,কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা ২৫ পয়েন্ট,কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা class 10,কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা ৩০ পয়েন্টকৃষি কাজে বিজ্ঞান কবিতা,কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা pdf,কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা উক্তি,কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা class 10,কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা class 7,কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট,কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট ssc,কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা class 10,কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা hsc,কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা উক্তি

About the Author

One thought on “কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট | কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link