বাংলা ২য় পত্র প্রতিবেদন লেখার নিয়ম – খুবই সহজ পদ্ধতি

বাংলা ২য় পত্র প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

বন্ধুরা আপনাদের স্বাগতম আমাদের সহবাংলা আইটি ওয়েবসাইটের আজকের বাংলা ২য় পত্র প্রতিবেদন লেখার নিয়ম পোষ্টে। আপনারা অনেকেই বাংলা প্রতিবেদন লেখার নিয়ম জানতে চেয়েছিলেন। তো চলুন জেনে নেই। 

প্রতিবেদন’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘বিবরণী’। শব্দটি আমাদের কাছে এসেছে ইংরেজি ‘Report’- এর পরিভাষা হিসেবে। তবে বর্তমানে ইংরেজি শব্দটির অর্থের চেয়ে ‘প্রতিবেদন’ আরো ব্যাপক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ।

বাংলা ২য় পত্র প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

প্রতিবেদন দ্বারা ঘটনার অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষণমূলক বিবৃতি বোঝায়। বলা চলে, প্রতিবেদন হলো কোনো ঘটনা, অনুষ্ঠান কিংবা কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পাঠক কিংবা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপনযোগ্য এবং যথানিয়মে লিখিত বিবরণ।

তাই তথ্য, ঘটনা কিংবা কোনো সমস্যা সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত প্রদানও প্রতিবেদন রচনার লক্ষ্য। প্রতিবেদন রচনাকারীকে বলা হয় প্রতিবেদক। 

প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য কি?

প্রতিবেদনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে দেশের জনসাধারণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা। প্রতিবেদন লেখা হলে বা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে সমস্ত পাঠক সে ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন। এর মাধ্যমে এক ধরনের নাগরিক সচেতনতাও তৈরি হয়।

প্রতিবেদন রচনার বৈশিষ্ট্য কি? 

অন্যান্য রচনার সঙ্গে প্রতিবেদন রচনার প্রধান পার্থক্য হলো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদককে ব্যক্তিগত আবেগ ও পক্ষপাত পরিহারের মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্মোহভাবে তথ্য সংগ্রহ করে তা যথাযথ নিয়মে উপস্থাপন করার দক্ষতা অর্জন। 

এ ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য বিষয়গুলোঃ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম উদাহরণ

ক. পরিকল্পনা: প্রতিবেদন রচনার আগে প্রতিবেদককে স্থির করতে হয় কোন ধরনের প্রতিবেদন তৈরি হবে এবং কীভাবে তা লেখা হবে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রথমে মূল তথ্য এবং পরবর্তী অংশে অন্যান্য তথ্য উপস্থাপন করা প্রয়োজন।

খ. সংহত: প্রতিবেদনে কেবল প্রয়োজনীয় বর্ণনা এবং তথ্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতিবেদন হবে সংহত ও শিল্পশোভন রচনা। প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত আবেগ ও মতামত এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।

গ. নিরপেক্ষতা: প্রতিবেদক কোনো ব্যক্তি বা সমষ্টির পক্ষে পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। প্রতিবেদককে নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে সব পক্ষের মতামত সমান গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করতে হয়। এমনকি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে তার বক্তব্যও উপস্থাপন করা প্রয়োজন।

ঘ. পর্যাপ্ত তথ্য: প্রতিবেদনে অবশ্যই পর্যাপ্ত তথ্য থাকতে হবে। কখন, কোথায়, কী, কেন, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে এবং কে বা কারা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইত্যাদি তথ্য প্রতিবেদনে থাকতে হয়।

ঙ. ভাষা: প্রতিবেদনের ভাষা হবে সহজ-সরল এবং স্পষ্ট। প্রতিবেদনে দুর্বোধ্য, অস্পষ্ট কিংবা দ্ব্যর্থবোধক শব্দ প্রয়োগ করা উচিত নয়।

চ. অনুচ্ছেদ বিভাগ: প্রতিবেদনে ভিন্ন প্রসঙ্গের জন্য নতুন অনুচ্ছেদ তৈরি করা বাঞ্ছনীয়। একই অনুচ্ছেদে অন্য ধরনের প্রসঙ্গের অবতারণা করা উচিত নয়।

ছ. সূত্র নির্দেশ: প্রতিবেদনে অবশ্যই যথাসম্ভব সর্বজন গৃহীত ও স্বীকৃত সূত্র উল্লেখ করে তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। প্রয়োজনে একাধিক সূত্রের পদবির সঙ্গে নামও সংযুক্ত করা যেতে পারে।

জ. সঙ্গতি রক্ষা: প্রতিবেদন অবশ্যই উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রচিত হবে। অর্থাৎ প্রতিবেদক কিছুতেই তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হবে না।

ঝ. প্রযুক্তির সহায়তা: প্রতিবেদনের সত্যতা ও অবস্থার প্রমাণ সংগ্রহের জন্য প্রতিবেদক প্রযুক্তির সহায়তা (সচল বা স্থিরচিত্র গ্রহণ এবং কথোপকথন রেকর্ড করা) নিতে পারে। প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রয়োজন মোতাবেক তা সংযুক্ত করাও যেতে পারে।

প্রতিবেদনের প্রকারভেদ কি এবং কতগুলি?

বিষয় অনুসারে প্রতিবেদন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- সংবাদ প্রতিবেদন, তদন্ত প্রতিবেদন, কারিগরি প্রতিবেদন, বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন, দাপ্তরিক প্রতিবেদন ইত্যাদি। কিন্তু সার্বিক বিচারে প্রতিবেদন প্রধানত দুই প্রকার। ক. সংবাদ প্রতিবেদন এবং খ. প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন।

সংবাদ প্রতিবেদন ছাড়া অন্যান্য প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রয়োজনেই সম্পন্ন করে থাকে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২ তে নবম-দশম শ্রেণির জন্য শুধু সংবাদ প্রতিবেদনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।এ পর্যায়ে পাঠ্য হিসেবে সংবাদ প্রতিবেদন সম্পর্কিত বিষয়াদি আলোচিত হলো।

সংবাদ প্রতিবেদন:

সাধারণত নাগরিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, কোথাও ঘটে যাওয়া জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা, দুর্ঘটনা, বিষয় বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে তথ্যমূলক বিবৃতি লিখনই সংবাদ প্রতিবেদন । উক্ত বিষয় সম্পর্কে পাঠককে জ্ঞাত করানো এবং কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সংবাদ প্রতিবেদনের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা কোনো পত্রিকার সাংবাদিক অর্থাৎ নিজস্ব সংবাদদাতা/স্টাফ রিপোর্টার/নিজস্ব প্রতিবেদক বা কোনো জেলা/থানা প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদপত্রে প্রকাশ উপযোগী করে এ ধরনের প্রতিবেদন রচনা করবে।

সংবাদ প্রতিবেদন লেখার বিবেচ্য বিষয়সমূহ:

১। প্রতিবেদন শুরু হবে একটি যথাযথ শিরোনাম দিয়ে। প্রতিবেদনের শিরোনাম হবে বিষয়ের

সারাৎসারমূলক এবং আকর্ষণীয়।

২। এরপর প্রতিবেদকের নাম, স্থান, ও তারিখ উল্লেখ করে প্রথম অনুচ্ছেদটি লিখতে হয়। এতে ঘটনাটি কী, কখন, কোথায়, কার দ্বারা, কেন এবং কিভাবে ঘটেছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করা হয়।

৩। পরবর্তী অংশে ঘটনার সম্পূর্ণ বর্ণনা উপযুক্ত সূত্র নির্দেশপূর্বক ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করতে হয়। 

৪। প্রতিবেদনের শেষদিকে বিষয় সংশ্লিষ্ট মন্তব্য যুক্ত করা যায়।

৫। প্রতিবেদনের নিচে প্রতিবেদকের নাম ও স্বাক্ষর থাকে।

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ

সংবাদ প্রতিবেদনের আকৃতি:

এ ধরনের প্রতিবেদন বিষয় অনুযায়ী ২৫০ থেকে ৩৫০ শব্দের মধ্যে হওয়া উচিত।

বিশেষ নির্দেশনা: 

প্রতিবেদনের মূল অংশের বিষয় ও নির্দিষ্ট রচনারীতির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এর আগে বা পরে প্রতিবেদনের স্থান,সময়, প্রকৃতি ইত্যাদি সম্বলিত ছক, আবেদন কিংবা খামের ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

বিশেষ নির্দেশনা: 

প্রতিবেদনের মূল অংশের বিষয় ও নির্দিষ্ট রচনারীতির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এর আগে বা পরে প্রতিবেদনের স্থান, সময়, প্রকৃতি ইত্যাদি সম্বলিত ছক, আবেদন কিংবা খামের ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। আরও জানতে আপনারা ১০ মিনিট স্কুলের ব্লগটি পড়তে পারে।

আমি আশাকরি এই ব্লগটি পড়ে আপনারা কিভাবে প্রতিবেদন লিখতে হয় তা জানতে পেরেছেন। অন্যান্য আর্টিক্যাল পড়তে মূলপাতা ভিজিট করুন।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link