সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এর সূত্র – ১০০% কমন

সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এর সূত্র

আমরা সবাই অংক,গণিত যাই বলেন না কেনো করে থাকি। আপনাদের সুভিধার্থে আমরা আজ আপনাদের জন্য নিয়ে হাজির হলাম সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এর সূত্র নিয়ে।

সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এর সূত্র

কিভাবে সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চলেছি। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন বাহু ভেদে এবং কোণ ভেদে ত্রিভুজ 6 প্রকারের হয়ে থাকে। তার মধ্যে সমবাহু ত্রিভুজ একটি।

সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র কি? এই প্রশ্নটিই পরীক্ষায় আসে। এজন্য আমাদের প্রথমে জানতে হবে সমবাহু ত্রিভুজ কি? কেননা ত্রিভুজ গুলি আলাদা আলাদা হতে পারে। তবে বাহু ভেদে ত্রিভুজ তিন প্রকার যথা সমবাহু ত্রিভুজ, সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ এবং বিষমবাহু ত্রিভুজ। যে ত্রিভুজের তিনটি বাহু সমান হয় তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে। আবার যে ত্রিভুজের ২টি বাহু সমান একটি বাহু সমান নয় তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে। যে ত্রিভুজের তিনটি বাহুর মধ্যে কোনভাবেই একে অপরের সমান হয় না তাকে বিষমবাহু ত্রিভুজ বলে।

সমবাহু ত্রিভুজ কাকে বলে?

যে ত্রিভুজের সবগুলো বা প্রত্যেকটি বাহুর দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, ত্রিভুজের কোণগুলোর পরিমাপ পরস্পর সমান হলে তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে। অর্থাৎ, যে ত্রিভুজের প্রত্যেকটি কোণের মান ৬০০ তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে।

যেহেতু আমরা জানি যে, ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি ১৮০০ এবং প্রত্যেকটি কোণের মান সমান, তাই এই ত্রিভুজের প্রত্যেকটি কোণের মান ৬০০। এটি তিন বাহুবিশিষ্ট একটি সুষম বহুভুজ। সুতরাং, এটি একটি সুষম ত্রিভুজ। সমবাহু ত্রিভুজের শীর্ষ থেকে ভূমির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য{\frac{\sqrt{3}}{2} a}যেখানে a হলো সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য।

আপনাদের সিবিধার্থে আমি সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এর সূত্র ভিডিও যুক্ত করে দিলামঃ

সমবাহু ত্রিভুজের পরিসীমার সূত্র

পরিসীমার সূত্র জানার আগে চলুন জেনে নেই পরিসীমা কি?

পরিসীমা কাকে বলে?

পরিসীমা মানে হল দুই মাত্রা বা পরিসরের একটি আকৃতির চারপাশের পথের মোট দৈর্ঘ্য। অর্থাৎ সীমা নির্ধারক রেখাংশ বা রেখাংশসমূহের দৈর্ঘ্যের সমষ্টিকে পরিসীমা বলে। যেমন:

  1. আমরা জানি, আয়তক্ষেত্রের ৪ টি রেখাংশ বা রেখা। এদের মধ্যে দুইটি দৈর্ঘ্য নির্দেশ করে এবং বাকি ২ টি প্রস্থ। সুতরাং, আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা হবে = (দৈর্ঘ্য+ দৈর্ঘ্য + প্রস্থ + প্রস্থ) = ২(দৈর্ঘ্য × প্ৰস্থ)।
  2. বর্গক্ষেত্রের রেখাংশ ৪ টি। তবে এর ৪ টি রেখাংশ বা বাহুই সমান। তাই বর্গক্ষেত্রের পরিসীমা =৪\timesএক বাহুর দৈর্ঘ্য
  3. ত্রিভুজের রেখাংশ ৩ টি। সুতরাং, ত্রিভুজের পরিসীমা = তিন বাহুর দৈর্ঘ্যের যোগফল।
আরও পড়ুনঃ  শ্রেণিসংখ্যা কাকে বলা হয় বিস্তারিত জেনে নিন, পরিসংখ্যান (Statistics)

বিঃদ্রঃ বৃত্তের ক্ষেত্রে এই পরিসীমাকে পরিধি বলা হয়

বাস্তবক্ষেত্রে, গণিতের এই পরিসীমার যথেষ্ট প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। যেমন, একটি খেলার মাঠের পরিসীমা নির্ণয় করে মাঠের চারিদিকে দেয়া ফেন্সিঙের মোট দৈর্ঘ্য নির্ণয় করা যায় এবং সেই অনুপাতে ফেন্সিং কেনার খরচের হিসাব করা যায়।

মনে করি, △ABC এর AB = BC = AC = a একক

সুতরাং পরিসীমা P হলে,

P = (a + a + a) একক

∴ P = 3a একক

সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এর সূত্র

যেহেতু সমবাহু ত্রিভুজের বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান। তাই বাহুভেদে সমবাহু ত্রিভুজ কে একটি সুষম ত্রিভুজ বলা হয়ে থাকে।

একারণে বিষমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র থেকে খুব সহজে সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র প্রতিপাদন করা যায়। বিষমবাহু ত্রিভুজের বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য a, b ও c একক হলে এবং সবগুলো বাহুর স্থলে a বসালে সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র প্রতিপাদিত হয়।

সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র কি
সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র কি

এছাড়াও, সমবাহু ত্রিভুজ একটি সুষম বহুভুজ ত্রিভুজ বলে আমরা জানি, যার প্রত্যেকটি কোণের পরিমাপ ৬০°।

এ কারণে সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র থেকেও সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র সহজে নির্ণয় করা যায়।

মনেকরি, △ABC একটি সমবাহু ত্রিভুজ যার প্রত্যেকটি বাহুর দৈর্ঘ্য a একক এবং ক্ষেত্রফল A বর্গ একক। তাহলে সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র, A = √34 a2 বর্গ একক।

সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক এবং ক্ষেত্রফল A বর্গ একক হলে,
A = √34 a2 বর্গ একক।

ত্রিভুজ ক্ষেত্রের ভূমি এবং উচ্চতা মেপে এর ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।

তাহলে আমরা সমবাহু ত্রিভুজের উচ্চতা বের করতে পারলে এর ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে পারব। সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল হচ্ছে = √3a2/4 বর্গ একক।

আরও পড়ুনঃ  শ্রেণিসংখ্যা কাকে বলা হয় বিস্তারিত জেনে নিন, পরিসংখ্যান (Statistics)

ত্রিভুজ সংক্রান্ত আরো তথ্য হলো ত্রিভুজের একটি বাহুকে বর্ধিত করলে যে বৈশিষ্ট্য কোণ উৎপন্ন হয় তা এর বিপরীত অন্তঃস্থ কোণ দ্বয়ের সমষ্টির সমান হয়।

তাই বুঝতেই পারছেন সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা কতটা সহজ।

যদি আপনি এই পোস্টটি ভালভাবে পড়ে থাকেন তবে সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করার সূত্র কি? কিভাবে বের করতে হয় তা সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন।

সমবাহু ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্যঃ

  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের মধ্যমা তিনটির দৈর্ঘ্য সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের কোণ তিনটি পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের প্রত্যেক কোণের পরিমাণ ৬০০।
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক হলে, ক্ষেত্রফল ={\frac{\sqrt{3}}{4} a^2} বর্গ একক।
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক হলে, পরিসীমা = 3a একক।
  • সমবাহু ত্রিভুজের মধ্যমা তিনটি পরস্পর যে বিন্দুতে ছেদ করে তাকে ভরকেন্দ্র (centroid) বলে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র থেকে বাহু তিনটির উপর অঙ্কিত লম্বত্রয় পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের পরিবৃত্তের ব্যাসার্ধ R একক এবং শীর্ষ থেকে ভুমির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে, R = \frac{2h}{3}
  • সমবাহু ত্রিভুজের শীর্ষত্রয় থেকে বিপরীত বাহুত্রয়ের উপর অঙ্কিত লম্ব তিনটি পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক এবং পরিবৃত্তের ব্যাসার্ধ R একক হলে, R = \frac{a}{\sqrt3}
  • সমবাহু ত্রিভুজের শীর্ষত্রয় থেকে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্বত্রয় পরস্পর যে বিন্দুতে ছেদ করে তাকে লম্বকেন্দ্র (orthocenter) বলে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য জানা থাকলে এর মধ্যমাগুলোর দৈর্ঘ্য জানা যায়।
  • সমবাহু ত্রিভুজের অন্তঃকেন্দ্র, পরিকেন্দ্র, ভরকেন্দ্র ও লম্বকেন্দ্র একই বিন্দু।
  • সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল ও তার পরিসীমার উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের অনুপাত = 1 : 12 √3.
  • সমবাহু ত্রিভুজের শীর্ষকোণগুলোর সমদ্বিখণ্ডকত্রয় পরস্পর যে বিন্দুতে ছেদ করে তাকে অন্তঃকেন্দ্র (incenter) বলে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের পরিবৃত্তের ব্যাসার্ধ R একক এবং অর্ধপরিসীমা s একক হলে,s={\frac{3\sqrt{3}}{2}}R
  • সমবাহু ত্রিভুজের একটি বাহু জানা থাকলে এর ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক এবং শীর্ষ থেকে ভুমির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে h = {\frac{\sqrt{3}}{2} a}
  • সমবাহু ত্রিভুজের যেকোন বাহুর মধ্যমা সংশ্লিষ্ট ঐ বাহুর উপর লম্ব।
  • সমবাহু ত্রিভুজ একটি সুষম ত্রিভুজ।
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক হলে, ক্ষেত্রফল = {\frac{1}{2}}a^2 sin60^oবর্গ একক।
  • সমবাহু ত্রিভুজের যে তিনটি বহিঃবৃত্ত অঙ্কণ করা যায়, তারা (বৃত্ত তিনটি) পরস্পর সর্বসম।
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক এবং সমান সমান দৈর্ঘ্যের মধ্যমা d একক হলে, 3a2 = 4d2.
  • সমবাহু ত্রিভুজের যেকোন বাহুর লম্বসমদ্বিখণ্ডক ত্রিভুজটিকে দুইটি সর্বসম ত্রিভূজে বিভক্ত করে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল ও তার অন্তঃবৃত্তের ক্ষেত্রফলের অনুপাত = 3√3 : π.
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুগুলোর লম্বসমদ্বিখণ্ডকত্রয় পরস্পর যে বিন্দুতে ছেদ করে তাকে পরিকেন্দ্র (circumcenter) বলে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের লম্বতিনটির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র মধ্যমাকে শীর্ষ থেকে ভূমির দিকে 2:1 অনুপাতে বিভক্ত করে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের শীর্ষ থেকে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্ব ঐ বিপরীতবাহুকে বা ভূমিকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের কোণগুলোর সমদ্বিখণ্ডকত্রয়, বাহুগুলোর লম্বসমদ্বিখণ্ডকত্রয়, মধ্যমাত্রয় এবং লম্বত্রয় মূলত একই রেখাংশ।
  • সমবাহু ত্রিভুজের যেকোন এক বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রকে {\frac{\sqrt{3}}{4}} দ্বারা গুণ করলে সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল পাওয়া যায়।
  • সমবাহু ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র থেকে শীর্ষবিন্দুগুলোর দুরত্ব পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের অভ্যন্তরস্থ যেকোন বিন্দু হতে বাহু তিনটির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য d,e ও f একক এবং লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে, d + e + f = h.
  • সমবাহু ত্রিভুজের যেকোন মধ্যমা ত্রিভুজটিকে দুইটি সর্বসম ত্রিভূজে বিভক্ত করে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের শীর্ষকোণগুলোর সমদ্বিখণ্ডক তিনটির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে, ভরকেন্দ্র থেকে যেকোন বাহুর উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য {\frac{{h}}{3}} একক।
  • সমবাহু ত্রিভুজের অন্তঃকেন্দ্র থেকে বাহুগুলোর উপর অঙ্কিত লম্বতিনটির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের অন্তঃবৃত্তের ব্যাসার্ধ r একক এবং শীর্ষ থেকে ভুমির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে, r = {\frac{{h}}{3}}
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক এবং শীর্ষ থেকে ভুমির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে, a : h = 2 : √3.
আরও পড়ুনঃ  শ্রেণিসংখ্যা কাকে বলা হয় বিস্তারিত জেনে নিন, পরিসংখ্যান (Statistics)

আমাদের শেষ কথা,

আশা করি বন্ধুরা, সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র কি তা এই পোষ্ট হতে বুঝতে আপনার কোন সমস্যা হয়নি। শিক্ষা বিষয়ক নানা তথ্য আমরা নিয়মিত ভাবে আমাদের সহবাংলাআইটিতে প্রকাশ করে থাকি। আপনি কোন বিষয়ে জানতে চান তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানান।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link