বাংলাদেশের সমুদ্র জয় রচনা, পড়ুন এবং শিখুন (বাংলা প্রবন্ধ রচনা)

বাংলাদেশের সমুদ্র জয় রচনা

বাংলাদেশের সমুদ্র জয় রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমুদ্র জয়, যা শুনেই মনটা গর্বে ভরে যায়। এটির কি ইতহাস, ভূমিকা কি, সীমানা কতটুকু সকল বিষয় জানতে পারবেন এই রচনায়।

রচনাটি বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষা সহ স্কুল,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নে এসে থাকে। আমরা যদি এই রচনা খুব সুন্দর ও সহজ ভাষায় লিখতে পারি তবে আমাদের পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট কেউ আটকাতে পারবেনা।

রচনাটি পড়ার আগে / মুখস্ত করার আগে অবশ্যই খাতায় বা নোটপ্যাডে লিখে নিবেন। তাহলে মুখস্ত তারাতারি হবে। এমন সব গুরুত্বপূর্ণ লেখাপড়ার বিষয় জানার জন্য আমাদের সহবাংলা আইটি ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

বাংলাদেশের সমুদ্র জয় রচনা

রচনার সংকেত সমূহ: রচনাটি লিখতে আপনাকে যে সমস্ত সংকেত ব্যাবহার করতে হবে!

  • ভূমিকা
  • সমুদ্র এবং বাংলাদেশ
  • সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দাবি
  • সমুদ্র জয়ের রায়
  • বাংলাদেশের প্রাপ্ত সম্পদ
  • ভারতের বিপক্ষে রায় ও বাংলাদেশের অর্জন
  • সম্পদ রক্ষায় করণীয়
  • উপসংহার।

ভূমিকা:

যে কোনো বিজয়-ই আনন্দের। বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম বিজয়ের আনন্দ অনেকবারই এসেছে। তার সাথে যুক্ত হলো আরেকটি ব্যতিক্রমধর্মী বিজয় তথা সমুদ্র বিজয়। ১৯৭৪ সাল থেকে সমুদ্রের সীমা নির্ধারণ নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বিরোধ চলছিল। যার একটি সফল পরিসমাপ্তি ঘটল বাংলাদেশের কাঙ্খিত এ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে।

সমুদ্র এবং বাংলাদেশ:

মহাসাগরের লবণাক্ত জলের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার অংশকে সাগর বা সমুদ্র বলা হয়। সাধারণত সাগরের অংশ বিশেষ ভূভাগ দ্বারা আবদ্ধ থাকে। ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর, আরব সাগর বিশ্বের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাগরের উদাহরণ।

বাংলাদেশের দক্ষিণেও রয়েছে বিস্তুৃত জলরাশির বঙ্গোপসাগর। যা বাংলাদেশ ভারত ও মিয়ানমারের ভূভাগ দ্বারা সংযুক্ত। আর তাই বঙ্গোপসাগরের উপর নিজেদের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে।

আরও পড়ুনঃ  শৃঙ্খলাবোধ রচনা (২০ পয়েন্ট) শিখুন খুব তারাতারি

তবে বর্তমানে ভারত এবং মিয়ানমারের সাথে একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। সেই সাথে সমুদ্রের উপর বাংলাদেশের অধিকারও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দাবি:

বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধের মূল কারণ ছিল সমুদ্রসীমা নির্ধারণ পদ্ধতি নিয়ে। মিয়ানমারের দাবি ছিল সমান দূরত্ব অনুযায়ী সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হবে।

এ প্রেক্ষিতে সাগর এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার থাকবে ১৩০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত। এ জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমুদ্র এলাকা পাবে না। পাশাপাশি সমুদ্রের মহীসোপান অঞ্চলেও তাদের কোনো অংশ থাকবে না। অন্যদিকে রাষ্ট্রের নিজস্ব সাগর এলাকা হবে ৬ নটিক্যাল মাইল।

অপরপক্ষে বাংলাদেশের দাবি ছিল ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হবে। এ জন্য বাংলাদেশের অধীনে অর্থনৈতিক এলাকা যেমন থাকবে ঠিক তেমনি সমুদ্রের অর্থনৈতিক অঞ্চলে অধিকার থাকবে। এছাড়া রাষ্ট্রের নিজস্ব সাগর এলাকা হবে ১২ নটিক্যাল মাইল।

আরও পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান-প্রবন্ধ রচনা

সমুদ্র জয়ের রায়:

জার্মানিতে অবস্থিত সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল International Tribunal for the Law of the Seas (ITLOS) বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যকার সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে এক যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করে।

এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি এর বাইরে বিশেষ করে মহীসোপান ছাড়িয়ে সামুদ্রিক সম্পদের উপরও অধিকার লাভে সমর্থ হয়।

এর আগে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা সমস্যাটি সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশ তার সপক্ষে সকল প্রমাণ উপস্থাপন করলে মিয়ানমার ও তার সপক্ষে সকল দলিলপত্র জমা দেয়।

যার প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনে এবং ২০১২ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশের পক্ষে রায় ঘোষণা করে।

বাংলাদেশের প্রাপ্ত সম্পদ:

বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের দৈর্ঘ্য ৭১১ কি.মি এবং প্রতিবেশী মিয়ানমারের ৫৮৭ কি.মি। এই হিসাব অনুযায়ী ইটলস-এর রায়ে বাংলাদেশ পেয়েছে ১,১১,৬৩১ বর্গ কি.মি এবং মিয়ানমারের অংশে পড়েছে ১,৭১,৮৩২ বর্গ কি.মি। এছাড়া সমুদ্রে অবস্থিত ২৮টি ব্লকের মধ্যে ১৮টি ব্লকের মালিকানাও পেল বাংলাদেশ।

আরও পড়ুনঃ  স্মার্ট বাংলাদেশ রচনা পরিক্ষায় কমন পড়বেই | স্মার্ট বাংলাদেশ রচনা সকল শ্রেণির জন্য

সমুদ্রবক্ষের এই এলাকা প্রচুর তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত। আবার গভীর সমুদ্র জলরাশিতে মৎস সম্পদের পর্যাপ্ততা যেমন দেখা যায় ঠিক সমুদ্রের তলদেশেও রয়েছে প্রচুর খনিজ সম্পদ। বলা হয় কপার, ম্যাগনেসিয়াম, নিকেল ও কোবাল্টের মতো খনিজ সম্পদ গচ্ছিত রয়েছে সমুদ্র তলদেশে।

ভারতের বিপক্ষে রায় ও বাংলাদেশের অর্জন:

মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পর ২০১৪ সালের ৭ জুলাই আবারো বাংলাদেশের বিজয় দেখেছে বিশ্ববাসী। এবার প্রতিপক্ষ ভারত। বঙ্গোপসাগরে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চলা সমুদ্রসীমা নিয়ে এ বিরোধের অবসান ঘটায় বাংলাদেশ লাভ করেছে একটি স্থায়ী সমুদ্রসীমা, যার আয়তন ১,১৮,৮১৩ বর্গ কি.মি

জার্মানিতে অবস্থিত স্থায়ী সালিশী আদালত বাংলাদেশের পক্ষে এ রায় দেয়। এ রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিপুল অঞ্চল জুড়ে তার পূর্ণ অধিকার ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। রায় অনুযায়ী বিরোধপূর্ণ ২৫,৬০২ বর্গ কি.মি এর মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯,৪৬৭ বর্গ কি.মি। এর ফলে অধিকাংশ গ্যাস ব্লক এখন বাংলাদেশের।

ভারতের দাবিকৃত ১০টি গ্যাসব্লকের সবগুলোই পেয়েছে বাংলাদেশ, তবে বহুল আলোচিত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা পায় ভারত।

আরও পড়ুনঃ বাংলা প্রবন্ধঃ স্মৃতির পাতায় শেখ রাসেল রচনা | রচনা শেখ রাসেল

সম্পদ রক্ষায় করণীয়:

সমুদ্র জয়ের মাধ্যমে সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশ অর্জন করেছে বিশাল সম্পদ। সেই সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশকে কিছু করণীয় ঠিক করতে হবে যেমন:

সম্পদ রক্ষায় করণীয়
  • ১) দক্ষ জনশক্তি: যেকোনো সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই। তাই সমুদ্রের সম্পদ আহরণের জন্যও আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা প্রয়োজন। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে বরিশালে মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও সমুদ্রবিদ্যা বিভাগটি চালু করা হয়েছে। তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই বিভাগটি চালু করতে হবে।
  • ২) জরিপ জাহাজ: অত্যাধুনিক কোনো জরিপ জাহাজ বাংলাদেশে নেই। যেকারণে বিদেশি জাহাজ আমাদের সমুদ্রসীমায় দূষিত পদার্থ ফেলে চলে যায় এবং মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটে। আর এর ফলে বাংলাদেশ তার গুরুত্বপূর্ণ মৎসসম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আধুনিক জরিপ জাহাজ সংগ্রহ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
  • ৩) নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড: বিদেশি অনেক মাছ ধরা জাহাজ আমাদের নির্ধারিত এলাকায় এসে মৎস্যসম্পদ আহরণ করে। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।
  • ৪) মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি: মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক যে খুব ভালো তা বলা যাবে না। অথচ আমাদের জাতীয় স্বার্থে মিয়ানমার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখনই উদ্যোগ নিতে হবে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটলে একদিকে যেমন তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে অন্যদিকে আমাদের অর্থব্যবস্থাও চাঙ্গা হবে।
আরও পড়ুনঃ  প্রবন্ধ রচনা: মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার - সহজ শব্দে, সহজ বাক্যে

উপসংহার:

ITLS এর ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে বঙ্গোপোসাগরের উপর অধিকার ইস্যুতে ৩৮ বছরের অচলাবস্থার অবসান হয়েছে। এই রায়ের ফলে মিয়ানমার তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়নি, বাংলাদেশও তার অধিকার পেয়েছে। সংক্ষেপে, দুই দেশের মধ্যে অসামান্য সমস্যাটি সুন্দরভাবে সমাধান করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ

আমার মতামত: বীরত্বে গাঁথা ইতিহাসের এই রচনা পড়ে আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগারি কথা কারন এটি আমাদের জয়, বাংলাদেশের জয়। কেমন লাগলো রচনাটি তা আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link