বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা ২০০ শব্দের | বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা

বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা
Contents
বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনাভূমিকা:জন্ম:শিক্ষাজীবন:পরিবার:রাজনীতি:বঙ্গবন্ধু উপাধি: ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু:১৯৭০ এর নির্বাচন ও ১৯৭১ এর স্বাধীনতা: কেন তিনি জাতির জনক: ব্যক্তিত্ব:শোকাবহ ১৫ ই আগস্ট: কবি আক্ষেপ করে বলেছেন-উপসংহার:বাংলাভাষার প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদা শঙ্কর রায় যথার্থই লিখেছেন:বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনাভূমিকাঃ জন্মঃবঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলাঃউপসংহারঃ বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা সংক্ষিপ্তসূচনাঃজন্মঃবংশ পরিচয়ঃশিক্ষা জীবনঃরাজনৈতিক জীবনঃপ্রাচীন বাংলাঃপরাধীনতা থেকে পরাধীনতাঃপাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণঃ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনঃঐতিহাসিক ছয় দফাঃঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানঃসত্তরের নির্বাচনঃ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণঃস্বাধীনতার ঘোষণাঃমুজিবনগর সরকার গঠনঃমুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ঃজাতির জনক উপাধিঃস্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং শাসন ক্ষমতা গ্রহণঃবঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবরণঃউপসংহারঃআমাদের শেষ কথারচনা গুলি পড়ুনঃ 
বন্ধুরা আমরা আজ বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা ১০০০ শব্দের একটি প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলাদেশের কথা বললেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটি প্রাসঙ্গিক ভাবেই আসে। আমাদের প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায়, অ্যাসাইনমেন্টে রচনা লিখতে হয়।
যেহেতু তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি, তাই তাঁকে নিয়ে গবেষণা ও চর্চা হবে যুগ যুগ ধরে। চর্চার অভাবে আমরা তাঁর জীবনী সঠিকভাবে জানি না। সেই কারণে যখন বিভিন্ন পরীক্ষায় কিংবা অ্যাসাইনমেন্টে তাঁকে নিয়ে লিখতে বলা হয়, তখন অনেকেই পর্যাপ্ত তথ্যবহুল রচনা লিখতে পারি না। তাই আজ আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য উপস্থাপন করছি “বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা” শীর্ষক প্রবন্ধটি।
আশা করি, আপনারা বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা সম্পর্কে এই প্রবন্ধ থেকে অনেক ইতিহাসের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জানতে পারবেন, যার মাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রবন্ধ লেখার সামর্থ্য অর্জন করবেন। আমাদের ফেসবুক পেইজ লাইক করে পাশেই থাকুন। 

বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা

আপনি কি শেখ মুজিবুর রহমান কে চেনেন? শেখ মুজিবুর রহমান হলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়ক এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা। আপনি যদি বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন। আমাদের এই পোস্টটিতে শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনের অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স, জন্ম তথ্য এছাড়াও অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে জানতে নিচের টেবিলটি দেখুন: 

প্রকৃত নাম শেখ মুজিবুর রহমান
ডাকনাম বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশের জাতির পিতা
খোকা
জন্মতারিখ 17 মার্চ 1920 (বুধবার)
বয়স( মৃত্যুর সময়) 55  বছর
জন্মস্থান টুংগীপাড়া গ্রাম, গোপালগঞ্জ জেলা, বাংলা প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত( বর্তমান বাংলাদেশ)
 মৃত্যুর তারিখ 15 আগস্ট 1975
মৃত্যুবরণ এর স্থান বাংলাদেশ
 মৃত্যুর কারণ   গুপ্তহত্যা
জাতীয়তা ব্রিটিশ  ভারতীয়(1920-1947)
পাকিস্তানী(1947-1971)
বাংলাদেশী(1971-1975)
হোমটাউন টুঙ্গীপাড়া গ্রাম, গোপালগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ
রাশিচক্র   মীন রাশি
ধর্ম ইসলাম
পেশা রাজনীতিবিদ
 বিখ্যাত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মুখ্য ভূমিকা পালনকারী

ভূমিকা:

পাকিস্তান সরকারের শাসন এবং শােষণে যখন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জর্জরিত তখন জাতিকে মুক্তির পথদেখাতে এগিয়ে এসেছিলেন এক অবিসংবাদিত নেতা। যার মুক্তির ডাকে বাঙালিরা ঝাপিয়ে পড়েছিল সশস্ত্র সংগ্রামে,যার দেখানাে পথ ধরে অন্ধকার থেকে বাঙালি আলাের পথে এসেছে। আমরা পেয়েছি এক স্বাধীন রাষ্ট্র। তিনিইজাতিরজনক আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

জন্ম:

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম গােপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামের এক মুসলিম সম্রান্ত ৪পরিবারে। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে শেখমুজিব ছিলেন তৃতীয়।

শিক্ষাজীবন:

গ্রাম্য পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাসকরে তিনি গােপালগঞ্জ মিশনাকুিলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর তিনিকলকাতা ইসলামিয়া কলেজ হতে ১৯৪৪ সালে আই.এ পাস করেন। এ কলেজ থেকেই ১৯৪৭ সালে তিনি বি.এ. পাসকরেন। এরপর তিনি ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন কিন্তু এ কোর্স তিনি শেষ করতেপারেননি। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে ধর্মঘট ঘােষণা করলেবঙ্গবন্ধু ঐ ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানান। তারই ফলশ্রুতিতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বহিস্কৃত হন এবং ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।

পরিবার:

তিনি ১৯৩৮ সালে বেগম ফজিলাতুন্নেসাকে বিয়ে করেন। তাদের তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ।রাসেল এবং দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

রাজনীতি:

ছাত্র জীবনেই তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি ঘটে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি অষ্টম শ্রেণিরছাত্র থাকাকালীন সময়ে প্রথমবারের মতাে জেলে যান। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন। তিনি তাঁর স্নেহ, আনুকূল্য ও দিকনির্দেশনায় সক্রিয় রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে এগুতে থাকেন। কলকাতায় ছাত্রজীবনে তিনি নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ’, ‘নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেলেই পূর্ববঙ্গের মানুষের ওপর পাকিস্তানি শাসকদের শােষণ ও শাসন চলতেথাকে। পূর্ববাংলাকে মুক্ত করাই তখন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রধান লক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনপড়ার সময় থেকেই পাকিস্তানি শাসকদের শােষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরম্ভ করেন। ফলে ১৯৪৯ সালের ১১ মার্চ পাকিস্তনি সরকার তাঁকে গ্রেফতার করেন। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হলে তিনি যুগ্মসম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৯৫৪ সালে সাধারণ পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হলে নতুন প্রাদেশিক সরকার গঠিত হয়। তিনি ১৯৫৬ সালেপ্রাদেশিক সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। 

কিন্তু দেশে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারিহলে তিনি কারারুদ্ধ হন। হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যু হলে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যান। এসময় কলকাতার হলওয়েল মনুমেন্ট ভাঙার আন্দোলনেও শেখ মুজিবুর রহমান অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবকে রাষ্ট্র বিরােধী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয়। জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বাংলার ইতিহাসে ‘মেঘনা কার্টা’ হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা PDF | রচনা বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য

বঙ্গবন্ধু উপাধি: 

এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে দেশের সুসন্তানগণকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করা হয়।যেমন চিত্তরঞ্জনকে দেওয়া হয়েছিল দেশবন্ধু’ এবং ফজলুল হককে দেওয়া হয়েছিল শেরে বাংলা’ খেতাব। বঙ্গবন্ধু শব্দটির অর্থ হলাে বাংলার বন্ধু। বন্ধু তাকেই বলা যায় যে প্রয়ােজনের কথাটি বুঝতে পারে, তা মেটানাের জন্য চেষ্টা করে, বিপদে-আপদে পাশে থাকে। যখন পূর্ব পাকিস্তানের বড় বিপদ সেই বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ নির্দেশনা দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাইতাে তার নামকরণ বা উপাধি দেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধু।

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু:

১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। একই বছর মার্চের ২ তারিখ বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৫২ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি কারাগারে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে অনশন করেন বঙ্গবন্ধু।

১৯৭০ এর নির্বাচন ও ১৯৭১ এর স্বাধীনতা: 

১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিমা শাসকগােষ্ঠী আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে না দিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে শুরু করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার একটি ঘােষণাপত্র ওয়ারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান চৌধুরীর কাছে। পাঠান। এ ঘােষণাপত্রটি হান্নান চৌধুরী কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করেন। শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ ।

কেন তিনি জাতির জনক: 

বাংলা ভূ-খণ্ডের একটি সময়ে পরিচয় ছিলাে বিদেশি জাতির একটি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রহিসেবে। ইতিহাসের পাতায় এক নজর চোখ বুলালেই আমরা দেখতে পাই জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিটি পদেব্যর্থতা। শক, তুন, মগ, পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানিরা নানান সময় নানাভাবে আমাদের শােষণকরেছে। ভােগ করেছে আমাদের সম্পদ। শুধুমাত্র ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমরা বিদেশি পরাশক্তিকে রুখতে পেরেছিলাম।এর পিছনে সবটুকু ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান। তিনি নিজের স্বার্থকে সম্পূর্ণভাবে বিসর্জন দিয়ে লড়েছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। জাতি হিসেবে আমাদেরকে প্রথম বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই মহাপ্রাণ বাঙালি। তাই তিনি জাতির জনক।

ব্যক্তিত্ব:

বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, দৃঢ় মনােবল, সাহসী উদ্যোগ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম অনুপ্রেরণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এছাড়া যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর সাহসী উদ্যোগের পাশাপাশি সহানুভূতিশীল অনুভূতির পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি অবলীলায় গুরুতর অপরাধীকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আবার তাঁর ‘বজ্রকণ্ঠ’ অন্যায়, অবিচার, শােষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে সােচ্চার ছিল। অন্যদিকে, দেশবাসী তথা মানুষের জন্য সীমাহীন ভালােবাসা বিশ্ববাসীকে দারুণভাবে সাড়া দিয়েছিল। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক ‘জুলিও-কুরি’ শান্তির পদকে ভূষিত হন। কিন্তু তারপরেও কিছু কুলাঙ্গার, পাষণ্ড, নিষ্ঠুর, বর্বরের হাতে তাকে সপরিবারে প্রাণ দিতে হয়। এর চেয়ে বড়াে দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির জন্য আর কী হতে পারে।

শোকাবহ ১৫ ই আগস্ট: 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি কালাে অধ্যায়। দেশি ও বিদেশি চক্রান্তের ষড়যন্ত্রে ও কতিপয় উচ্চাভিলাষী স্বার্থান্বেষী ষড়যন্ত্রকারী বাঙালি সেনা অফিসারদের হাতে নৃসংশভাবেসপরিবারে নিহত হতে হলাে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পরে তাকেটুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাড়িতে কবর দেওয়া হয়। 

কবি আক্ষেপ করে বলেছেন-

“এসব কথা শুনে আমি

হারিয়ে ফেলি হুঁশ

যারা আমার মারল পিতা

তারা কি সত্যি মানুষ?”

উপসংহার:

বাংলার প্রাণপ্রিয় নেতা ও অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন শেখ মুজিব। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি তাঁর মহান আদর্শে বাঙালি জাতির জীবনে চির অম্লান হয়ে থাকবেন। তাইতাে বলা যায়, ব্যক্তি মুজিবের মৃত্যু হলেও মুজিবাদর্শের মৃত্যু নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চিরদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকুক এই প্রত্যাশা সকলের মাঝে। তার স্বপ্নের সােনার বাঙলা’ রূপায়নের মাধ্যমেই তাঁর স্মৃতি অমর হয়ে থাকবে। 

বাংলাভাষার প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদা শঙ্কর রায় যথার্থই লিখেছেন:

“যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা

গৌরী যমুনা বহমান

ততকাল রবে কীর্তি তােমার

শেখ মুজিবুর রহমান।”

বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা

ভূমিকাঃ 

হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা ইতিহাসের সঙ্গে যার নাম জড়িয়ে আছে, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা। তিনি শুধু বাংলাদেশের নন, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতাদের অন্যতম। দীর্ঘ সাধনার মধ্য দিয়ে তিনি অসীম মর্যাদা লাভ করেন।

জন্মঃ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ‘শেখ’ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান। মায়ের নাম সায়েরা খাতুন।

বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলাঃ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন এবং মা’র নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। টুঙ্গিপাড়ার শ্যামল পরিবেশে শেখ মুজিবের জীবন কাটে দুরন্তপনা করে। মধুমতির ঘোলাজলে গ্রামের ছেলেদের সাথে সাঁতার কাটা, দল বেঁধে হা-ডু-ড়, ফুটবল, ভলিবল খেলায় তিনি ছিলেন দস্যি বালকদের নেতা। তখন কে জানত এই দস্যি বালকদের নেতাই একদিন বিশ্বনেতা, বাঙালি জাতির পিতা হবেন?

১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এখানে বছর দেড়েক যেতে না যেতেই খোকা আক্রান্ত হন বেরিবেরি রোগে। এ রোগ থেকেই তার চোখে জটিল অসুখ দেখা দেয়। যার নাম ‘গ্লোফুমা।’ বাবা লুৎফর রহমান অস্থির হয়ে পড়েন।

আরও পড়ুনঃ  অধ্যবসায় রচনা খুবই সহজ ভাষায়, সকল ক্লাসের জন্য বংলা রচনা

শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে খোকাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিশেজ্ঞ ডা. টি আহমেদ তার চোখের সার্জারি করেন। গ্লোফমা থেকে সুস্থ হলেও চিকিৎসক তাঁকে চোখে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এই কারণে ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।

গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন৷ বাবুই পাখি বাসা কেমন করে গড়ে তোলে, মাছরাঙা কীভাবে ডুব দিয়ে মাছ ধরে, কোথায় দোয়েল পাখির বাসা, দোয়েল পাখির সুমধুর সুর এসব বঙ্গবন্ধুকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করত। আর তাই গ্রামের ছোট ছোট ছেলের সঙ্গে করে মাঠে-ঘাটে ঘুরে প্রকৃতির সাথে মিশে বেড়াতে তার ভালো লাগত। ছোট্ট শালিক পাখির ছানা, পাখির সুমধুর সুর এসব বঙ্গবন্ধুকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করত। আর তাই গ্রামের ছোট ছোট ছেলের সঙ্গে করে মাঠে-ঘাটে ঘুরে প্রকৃতির সাথে মিশে বেড়াতে তার ভালো লাগত। ছোট্ট শালিক পাখির ছানা, ময়না পাখির ছানা ধরে তাদের কথা বলা ও শিস দেওয়া শেখাতেন। বানর ও কুকুর পুষতেন, তারা তার কথামতো যা বলতেন তাই করত। ভাত, মাছের ঝোল আর সবজি ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রিয় খাবার। এই মহান নেতা শৈশবে রোগা হলে কী হবে, খেলাধুলার ব্যাপারে তাঁর ছিল দারুণ আগ্রহ। আর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। আর মজাটা হতো ফুটবল খেলতে গেলেই। এমনিতেই তো তিনি ছিলেন ভীষণ রোগা, তাই যখন তিনি বলে জোরে কিক করতেন, নিজেও উল্টো গড়িয়ে পড়তেন!

অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, আমি খেলাধুলাও করতাম। ফুটবল, ভলিবল ও হকি খেলতাম। খুব ভালো খেলোয়াড় ছিলাম না। তবুও স্কুলের টিমের মধ্যে ভালো অবস্থান ছিল। এই সময় আমার রাজনীতির খেয়াল তত ছিল না ৷

একবার তার গ্রামের চাষিদের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকদের অনেক বাড়িতেই দু’বেলা ভাত রান্না বন্ধ হয়ে যায়। সারা গ্রামেই প্রায়-দুর্ভিক্ষাবস্থা নিয়ে চাপা গুঞ্জন কিশোর মুজিব এ রকম পরিস্থিতিতে দুঃখ-ভারাক্রান্ত। একটা কিছু করার জন্য তিনি ছটফট করছিলেন। পরে নিজের পিতাকে তিনি তাদের গোলা থেকে বিপন্ন কৃষকদের মধ্যে ধান বিতরণের জন্য অনুরোধ জানালেন। তাদের নিজেদের ধানের মজুদ কেমন, এই অনুরোধ তার বাবা রাখতে পারবেন কিনা, সেসব তিনি ভাবেননি। কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখার চিন্তাটিই ছিল তখন তার কাছে মুখ্য।

তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক যখন গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনিস্টিউট মিশন স্কুল পরিদর্শনে আসেন তখন তাঁর সাথে ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। শেখ মুজিব যখন মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সাথে বাদানুবাদ করছিলেন। শেখ মুজিবের সৎসাহস,কর্তব্যবোধ তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করে। পরে ডাক বাংলোতে ফেরেই তিনি শেখ মুজিবকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাঁর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেন এবং কলকাতায় তাঁর সাথে দেখা করতে বললেন। পরবর্তীতে তিঁনি এই হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর হাত ধরেই শেখ মুজিব রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

উপসংহারঃ 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। দেশের মানুষের হৃদয়ে তাঁর স্থান ছিল সংগ্রাম ও স্বাধীনতার প্রেরণা হিসেবে। তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এ জন্য তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। পৃথিবীতে বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন তিনি স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন।

বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা সংক্ষিপ্ত
বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা সংক্ষিপ্ত

বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা সংক্ষিপ্ত

সূচনাঃ

বাঙালি জাতির ইতিহাসে অনেক জাতীয় নেতার আবির্ভাব ঘটেছে।বাঙালী জাতির এই অবিস্মরণীয় ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তারা আজীবন আমাদের স্মৃতিতে গেঁথে থাকবেন।তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।তিনি আমাদের জাতির পিতা,জাতির অবিসংবাদিত নেতা,আমাদের স্বাধীন দেশের মহান স্থপতি।দেশ ও জাতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাঙালি জাতি অর্জন করেছে সুদীর্ঘ লালিত স্বপ্নের স্বাধীনতা।

জন্মঃ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।মধুমতি তীর-সংলগ্ন এই ছায়া ডাকা গ্রামে পিতা-মাতার কোল আলো করে জন্ম নিল একটি ছোট্ট শিশু; যার নাম রাখা হয় শেখ মুজিবুর রহমান।তিনি ছিলেন পরিবারের জ্যৈষ্ঠ সন্তান।বাবা-মা আদর করে তাকে “খোকা” বলে ডাকতেন।

বংশ পরিচয়ঃ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার প্রসিদ্ধ “শেখ পরিবারে” জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবার নাম শেখ লুৎফুর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুন।বাবা লুৎফুর রহমান পেশায় ছিলেন একজন দেওয়ানি আদালতের সেরেস্তাদার।

শিক্ষা জীবনঃ

পরিবারের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুর লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়।অতঃপর ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়স থেকে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের সূচনা ঘটে।কিন্তু একই স্কুলে তার পড়াশোনা ছিল না।মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন।এবং তার পড়াশোনা প্রায় চার বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।এ সময় তার গৃহশিক্ষক ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আবদুল হামিদ মাস্টার।ধারণা করা হয়, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে যোগদানের ক্ষেত্রে গৃহশিক্ষকের প্রভাব বিদ্যমান ছিল।অতঃপর ১৯৩৭ সালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলে ভর্তি হন।এবং ১৯৪২ সালে এই স্কুল থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।পরবর্তী শিক্ষা জীবন শুরু হয় তার কলকাতা মহানগরে।১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।কিন্তু ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘটকে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেন।বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা জীবন এভাবেই অসমাপ্ত থেকে যায়।

রাজনৈতিক জীবনঃ

ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে যুক্ত হন।পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।১৯৪৮ সাল থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ।ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের দায়ে তখন বঙ্গবন্ধুকে কারাবন্দী করা হয়। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।এছাড়া ১৯৬৬ সালে ছয় দফাকে কেন্দ্র করে তার রাজনৈতিক খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে তাকে আবার কারাবন্দি করা হয়।এছাড়াও ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে একটি মিথ্যা মামলা সাজিয়ে বঙ্গবন্ধুকে পুনরায় কারাবন্দি করা হয়।কিন্তু পূর্ব বাংলার জনগণ এর তীব্র প্রতিবাদ করে।ফলে বঙ্গবন্ধুর উপর থেকে মামলা উঠিয়ে নেওয়া হয়।বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি ছিলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী।

আরও পড়ুনঃ  সাহিত্যের সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা শিখুন খুব সহজে

প্রাচীন বাংলাঃ

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই বাংলার মানুষ একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বাস করত।তবে প্রাচীনকালে পুরো বাংলা জুড়ে একক কোনো রাষ্ট্র গড়ে উঠেনি।তখন বাংলা বা বাংলাদেশ নামক কোনো দেশের অস্তিত্বই ছিল না।ধারণা করা হয়,তখনকার সময়ে গৌড়, বঙ্গ,পুন্ড্র,হরিকেল,সমতট,বরেন্দ্র প্রভৃতি জনপদ ছিলএবং বাঙালীর যাত্রা এইসব জনপদের মধ্যে দিয়েই শুরু হয়।এইসব জনপদে বিভিন্ন শাসক যে যার মতো রাজ্য শাসন করতেন।মূলত বিচ্ছিন্নভাবেই বাংলার ইতিহাসের যাত্রা শুরু হয়েছে

পরাধীনতা থেকে পরাধীনতাঃ

ঐশ্বর্যশালী বাংলার প্রতি বিদেশীদের ছিল লোলুপ দৃষ্টি।তাই বারংবার বাংলা একের পর এক বৈদেশিক ক্ষমতার হাতে বন্দি হয়েছে।প্রাচীন বাংলায় মৌর্য,গুপ্ত,সেন এবং পাল সম্রাটরা রাজত্ব করেছেন।মুসলিম শাসনামলে ১৩৫২ সালে প্রথমবারের মতো সমগ্র জনপদ একত্রে বাংলা নামে পরিচিত হয়।মুসলিম শাসনের পর সমগ্র বাংলা ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায়।ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের পর ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাজ্যের সৃষ্টি হয়।পাকিস্তান বিভক্ত হয় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে।

পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণঃ

পাকিস্তান গোড়া হতেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যনীতি অনুসরণ করে আসছিল।রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য ক্রমাগত ত্বরান্বিত হতে থাকে।পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের ফলে পূর্ব বাংলার সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতে থাকে।পূর্ব বাংলার অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান পরিণত হয় সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা রাষ্ট্রে।অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান তথা সোনার বাংলা পরিণত হয় শ্মশানে।

১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনঃ

পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সোচ্চার।১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ গঠন করেন।এ বছরই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে এবং ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের দায়ে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়।তাছাড়া ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করেন।

ঐতিহাসিক ছয় দফাঃ

বাঙালির স্বাধিকারের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।এটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক পরোক্ষ প্রতিবাদস্বরুপ এবং বাঙালি জাতির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম এবং যৌক্তিক প্রস্তাবনা।এ কারণে ছয় দফাকে বলা হয় বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।ছয় দফার এই আন্দোলনকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে ষড়যন্ত্রমূলক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানঃ

এ সময় দেশের ছাত্রসমাজ ১১ দফা কর্মসূচি নিয়ে গণআন্দোলনে শরিক হয়।আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন।বন্দিদশা থেকে মুক্তিলাভের পর ১৯৬৯ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল ছাত্রজনতার সামনে তাকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।এবার আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রুপ নেয়।

সত্তরের নির্বাচনঃ

ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করে ১৯৭০ সালে নির্বাচনের ঘোষণা দেন।নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন লাভ করে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন।এ অভূতপূর্বে বিজয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণঃ

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।তৎকালীন সময়ে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণ দেন।এ ভাষণ ছিল মূলত বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের এক দিক-নির্দেশনা।তিনি সেদিন বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন:-

এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম

এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।

স্বাধীনতার ঘোষণাঃ

২৫ শে মার্চ কালোরাতে পাকবাহিনী নিরীহ বাঙালিদের উপর “অপারেশন সার্চলাইট” নামক এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সূচনা ঘটায়।এ ঘটনার পর ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।তিনি বলেন:-

This is may be my last message.From today,bangladesh is independent.
এর কিছুক্ষণ পরেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।

মুজিবনগর সরকার গঠনঃ

১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়।১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে।মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলাকে কেন্দ্র করে এই সরকার গঠন করা হয়।মূলত মুক্তিযুদ্ধকে সুসংহত করা এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ঃ

১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানি হানাদারদের দখলে।কাজেই দেশকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে দেশের সর্বস্তরের জনগণ ঝাপিয়ে পড়ে এই গণযুদ্ধে।ছাত্র-শিক্ষক,কৃষক-শ্রমিক,শিল্পী-সাহিত্যিক,বুদ্ধিজীবীসহ সকল স্তরের মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি।

জাতির জনক উপাধিঃ

১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ছাত্রলীগ আয়োজিত পল্টনের বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন বাংলার “জাতির পিতা” হিসেবে প্রথম অভিহিত করা হয়।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং শাসন ক্ষমতা গ্রহণঃ

স্বাধীনতার পর ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা স্বদেশের মাটিতে বীরের বেশে প্রত্যাবর্তন করেন।সেদিনও লাখ লাখ জনতা তাকে আনন্দ-অশ্রু দিয়ে বাংলার রক্তাক্ত মাটিতে স্বাগত জানায়।দেশের মাটিতে নেমেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি বদ্ধ পরিকর হন।কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনা করতে পেরেছেন মাত্র সাড়ে তিন বছর।

বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবরণঃ

বঙ্গবন্ধু তখন সমগ্র দেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু অপচক্র সেই সুযোগ তাকে দেয়নি।দেশি-বিদেশী স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রে কতিপয় সেনা কর্মকর্তার দ্বারা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন।

উপসংহারঃ

বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ।তিনি জীবনের শুরু থেকেই বাংলা এবং বাংলার মানুষকে গভীরভাবে ভালবেসে গিয়েছেন।তিনি অত্যাচার,শাসন-শোষণের পরেও অবিচল থেকেছেন বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার সংকল্পে।তাইতো বাঙালি জাতি তাকে উপাধি দিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে।তিনি বাংলার মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন।কবির ভাষায়:-

যতদিন রবে পদ্মা,মেঘনা,গৌরী,যমুনা বহমান

ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় শিক্ষার্থীরা আজ আমরা এই আর্টিক্যালে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা সম্পর্কে জানলাম। আজকের বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা ১০০০ শব্দ যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে ফেসবুকে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এরকম নতুন নতুন লেখা পেতে আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ সবাইকে।

রচনা গুলি পড়ুনঃ 

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link