শিক্ষায় পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা – বাংলা রচনা

পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা
বন্ধুরা আশাকরি ভালোই আছেন। আজকে আপনারা অনেকেই পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা লিখে সার্চ করেছিলেন।ফলে আমাদের আজকের শিক্ষায় গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা পোষ্টে এসে পৌছেছেন। আপনারা একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। এখান থেকে আপনারা পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা শিখতে ও লিখতে পারবেন। লাইব্রেরি হচ্ছে সামাজিক উন্নয়নের বাহন। একটি জাতির মেধা, চিন্তা, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঞ্চয় ও লালনকারী হিসেবে গ্রন্থাগার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনসাধারণের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে গ্রন্থাগারের রয়েছে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা। তাই গ্রন্থাগারকে ‘জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়‘ বলা হয়। 
ইংরেজিতে একটা কথা আছে- Education is the backbone of a nation। মেরুদণ্ড ছাড়া যেমন কোনো মানুষ চলতে পারে না, তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা হল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাফল্যের জন্য গ্রন্থাগার একটি সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারকে বলা হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র। তাই আজকে আমরা নিয়ে চলে এসেছি পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি রচনা। 

  পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা  

সূচনাঃ 

মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব।তার অনন্ত জিজ্ঞাসা,অসীম কৌতুহল।তার এই সকল প্রশ্নের সমাধান আর অন্তহীন জ্ঞান ধরে রাখে বই।শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে মানুষের সকল জ্ঞান জমা হয়ে রয়েছে বইয়ের ভেতর।অন্তহীন জ্ঞানের উৎস হলো বই,আর সেই বইয়ের আবাসস্থল হলো পাঠাগার।মানুষের হাজার বছরের ইতিহাস পুঞ্জিভূত হয়ে রয়েছে পাঠাগারের একেকটি তাঁকের ভেতর।পাঠাগার হলো সময়ের খেয়াঘাট,যার মাধ্যমে মানুষ সময়ের পাতায় ভ্রমণ করতে পারে।
এই বইয়ের ভান্ডারেযেন সঞ্চিত হয়ে আছে মানব সভ্যতার প্রতিটি হৃদস্পন্দন।প্রাচীন শিলালিপি থেকে আধুনিক লিপির গ্রন্থিক স্থান হলো পাঠাগার।একটি গ্রন্থাগার মানুষের জীবন পাল্টে দেবার জন্য যথেষ্ট।গ্রন্থ কিংবা গ্রন্থাগার মানুষের মনের খোরাক জোগায়।গ্রন্থাগার হলো শ্রেষ্ঠ আত্মীয় যার সাথে সম্পর্ক সর্বদাই ভালো থাকে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,’’এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে,প্রবাহ স্থির হইয়া আছে,মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পরিয়া আছে।“
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা ২০ পয়েন্ট
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা ২০ পয়েন্ট

 

পাঠাগার কীঃ 

পাঠাগার হলো বই,পুস্তিকা,ম্যাগাজিন,সংবাদপত্র ও অন্যান্য তথ্যসামগ্রীর একটি সংগ্রহশালা যেখানে পাঠক গ্রন্থপাঠ,গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধান করতে পারেন।পাঠাগারের সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হয় ‘পাঠ+আগার’ অর্থাৎ পাঠাগার হলো পাঠ করার সামগ্রী সজ্জিত আগার বা স্থান।অক্সফোর্ড ডিক্সনারির মতে পাঠাগার হলো,’’ A building or room containing collections of books, periodicals, and sometimes films and recorded music for use or borrowing by the public or the members of an institution.’’ শঙ্খের মধ্য দিয়ে যেমন সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়,পাঠাগারের মধ্য দিয়ে তেমনি হৃদয়ের উত্থান-পতনের শব্দ শোনা যায়।পাঠক এখানে স্পর্শ পায় সভ্যতার শ্বাশ্বত ধারার,অনুভব করে মহাসমুদ্রের শত বছরের মহাকল্লোল,শুনতে পায় জগতের এক মহা ঐকতানের সুরগ্রন্থাগারকে তুলনা করা হয় শব্দহীন মহাসমুদ্রের সাথেএটি অতীত,বর্তমান ও ভবিশ্যতের এক নীরব সাক্ষী

পাঠাগারের ইতিহাসঃ

পাঠাগারের ইতিহাস বেশ পুরনোআজকের পৃথিবীকে জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করেছে যে পাঠাগার তা প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাসমুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের অনেক আগে থেকেই পাঠাগারের প্রচলন ছিলতখন মানুষের জ্ঞান সংরক্ষিত হতো পাথর,পোড়া মাটি,পাহাড়ের গাঁ,প্যাপিরাস,ভূর্জপত্র বা চামড়ায়।আর এগুলো সংরক্ষণ করা হতো লেখকের নিজ বাড়িতে,মন্দির,উপাসনালয় বা রাজকীয় ভবনে।
মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া,ইরাকের বাগদাদ,দামেস্ক,প্রাচীন গ্রিস ও রোমে প্রাচীন পাঠাগারের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। ৫০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মিশরে পাঠাগারের অস্তিত্ব ছিল।ভারতে প্রাচীনকালে পন্ডিতদের ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল।উপমহাদেশের তক্ষলীলায় এবং নালন্দায় সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে উঠেছিল। আব্বাসীয় ও উমাইয়া শাসনামলে ‘দারুল হকিমা’ নামক গ্রন্থাগার ইউরোপকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করেছে।সমকালীন মিশরের ‘বাইতুল হিকমা’ ও অনুরূপ ভূমিকা পালন করেছে।এছাড়া বাগদাদ,আসিরিয়া,চীন,তিব্বতসহ অনেক স্থানে পৃথিবী বিখ্যাত পাঠাগারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।আর এভাবে ক্রমেই চলে এসেছে আধুনিক পাঠাগার
 
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা-বাংলা রচনা|শিক্ষায় গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা
আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি
আরও পড়ুনঃ  পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য রচনা | পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য

পাঠাগারের বিকাশঃ

সেই প্রাচীন লিপি পড়ার পাঠাগারের যুগ পরিবর্তিত হয়েছে।আজ পাঠাগার অনেক বেশি আধুনিক হয়েছে।আর,বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে তা পাঠাগারের আধুনিকায়নেও ভূমিকা রাখছে।আর,সমাজ সংস্কারক বা চিন্তাবিদরাও এটা বুঝেছেন যে পাঠাগারের আধুনিকায়ন ছাড়া সমাজের আধুনিকায়ন সম্ভব নয়।সেই সুবাদেই স্থানে স্থানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠছে অসংখ্য পাঠাগার।
আমাদের দেশও তার সাথে তাল মিলিয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহনের চেষ্টা চালাচ্ছে।আমাদের দেশে ঢাকায় ‘কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে।এই পাঠাগারের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শতাধিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এছাড়া,ঢাকায় বাংলা একাডেমী লাইব্রেরি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি,জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র,এশিয়াটিক সোসাইটি লাইব্রেরি,ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি,রাজশাহীর বরেন্দ্র মিউজিয়াম,খুলনার উমেশচন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার,ঢাকার বেঙ্গল বুক সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে সব স্থানে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার থেকে ভ্রাম্যমান পাঠাগার স্থাপন করাইয় বেশি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।তাতে পাঠক তার বাসা থেকে বের হয়েই তার কাঙ্খিত বই পেয়ে যেতে পারে।বিভিন্ন দেশে বর্তমানে তাই এই ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে মানুষের জ্ঞান পিপাসা চরিতার্থ করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের প্রচলন চালু করে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা-বাংলা রচনা|শিক্ষায় গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি

 

পাঠাগারের শ্রেণিবিভাগঃ

বিশ্বে নানাধরণের পাঠাগার রয়েছে।ব্যাক্তিগত পাঠাগারের ধারণা আজ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পাঠাগার গড়ে তুলেছে।নিম্নে এর কিছু শ্রেণিবিভাগ তুলে ধরা হলোঃ
 
ক)গণগ্রন্থাগারঃসাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত পাঠাগারকে গণগ্রন্থাগার বলা হয়।এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ তাদের জ্ঞানের চাহিদা মেটাতে পারে।
 
খ)কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারঃসাধারণত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকশিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চমানসম্পন্ন গ্রন্থাগার থাকে। যেখানে বহু মূল্যবান গ্রন্থ সংরক্ষিত থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাগার এরকম সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার
 
গ) গবেষণা পাঠাগার: বিশেষ কোনো বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজনে যে পাঠাগার খোলা হয় তাই হলো গবেষণা পাঠাগারঢাকায় বিজ্ঞান বিষয়ক এমন পাঠাগার হলো ম্যান্সডক লাইব্রেরি
 
ঘ) বিশেষ পাঠাগার: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন যে পাঠাগার পরিচালনা করে তাকে বিশেষ পাঠাগার বলে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এরকম গ্রন্থাগার রয়েছে।
 
ঙ) ভ্রাম্যমান পাঠাগার: বিভিন্ন দেশে গাড়িতে বহনযোগ্য গ্রন্থাগার রয়েছে, যা পাঠকের কাছে গ্রন্থ পৌঁছে দেয়। বাংলাদেশে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রএমন পাঠাগার গড়ে তুলেছে। ভেনিজুয়েলার মমবয়বিশ্ববিদ্যালয় খচ্চরে ভ্রাম্যমান গ্রন্থাগার বানিয়ে পাহাড়ি জনপদে বই সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
 
চ)রাষ্ট্রীয় পাঠাগারঃরাষ্ট্রের জনপদের কাছে জ্ঞান পৌছে দেবার জন্য যে পাঠাগার রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত হয় তাকে রাষ্ট্রীয় পাঠাগার বলে।এ ধরণের পাঠাগার জনগনের অনেক মূল্যবান কাজে সাহায্য করে দেশকে একধাপ উপরে নিয়ে যায়।

পাঠাগারের বৈশিষ্ট্যঃ

পাঠাগার হলো সময়ের পাতা থেকে পাতায় ভ্রমণের একমাত্র সেতু। পাঠাগারের জ্ঞান নদীর মতো দেশ, কাল, সীমানার গন্ডি পেরিয়ে যায়। প্রবাহিত হয় হৃদয় থেকে হৃদয়ে। পাঠাগার তাই অজস্র মানুষের শব্দহীন মিলনের মুক্তমঞ্চ। জ্ঞানী যেখানে পায় জ্ঞানের অমিয় সুধা, ভাবুক খুঁজে পায় ভাবের টলমলে দীঘি, চিন্তাবিদ পায় চিন্তার বহুমুখী খোরাক।
পাঠাগারে রয়েছে সহস্র বছর ধরে জমে থাকা প্রশ্নের উত্তর। হৃদয় ও মনের এমন রঙিন পাঠশালা আর কোথাও নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার লাইব্রেরীপ্রবন্ধে বলেছে,’’লাইব্রেরীর মধ্যে আমরা অজস্র পথের চৌমাথার উপর দাঁড়াইয়া আছি। কোনো পথ অনন্ত সমুদ্রে গিয়াছে, কোনো পথ অনন্ত শিখরে উঠিয়াছে, কোনো পথ মানব হৃদয়ের অতল স্পর্শে নামিয়াছে।
যে যেদিকে ধাবমান হও কোথাও বাধা পাইবে না‘’ মানুষ পাঠাগারের ভিতর খুঁজে পায় তার সকল জিজ্ঞাসার উত্তর। অনন্তকাল ধরে পাঠাগার মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নীরবেনিভৃতে।আর তার এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের যুগ যুগ ধরে পাঠাগার মানবহৃদয় দখল করে শক্তিশালী ভিত গড়ে তুলেছে।

পাঠাগারের সুবিধাঃ 

জ্ঞানের যেমন সীমা নেই,তেমনি পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তারও কোন সীমারেখা নেই।    সমৃদ্ধ পাঠাগার যেন জ্ঞানের নীরব সমুদ্র। তৃষিত পাঠকের জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণ করাই পাঠাগারের উদ্দেশ্য। পাঠাগার হলো কালান্তরের সকল গ্রন্থের মহাসম্মেলন। যেখানে এক হয়ে গেছে অতীত,ভবিষ্যৎ আর বর্তমান। সন্ধানী হৃদয় পাঠাগারে অতীতবর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের সেতু রচনা করে। একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, একটি জাতির উন্নতির সোপান।
পাঠাগার নারী, পুরুষ, বয়সের কোনো বাঁধা রাখেনি। যে কেউ চাইলে এখানে এসে জ্ঞানের অতল সমুদ্রে অবগাহন করতে পারে। পাঠাগারের সারি সারি তাকে জমে আছে সহস্রাব্দের কথামালা। পাঠাগারের শব্দহীন কারাগারে বন্দী প্রতিটি লেখাই  সভ্যতার আলোকবর্তিকা বহন করে আসছে যুগ যুগ ধরে।ভালোর সুবিধা যেমন প্রায়ই মুষ্টিমেয় লোকেরা নেয়,কিন্তু পাঠাগারের সুবিধা দেশ-কালের সীমারেখা ত্যাগ করের বিশ্বের দিকে হাত বাড়িয়ে জ্ঞানের রাজ্যে হাতছানি দিয়ে ডাকে।সে যে কী মধুর তা শুধুই সেই প্রকৃত পাঠকেরাই বুঝে থাকেন।

বিখ্যাত পাঠাগারসমূহঃ

সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ ধনসম্পদের পাশাপাশি গ্রন্থ সংগ্রহের মতো মহৎ কাজ করে আসছে। মানুষের এই মহৎ উদ্যোগের কারণে পৃথিবীর নানা প্রান্তে গড়ে উঠেছে উন্নত সব পাঠাগারবিখ্যাত পাঠাগারসমূহের মধ্যে প্রথমেই আসে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের নাম। আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত এই লাইব্রেরিতে আছে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ বইয়ের এক বিশাল সমাহার।
লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামও পৃথিবীর বিখ্যাত লাইব্রেরির মধ্যে অন্যতম। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বডলিন লাইব্রেরিতে রয়েছে ১ কোটিরও বেশি গ্রন্থ। এছাড়া পৃথিবীর প্রাচীনতম লাইব্রেরির মধ্যে রয়েছে ভ্যাটিকান লাইব্রেরিএ ছাড়াও ফ্রান্সের বিবলিওথিক লাইব্রেরি, মস্কোর লেনিন লাইব্রেরি ও কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি উল্লেখযোগ্য। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিও পৃথিবীর প্রাচীন লাইব্রেরির মধ্যে অন্যতম। যা এক সময় পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যেও ছিল।

পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তাঃ

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের যেমন খাবার দরকার, তেমনি জীবনকে গতিময় করার জন্য দরকার জ্ঞান।কারণ জ্ঞান হলো মনের খোরাক বা খাবার। জ্ঞানের আঁধার হলো বই আর বইয়ের আবাসস্থল হলো পাঠাগারপ্রতিটা সমাজে যেমন উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল দরকার তেমনি পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে।
পাঠাগার মানুষের বয়স, রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করে থাকে। আর তাই সচেতন মানুষ মাত্রই পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। পৃথিবীর যতো মহান মনীষী আছেন তাদের সবাই জীবনের একটা বড় সময় পাঠাগারে কাটিয়েছেন। সাহিত্যশিল্প, বিজ্ঞান, সংস্কৃতিসহ সব ধরণের জ্ঞানের আঁধার হতে পারে একটি গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মানদন্ড। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া জাতীয় চেতনার জাগরণ হয় না।
আর তাই গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পৃথিবীর বহুদেশ পাঠকের চাহিদা পূরণের জন্য গড়ে তুলেছে অগণিত গ্রন্থাগার। শিক্ষার আলো বঞ্চিত কোনো জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। শিক্ষার বাতিঘর বলা হয় গ্রন্থাগারকে। গ্রন্থাগার ছাড়া কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র তার নাগরিককে পরিপূর্ণ শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা তাই প্রতিটি সমাজে অনিবার্য।পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেছেন,’’গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে সংহতি যা দেশ গড়া কিংবা রক্ষার কাজে অমূল্য অবদান।‘’বই পড়ার যে আনন্দ মানুষের মনে,তাকে জাগ্রত করে তুলতে আজ সব ধরণের পাঠাগারের ব্যপক প্রসার প্রয়োজন।

উপসংহারঃ

পাঠাগার হলো মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ সম্পদ।আর,সেই সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে তার প্রকৃত উপকার ভোগ করা যায়জীবনে পরিপূর্ণতার জন্য জ্ঞানের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণ করতে রয়েছে পাঠাগারএকটি সমাজের রূপরেখা বদলে দিতে পারে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগারমনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পাঠাগারের অবদান অনস্বীকার্য। তাই শহরের পাশাপাশি প্রতিটি গ্রামে-মহল্লায় পাঠাগার গড়ে তোলা প্রয়োজন।যাতে আমরা খুব শীঘ্রই লাভ করতে পারি জ্ঞানী এক সমৃদ্ধ জাতি,যার জ্ঞানার্জনের অন্যতম পথ ছিল পাঠাগার।
 
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা-বাংলা রচনা|শিক্ষায় গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা
Liabrary of Congress
আরও পড়ুনঃ  বাংলা নববর্ষ রচনা 15 পয়েন্ট

শেষ কথা

শিক্ষা একটি বিস্তৃত শব্দ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক বিকাশই শিক্ষা। শিক্ষার লক্ষ্য ব্যক্তি কল্যাণ, ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং তাত্ত্বিক উন্নতি সাধন। একটি জাতি উন্নত বা অনুন্নত কিনা তার মান হল শিক্ষা। যুগে যুগে যে জাতি শিক্ষার আলো পেয়েছে সে জাতি উন্নত জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মূলত: লাইব্রেরি হল তথ্যের ভান্ডার। তাই শিক্ষার সহায়তায় লাইব্রেরির কোনো বিকল্প নেই। আশা করি আজকের আমাদের পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা টি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে শেয়ার ও কমেন্ট করবেন দয়াকরে?। 

আরও পড়ুনঃ  প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান রচনা | প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান রচনা class 10

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link