মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট | মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা
Contents
 মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট ভূমিকাঃবিজ্ঞানের সৃষ্টিঃ বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণাঃদৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানঃকায়িক শ্রম লাঘবে বিজ্ঞানঃকৃষিকাজে বিজ্ঞানঃউন্নত চিকিৎসায় বিজ্ঞানঃশিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃতথ্য প্রদানে বিজ্ঞানঃসম্পদ আহরণে বিজ্ঞানঃআবহাওয়া নির্ণয়ে বিজ্ঞানঃযােগাযােগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃবিনােদনে বিজ্ঞানঃশহুরে জীবনে বিজ্ঞানঃগ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞানঃদৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অপকারিতাঃউপসংহারঃ মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা Class 7 ভূমিকাঃবিজ্ঞানের কল্যাণধর্মী অবদানঃচিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃযােগাযােগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃবিজ্ঞানের বিস্ময় কম্পিউটারঃমানবকল্যাণে বিদ্যুৎঃবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক প্রভাবঃউপসংহারঃ মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা Class 10 ভূমিকাঃবিজ্ঞান শব্দটির অর্থঃজীবন ও বিজ্ঞানঃবিজ্ঞানের গুরুত্বঃচিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃকৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃযােগাযােগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃশিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানঃবিজ্ঞানের ক্ষতিকর দিকঃউপসংহারঃ শেষকথা: FAQs:

এই মানব সভ্যতার নিকট বিজ্ঞান হল এমন এক অনন্ত আশীর্বাদ। যেটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত প্রত্যাকটি মানুষ নিজের জীবনকে উন্নত থেকে উন্নততর করে তোলার পথে এগিয়ে চলেছে। সবদিক থেকে বিবেচনা করলে বিজ্ঞানের এই ব্যাপক অগ্রগতি রূপ পাচ্ছে বিশ্বব্যাপী মানব কল্যাণে। মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা নিয়ে বিশদ আলোচনার উদ্দেশ্য আমাদের এই প্রতিবেদনের উপস্থাপনা। 

মানবতার কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান অনন্য। বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে সহজ থেকে সহজতার করে তুলেছে। মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম।

 মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট 

(সংকেতঃ ভূমিকা; বিজ্ঞানের সৃষ্টি; বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা; দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান; কায়িক শ্রম লাঘবে বিজ্ঞান; কৃষিকাজে বিজ্ঞান; উন্নত চিকিৎসায় বিজ্ঞান; শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান; তথ্য প্রদানে বিজ্ঞান: সম্পদ আহরণে বিজ্ঞান; আবহাওয়া নির্ণয়ে বিজ্ঞান; যােগাযােগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান; বিনােদনে বিজ্ঞান; শহুরে জীবনে বিজ্ঞান; গ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞান; দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অপকারিতা; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ

মানুষ একসময় গুহায় বাস করত। কিন্তু এখন মানুষ বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আধুনিক জীবনে পদার্পণ করেছে বসবাস করছে আকাশচুম্বী অট্টালিকায় । বিজ্ঞানের আশীর্বাদে পৃথিবী আজ মানুষের হাতের মুঠোয় । বিজ্ঞানের অবদানে পথিবী আজ আলাে ঝলমলে; মানবজীবন সুখী-সমৃদ্ধ, আরাম-আয়েশপূর্ণ ও নিরাপদ। মানবজীবনের কথা চিন্তা করে আদিমকালে গােপনে বিজ্ঞানচর্চা শুরু হয়েছিল। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ আকাশে বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে । দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান রয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে জাতীয় জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতিও ত্বরান্বিত হচ্ছে । বিজ্ঞানের অবদানে মানুষের বিজয়ের কথা প্রকাশ পেয়েছে কবির কবিতা–

কে আজ পৃথ্বিরাজ জলে, স্থলে, ব্যোমে

কার রাজ্য পাট। 

বিজ্ঞানের সৃষ্টিঃ 

প্রকৃতির অন্ধ শক্তির ওপর জয়ী হওয়ার প্রয়ােজনেই একদিন সৃষ্টি হয়েছিল বিজ্ঞানের । পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীবৃন্দ মানুষের কল্যাণের জন্য ডুব দিয়েছিলেন প্রকৃতির অতলান্ত রহস্য সাগরে । সেই রহস্যাবরণ উন্মােচন করে মানুষের প্রতিভা আবিষ্কার করেছে প্রকৃতির কত গােপন সম্পদ ও শক্তি । জলে-স্থলে-আকাশে মানুষের আজ অপ্রতিহত গতি । বর্বর জীবনকে পশ্চাতে ধাওয়া করে বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ সভ্যতার আলােকে উদ্ভাসিত ও সম্পদশালী । মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা, জীবনের স্বপ্ন ও কল্পনার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে বিজ্ঞান। 

বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণাঃ

আদিমযুগে নিতান্ত প্রয়ােজনের তাগিদে মানুষের অবচেতনে মনে বিজ্ঞানের সূত্রপাত ঘটেছিল । তখন থেকেই মানুষ মানবকল্যাণের লক্ষ্যে বিজ্ঞানের নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকে এবং সফল হয়। সেই থেকে বিজ্ঞানই মানুষের পরম বন্ধু হয়ে ওঠে। বিজ্ঞান সম্পর্কে মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন-

Science is reality

Science is bonafide

Science is your constant friend

Science is always creative.

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানঃ

বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি মুহূর্তও ভাবা যায় না। আধুনিক জীবন বলতে আমরা বুঝি যে জীবন চিন্তা-চেতনায় প্রগতিশীল, নিজের জীবন সম্পর্কে সচেতন এবং নতুনকে গ্রহণ করতে বদ্ধপিরকর। তাইতো অন্ধকার গুহার পরিবর্তে আলােকপিয়াসী হয়ে মানুষ বেছে নিয়েছে সুদৃশ্য নিকেতন।

বিজ্ঞানের অবদান এ পরিবর্তে  প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করা বা মাইক্রো ওভেনে রান্না করা খাদ্য খাচ্ছে লজ্জা নিবারণে তাের করেছে শাশ-পানি ব্যান্ডের পছন্দের পােশাক। মােটকথা বিজ্ঞানের স্পর্শে আজ আমাদের জীবন হয়েছে সহজ ও সুন্দর। বিজ্ঞানের যাত্রা অরর প্রথম ধাপেই।

দেখা যায় বিদ্যুতের বিস্ময়কর অবদান। তারপর এসেছে টেলিফোন, মুঠোফোন, টেলিভিশন, জেনারেটর, কাতল, প্যাপটপ, ক্যামেরা, লিফট ইত্যাদি। আর এভাবেই অতীতের গ্লানি চিহ্ন মুছে বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় আজ আমরা আধুনিক। 

কায়িক শ্রম লাঘবে বিজ্ঞানঃ

মানবকল্যাণের কথা চিন্তা করেই প্রাচীন যুগে বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আধুনিক বিশ্বে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে। কায়িক শ্রম লাঘবেও বিজ্ঞানের অবদান অনস্বাকায়। একসময় অল্প কিছু। উৎপাদন করতে মানুষকে অনেক পরিশ্রম করতে হতাে। কিন্তু বিজ্ঞানের বদৌলতে শিল্প-বিপ্লবের ফলে কল-কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এতে উৎপাদন বেড়েছে আর লাঘব হয়েছে কায়িক শ্রম। 

কৃষিকাজে বিজ্ঞানঃ

আদিম মানুষের জীবিকা উপার্জনের একমাত্র পথ ছিল কৃষি। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই কৃষি কাজের সাথে জড়িত । কৃষিকাজের উন্নয়নের জন্যও বিজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। দীর্ঘ সময়। ও অনেক পরিশ্রম করে সনাতন পদ্ধতিতে লাঙল-জোয়াল-গােরু দিয়ে হালচাষের পরিবর্তে দ্রুত চাষ করার জন্য বিজ্ঞান ট্রাক্টর। আবিষ্কার করেছে। বেশি ফসল উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার ও অধিক ফলনশীল বীজ, ফসলের ক্ষতিকারক পােকা ধ্বংসের জন্য কীটনাশক আবিষ্কার বিজ্ঞানের অবদান। তাছাড়া জমিতে সেচ প্রদান, ফসল রােপণ, কর্তন, মাড়াইসহ বেশাকছু কাজের জন্য যন্ত্র। আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান। 

উন্নত চিকিৎসায় বিজ্ঞানঃ

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞানের কল্যাণে রাতারাতি আধুনিক চিকিৎসা উন্নতির শিখরে পৌছে গেছে। বিজ্ঞানের কল্যাণেই আধুনিক মানুষ রােগহীন সুস্থ জীবনযাপন করছে, ছােটো-বড়াে নানা প্রকার। রােগের হাত থেকে সহজেই মুক্তি পাচ্ছে।

রােগাক্রান্ত হওয়ার আগেই মানুষ প্রতিরােধের ব্যবস্থা করছে । যক্ষ্মা, হাট, কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, শিরা, যকৃৎ, ধমনি, পাকস্থলীতে আক্রান্ত রােগও বিজ্ঞানের কাছে হার মেনেছে । তাছাড়া রােগ নির্ণয়ের জন্য এক্সরে, ইসিজি, আলট্রাসনােগ্রাফি, ইটিটি, এন্ডােস্কপি যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্ত থেকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ নিতে সৃষ্টি হয়েছে টেলিমেডিসিন পদ্ধতি । কৃত্রিম হাত-পায়ের ব্যবস্থা এমনকি নিঃসন্তান দম্পতির জন্য টেস্টটিউব বেবির ব্যবস্থাও করেছে। আধুনিক বিজ্ঞান।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ

শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিশেষ অবদান রেখেছে। কাগজ, কলম ও মুদ্রণ যন্ত্র শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। মুদ্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে জ্ঞানী-গুণীর কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। মূল্যবান গ্রন্থগুলাে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। বর্তমান যুগে ঘরে বসে ইন্টারনেটে কুরআন শরিফ থেকে শুরু করে সকল বই পড়া যায়। তাছাড়া রেডিও, টেলিভিশন, ক্যাসেটের মাধ্যমেও শিক্ষা লাভ করা যায়। 

আরও পড়ুনঃ  শঙ্খ ঘোষ প্রবন্ধ রচনা | শঙ্খ ঘোষ প্রবন্ধ রচনা class 12

তথ্য প্রদানে বিজ্ঞানঃ

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এই যুগে যেকোনাে আলােড়িত ও আলােচিত ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কম্পিউটার, টেলিফোন, মুঠোফোন, ই-মেইল, এসএমএস, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনাে স্থানে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্তে একে অপরের সাথে যােগাযােগ করতে পারে বিজ্ঞানের কল্যাণে।

তথ্য আদান-প্রদানের আরও উন্নত যন্ত্র টেলিপ্যাথি আবিষ্কারের পথে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে কথা। বলার সময় অপর প্রান্তের মানুষের মনােভাব অনুভব করা যাবে। তাছাড়া ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পত্রিকা পড়া সম্ভব হচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞান মানুষের জীবনের জটিলতাকে সকল ক্ষেত্রে সহজ থেকে সহজতর করে দিয়েছে। 

সম্পদ আহরণে বিজ্ঞানঃ

পৃথিবীতে বহু ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। এই সম্পদ আহরণ করতে আবিষ্কার করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি। বৈজ্ঞানিক এ পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মানুষ ভূ-গর্ভ থেকে তেল, গ্যাস, কয়লা, লােহা, চুনাপাথরসহ নানা সম্পদ আহরণ করছে এবং একেকটা সম্পদ একেক কাজে লাগিয়ে মানুষের চাহিদা পূরণ করছে। সমুদ্রের স্রোত,। নদীর পানি বাতাসের গতিকেও বিজ্ঞান মানুষের কাজে লাগাচ্ছে। কাজে লাগাচ্ছে পরিত্যক্ত বর্জ্য ও পশু-পাখির বিষ্টাকেও। 

আবহাওয়া নির্ণয়ে বিজ্ঞানঃ

এক সময় মানুষ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বুঝে নিত অভিজ্ঞতা ও ঋতু চক্রের মাধ্যমে । কোন ঋতুতে আবহাওয়া কেমন ছিল তার ওপর ভিত্তি করে তারা চলত। এতে বড়াে বড়াে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাতাে এবং প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হতাে। পূর্বে বন্যা, সুনামি, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়ে অসংখ্য মানুষ, গবাদি পশুসহ ঘরবাড়ি ও পরিবেশের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়েছে ।

কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ মানুষকে আর এই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না। বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ এক-দু’দিন আগেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে যায়। ফলে তারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যথাসময়ে। অবস্থান নেয় এবং দুর্যোগ মােকাবিলা করতে প্রয়ােজনীয় প্রস্তুতি নেয়।

যােগাযােগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ

এক সময় মানুষ ছিল গৃহকেন্দ্রিক। কোথাও যেতে হলে পায়ে হেটে যেতে হতো। কেননা তখন কোনাে যানবাহনের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান যােগাযােগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে। এ যুগে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। যানবাহনের মাধ্যমে মানুষ এখন জলে, স্থলে, আকাশে, গ্রহে, উপগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে । স্থলপথে গাড়ি, টেন, জলপথে জাহাজ, আকাশপথে বিমান, ভিন্ন গ্রহে যেতে রকেট ইত্যাদি বিজ্ঞানেরই অবদান। 

বিনােদনে বিজ্ঞানঃ

মন ভালাে তাে সব ভালাে । মন ভালাে থাকলে পড়ালেখা, কাজকর্ম সবকিছুই ভালাে লাগে। তাই মানুষের। মনকে প্রফুল্ল রাখতে বিজ্ঞান নানা প্রকার বিনােদনের ব্যবস্থা করেছে। বিজ্ঞান আধুনিক মানুষের বিনােদনসঙ্গী হয়ে ধরা দিয়েছে । বিশ্বসংস্কৃতি আজ বিজ্ঞানে পরিপূর্ণ হয়েছে। মােবাইল, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ক্যামেরা, ডিভিডি, ভিসিডি, ভিসিয়ার, ডিশ, বৈদ্যুতিক বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি সাংস্কৃতিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। তাই কর্মশেষে কর্মক্লান্ত মানুষ বিনােদনের মাধ্যমে মনকে উৎফুল করে তােলে। 

শহুরে জীবনে বিজ্ঞানঃ

শহুরে জীবনে মানুষ আর বিজ্ঞান অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত । শহরে আমাদের ঘুম ভাঙে গাড়ির হর্ন, কলিংবেল, গান বাজনা ও এলার্মঘড়ির শব্দে । ঘুম থেকে উঠে দিনের শুরু হয় টুথপেস্ট আর টুথব্রাশ দিয়ে। এরপর আসে সংবাদপত্র । তারপর গ্যাস অথবা হিটার কিংবা স্টোভে আমরা তাড়াতাড়ি রান্না করে খাই ।

রিকশা, অটোরিকশা, বাস, ট্রেন বা মােটরসাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে পৌছাই। সিড়ির বদলে লিফটের সাহায্যে উপরে উঠে অফিস করি । টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির সাহায্যে দূর-দূরান্তে খবর পাঠাই। কম্পিউটারে কাজের বিষয় লিখে রাখি ।

ক্লান্ত দেহটাকে আরাম দেওয়ার জন্য এসি কিংবা ইলেকট্রিক পাখার নিচে বসি– এভাবেই সারাদিন বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা জীবন পরিচালনা করছি। আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দিনের অবসন্নতা দূর করতে মিউজিক প্লেয়ার কিংবা টিভি চালিয়ে মনটাকে সতেজ রাখতে চেষ্টা করি। ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটারে তাদের নােট রাখে, কখনাে কখনাে ভিডিও গেমস খেলে । এমনিভাবে জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই আমরা বিজ্ঞানের অবদান অনুভব করি। 

গ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞানঃ

যােগাযােগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদানের জন্য মানুষ আজ দূরকে করেছে নিকট প্রতিবেশী। বাস, রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মােটরসাইকেল সবই এখন গ্রামীণ জীবনের অংশ। ফলে বিজ্ঞান শহরজীবনকে অতিক্রম করে পৌছে গেছে গ্রামে।

বর্তমানে গ্রাম্য জীবনেও বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, টিভি, রেডিও মােবাইল ফোন, টর্চ, স্নাে, পাউডার, সাবান, আয়না-চিরুনি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য, ট্রাক্টর ইত্যাদি এখন গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। শহরের মানুষ যেমন নিজেদের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে বিজ্ঞানকে নিত্যসঙ্গী করেছে তেমনি গ্রামের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের জীবনেও ইলেকট্রিক হিটার, রান্নার গ্যাস, প্রেসার কুকার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি অপরিহার্য হয়ে। উঠেছে। 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অপকারিতাঃ

বিজ্ঞানের স্পর্শে একদিকে যেমন মানুষের জীবন হয়েছে অর্থপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী, অন্যদিকে এর বীভৎস রূপও মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে অনিঃশেষ বেদনায় । বর্তমান সভ্যতার একটি কদর্য ও ভয়ানক রূপ হলাে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার । এই অস্ত্র ক্রমশ মানব-সভ্যতাকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

কম্পিউটার নামক মহাশক্তির আবিষ্কার ও সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার প্রতিটি দেশে বাড়িয়ে দিয়েছে বেকারত্ব। কম্পিউটারের মাধ্যমে মানুষ এখন সাইবার অপরাধী হ্যাকিংসহ নানা ধরনের অপরাধ করছে, যার গতি রােধ করা প্রায় অসাধ্য। সামাজিক যােগাযােগের মাধ্যম যেমন– ফেসবুক, টুইটার, ভিডিও, শেয়ারিং সাইট, ইউটিউব ইত্যাদির মাধ্যমে ভুল তথ্য নিমেষেই লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর কাছে পৌছে দেয়, যা সহিংসতা সৃষ্টি করে।

বৈজ্ঞানিক যন্ত্র সংবলিত বড়াে বড়াে শিল্পকারখানা ও যন্ত্রচালিত গাড়িগুলাে নষ্ট করছে পরিবেশ। তাছাড়া বিশ্বের প্রতিটি দেশে তথ্য প্রযুক্তির ফলে সংঘটিত হয় বড়াে বড়াে ডাকাতি। তবে সত্যিকার অর্থে এসবের জন্য আমরা বিজ্ঞানকে দায়ী করতে পারি না। বরং প্রযুক্তির অপপ্রয়ােগকারী মানুষেরাই এর জন্য দায়ী। 

উপসংহারঃ

বিজ্ঞান অনুসন্ধানী, আধুনিক জীবনে ক্রমপ্রবহমান ছন্দের মূল চালিকাশক্তি। বিজ্ঞানের একের পর এক আবিষ্কারে মানুষ স্তম্ভিত হচ্ছে। শহরজীবনে বিজ্ঞান যেমন প্রভাব বিস্তার করেছে, গ্রামীণ জীবনধারায় ঠিক সেভাবে সম্ভব হয়নি। তাই সচেতন জনসাধারণের প্রত্যেকেরই কর্তব্য গ্রামীণ জীবনধারাতেও বিজ্ঞানের বিস্তৃত ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। কেননা, বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড গ্রামবাংলায় বিজ্ঞানের যথার্থ প্রয়ােগই পারে তার উদ্ভাবনী শক্তিকে যাদুস্পর্শে সমৃদ্ধ করতে।

 মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা Class 7 

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা Class 7
মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা Class 7

ভূমিকাঃ

বিজ্ঞান আজকের বিশ্বের মানুষের কাছে খুলে দিয়েছে বিস্ময়কর সাফল্যের দ্বার। মানুষের জীবনকে সহজ থেকে আরও সহজ করে তােলার কাজে বিজ্ঞানের অবদান সবার ওপরে। আজকের মানবজীবন বিজ্ঞাননির্ভর। মানুষের কর্মপদ্ধতি এখন বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রিত। মানুষ এখন সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে বিজ্ঞানকে ভিত্তি করেই। দিনে দিনে বিজ্ঞান তার আবিষ্কারকে অব্যাহত রেখেছে আর সাধিত হচ্ছে মানবকল্যাণ। মানবের সেবা ও কল্যাণে বিজ্ঞান সদা তৎপর।

আরও পড়ুনঃ  সময়ের মূল্য রচনার ২০ পয়েন্ট | সময়ের মূল্য রচনা

বিজ্ঞানের কল্যাণধর্মী অবদানঃ

পৃথিবীর মানুষ একদিন বিজ্ঞান সাধনায় মনােনিবেশ করেছিল তার নিজের প্রয়ােজনে। নিজের প্রয়ােজন ও সুখকর জীবনের তাগিদ থেকেই বিজ্ঞানের চর্চা আজও প্রবহমান। মানুষ সাধনা করে সে বিজ্ঞান থেকে আবিষ্কারগুলােকে ঘরে তুলেছে তা মানব বসতির সকলের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্যই। জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আছে তাই গৌরবজনক অবদান। বিজ্ঞানের কোনাে আবিষ্কার বা অবদান যদি মানুষের হিতে ব্যয়িত না হয়ে অকল্যাণে ব্যয়িত হয়। তাহলে সে দোষ বিজ্ঞানের হবার কথা নয়। মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালােবাসে। অতএব, নিজের জন্য যে উদ্ভাবন তা নিঃসন্দেহে কল্যাণের সাথেই সম্পৃক্ত। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের বর্ণনার মধ্য দিয়ে মানবকল্যাণের সাথে এর সম্পৃক্ততাকে তুলে ধরতে আমরা সচেষ্ট হব।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ

মানুষ অসুখে পতিত হয়। এ অসুখ থেকে মুক্ত হয়ে সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায়। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান মানুষকে বাচতে সাহস যুগিয়েছে। মরণব্যাধি যক্ষ্মা ও ক্যান্সারের মতাে রােগের প্রতিষেধক ও ওষুধ আবিষ্কার করে মানুষ চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলােড়ন সৃষ্টি করেছে। মানুষের পক্ষে কোনােকালেই মরণকে জয় করা সম্ভব নয়। কিন্তু অসুখকে জয় করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়েছে। ওষুধের নব নব আবিষ্কার মানুষকে বাঁচতে প্রাণিত করেছে। মানবজীবনের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যা যাচাইয়ের জন্য এমন সব প্রযুক্তি মানুষ আবিষ্কার করেছে যার সাহায্যে শরীরের অভ্যন্তরের ছবি উঠিয়ে সঠিক রােগ নিরূপণ সম্ভব হচ্ছে। শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের এ অসীম অবদানের কথা বিবেচনা করলে মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের অবদানের কথা সহজেই অনুমান করা যায়।

যােগাযােগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ

যােগাযােগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাফল্য মানুষের জীবনে পরম শান্তি এনেছে। দ্রুতগতিসম্পন্ন ট্রেন আবিষ্কার করে মানুষ হাজার কিলােমিটারের পথকে করেছে নিকট। অত্যাধুনিক কনকর্ড বিমান, সাগরের সুবিশাল জাহাজ মানুষের পথের দূরত্বকে কমিয়েছে বিস্ময়করভাবে। আধুনিক টেলিযােগাযােগ তাে বিজ্ঞানের বিরাট সাফল্য। মিনিটের মধ্যে গােটা বিশ্বের যেকোনাে প্রান্তের সংবাদ নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এক স্থানের কোনাে ছবি মােবাইলের বাটন চেপে বীর অন্য প্রান্তে পৌছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। মানুষের জীবনের পরতে পরতে প্রবেশ করেছে বিজ্ঞান । বিজ্ঞান এখন মহাকাশেই শুধু ব্যস্ত নয়। ক্ষুদ্র গৃহকোণেও বিজ্ঞান এখন সেবা দিয়ে যাচ্ছে নিরন্তর।

বিজ্ঞানের বিস্ময় কম্পিউটারঃ

যেদিন বিজ্ঞান পৃথিবীকে কম্পিউটার দিয়েছে সেদিন থেকে পৃথিবী তার পুরাতন চেহারাকে বদলে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। সকল কাজের কাজী কম্পিউটার। যে কাজ শত শ্রমিকের হাজার ঘণ্টা শ্রমের দ্বারা সম্ভব হতাে সে কাজ মিনিটে করা সম্ভব হচ্ছে কম্পিউটারের কল্যাণে। মানব শ্রমের এ সাশ্রয় পৃথিবীর জন্য একটি বড় ঘটনা বৈকি! কম্পিউটারকে কেন্দ্র করে এখন শুধু কঠিন কাজই যে সহজ হচ্ছে তা নয়, অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্যে কম্পিউটার মহানায়ক। মুদ্রণ কাজ থেকে মহাকাশ গবেষণা – এমন কোনাে কাজ নেই যে কাজের সাথে কম্পিউটার যুক্ত নয়।

মানবকল্যাণে বিদ্যুৎঃ

শহরে, নগরে গ্রামে ও পথে-প্রান্তরে যত বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে তা বিজ্ঞানেরই এক বিস্ময়কর অবদান। পৃথিবীর সভ্যতাকে হাজার বছরের পথ এগিয়ে দিয়েছে এ বিদ্যুৎ। বর্তমান বিদ্যুৎসম্পন্ন পৃথিবী আর বিদ্যুহীন একটি পৃথিবী কল্পনা করতে গেলে বিদ্যুতের অবদানকে সহজে অনুমান করা যায়। বিদ্যুহীন একটি দিনও কল্পনা করতে গেলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তাই মানবকল্যাণে বিদ্যুতের বা বিজ্ঞানের এ অবদানকে অস্বীকার করার কোনাে সুযােগ নেই।

বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক প্রভাবঃ

সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞান অনেক দূর অগ্রসর হতে পেরেছে। পৃথিবীতে বিজ্ঞান যত বেশি অগ্রসর হবে মানবকল্যাণ তত বেশি সাধিত হবে । পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান নিয়ে মেতে ওঠেনি। বরং এর কল্যাণকর দিকটির শতভাগ সেবা পাবার জন্য এর শুভযাত্রা সূচিত হয়েছিল। মানুষের শুভবুদ্ধি এবং বিজ্ঞান চর্চা অনাগত দিনেও অব্যাহত থাকবে এবং এর সুফলও মানুষ ভােগ করবে সন্দেহ নেই।

উপসংহারঃ

বিজ্ঞান উত্তরােত্তর সমৃদ্ধির পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে আর মানবসমাজ ভােগ করছে এর সুফল। পৃথিবী যতদিনথাকবে ততদিন কৌতূহলী মানুষ অনুসন্ধানী মনে বিচরণ করে যাবে বিজ্ঞানের মাঠে। মানুষের এ সাধনার মধ্যেই নিহিত আছে – জগৎ মানবের বৃহত্তর কল্যাণ।

 মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা Class 10 

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা Class 10
মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা Class 10

 

ভূমিকাঃ

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অভাবনীয় গতি, সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে করেছে দুততরও বহুমাত্রিক। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের জাদুকরী স্পর্শে মানবজীবনের সর্বত্র এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সর্বক্ষেত্রেআজ পরিলক্ষিত হচ্ছে বিজ্ঞানের অব্যাহত জয়যাত্রা। মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান যে কত ব্যাপক তা প্রতিদিনের বিচিত্রঅভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করা যায়। বিজ্ঞানের কল্যাণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এসেছে সুখ, শান্তি ওসমৃদ্ধি।

বিজ্ঞান শব্দটির অর্থঃ

‘বিজ্ঞান’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘Science’, যা ল্যাটিন শব্দ ‘Scio’ থেকে এসেছে।এর অর্থ জানা বা শিক্ষা লাভ করা। আভিধানিক অর্থে বিশেষ জ্ঞানই হলাে বিজ্ঞান। মনীষী স্পেন্সারের মতে, বিজ্ঞান হলােসুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ জ্ঞান। অনুসন্ধিৎসু মানুষের বস্তুজগৎ সম্পর্কে ধারণা এবং বিচিত্র কৌশলে তার উপর আধিপত্যবিস্তারের প্রচেষ্টা থেকেই উদ্ভব ঘটেছে বিজ্ঞানের। এটি হয়েছে মানুষেরই প্রয়ােজনে, তার প্রভাব মেটানোর তাড়না থেকে।এভাবে সভ্যতার বিকাশের সহায়ক শক্তি হয়ে উঠার মাধ্যমে বিজ্ঞান ক্রমেই মানুষের জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে।

জীবন ও বিজ্ঞানঃ

প্রয়ােজনই উদ্ভাবনের প্রেরণা জোগায়। মানুষের অভাববােধ থেকে বিশেষ জ্ঞান হিসেবে বিজ্ঞানেরউৎপত্তি। তাই জীবনের সঙ্গে বিজ্ঞানের সম্পর্ক যেমন পুরােনাে, তেমনি নিবিড়। মানুষের অনুসন্ধিৎসা, জিজ্ঞাসা ও আগ্রহথেকে বিজ্ঞানের বিচিত্র বিকাশ। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সংস্কার, বিশ্বাস ও প্রবণতা বদলে যাচ্ছে। আজবিজ্ঞানের দৃষ্টি দিয়ে আমরা সব কিছু যাচাই করে দেখতে চাই, প্রমাণ পেতে চাই অনেক কিছুর। এ জিজ্ঞাসা ও তর্কেরপ্রবৃত্তি আমাদের বৈজ্ঞানিক পরিবেশের ফসল। সুতরাং বিজ্ঞান সম্পর্কে আমরা যতই অজ্ঞ হই না কেন, বিজ্ঞানের প্রভাবআমাদের জীবনের মর্মমূলে প্রবেশ করেছে।

বিজ্ঞানের গুরুত্বঃ

মানবসমাজের যে দিকেই দৃষ্টিপাত করা যায়, শুধু বিজ্ঞানের মহিমাই স্পষ্ট হয়ে উঠে। বিজ্ঞানেরবলে মানুষ জল, স্থল, অন্তরীক্ষ জয় করেছে; সংকট নিরসন ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের বন্ধু অভাবনীয় কৌশল আবিষ্কারকরেছে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানের গৌরবময় অবদান বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে আছে এবং মানবজীবনের উপর এর সুগভীরপ্রভাব পড়ছে। মানবজীবনকে অফুরন্ত সুখে পরিপূর্ণ করে তােলার সাধনায় সদা নিয়ােজিত বিজ্ঞান তার বিস্ময়কর আবিষ্কারচালিয়ে যাচ্ছে অবিরত। এ সাধনা যেমন ক্রমাগতভাবে চলছে, তেমনি তার কল্যাণকর সুফলও নিবেদিত হচ্ছে মানুষের| সেবায়। বিজ্ঞান আজ মৃত্যুকে জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের কর্মসাধনার পরিণতি হচ্ছে আধুনিক সভ্যতা।বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান হয়ে মানুষ আজ আকাশ ও পাতালকে সাজিয়েছে নিজের পরিকল্পনা অনুসারে। তারা জীবনকে জয়করে মৃত্যুকে পদানত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে নব নব কৌশল ও প্রকরণ প্রবর্তনের মাধ্যমে এ জগতে বিজ্ঞানএনেছে যুগান্তর; দূরকে করেছে আপন আর জীবনকে করেছে সহজ।

আরও পড়ুনঃ  ১৫ আগস্ট সম্পর্কে রচনা | জাতীয় শোক দিবস

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ

চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে আজ মানুষ অকাল মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। কলেরা,বসন্ত, যক্ষ্মা ইত্যাদি মরণব্যাধির সু-চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে আবিষ্কৃত হয়েছে। উন্নতমানের ওষুধ, অস্ত্রোপচার ব্যবস্থা,এক্সরে, আল্ট্রাভায়ােলেটরে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসেছে এক আমূল পরিবর্তন। উন্নতচিকিৎসা সেবার ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষের গড় আয়ু। কম্পিউটারকেন্দ্রিক টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে পৃথিবীর যে কোনাে প্রান্ত থেকে যে কোনাে ব্যক্তি উন্নত দেশের ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে সুস্থ।থাকতে পারছে। আবিষ্কৃত হয়েছে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। অবলীলায় করা হচ্ছে ওপেন হার্ট সার্জারি, শরীর না কেটেবাইপাস সার্জারি, প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে একজনের অঙ্গ অন্যজনের শরীরে। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের জেনেটিক স্বরূপ।উদ্ঘাটনের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে বিজ্ঞানীরা, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে বয়ে আনবে যুগান্তকারী বিপ্লব।

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ

আধুনিক বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রেও অশেষ উন্নতি সাধন করেছে। প্রাচীন ভোতা লাঙলের পরিবর্তেআজ ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নতমানের কলের লাঙল ও ট্রাক্টর। ফসলের উৎপাদন ও মান বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিকরাসায়নিক সার। কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নতমানের কীটনাশক।

প্রকৃতির দয়ার উপর।নির্ভরশীল না হয়ে গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে পানি সেচের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গবেষণার মাধ্যমে সরবরাহ করাহচ্ছে উন্নতমানের বীজ। তা ছাড়া থরা, শীত ও লবণাক্ততা সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন কৃষি উৎপাদনে এক নীরব।বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটিয়েছে।

ফলে ধান, গমসহ সকল প্রকার খাদ্যশস্যের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত জাতেরমাছ, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি উদ্ভাবনের ফলে এসবের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে অভাবনীয় হারে। এভাবে বিজ্ঞান আজউর্বরতা দিয়ে ক্ষয়িষ্ণু বসুধাকে শস্যবতী করে ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

যােগাযােগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ

আধুনিক যােগাযােগ ব্যবস্থার পুরােটাই বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বুলেট ট্রেন, আধুনিককনকর্ড বিমান, মাটির তলায় ধাবমান টিউব রেল সবই বিজ্ঞানের অবদান। বিজ্ঞানের অবদানেই আজ আমরা এরােপ্লেনে।চড়ে শূন্যাকাশে শত শত মাইল পাড়ি দিচ্ছি, যা একসময় ছিল অচিন্তনীয়। তাছাড়া এখন আমরা হাতের মােবাইল টিপেমুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর যে কোনাে প্রান্তে অবস্থিত ব্যক্তির সাথে কথা বলতে পারি, ছবি বা ভিডিও আদান-প্রদান করতেপারি। সারা বিশ্বের প্রতি মুহূর্তের সংবাদও এখন আমরা মােবাইলে পাই। যা বিজ্ঞানেরই আশীর্বাদ।

শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ

একদা মানুষ জীবনের প্রয়ােজনীয় উপকরণ সংগ্রহ ও উৎপাদনে কায়িক শ্রমের উপর সম্পূর্ণনির্ভরশীল ছিল। এতে মানুষের কাজ করতে অধিক সময় ও শ্রমের প্রয়ােজন হতাে। কিন্তু এর তুলনায় কাজ হতাে কম।বিজ্ঞানের কল্যাণে শিল্পবিপ্লবের ফলে কলকারখানা স্থাপিত হয়েছে, বেড়েছে উৎপাদন, লাঘব হয়েছে মানুষের কায়িক শ্রম।উৎপাদনের সর্বক্ষেত্রে আজ বিরাজ করছে যন্ত্রের আধিপত্য। ফলে মানুষ পেয়েছে স্বস্তি ও আয়াসপূর্ণ জীবন। শত মানুষেরআন্তরিক প্রচেষ্টায় যা আগে করার চেষ্টা করা হতাে এখন তা যন্ত্রের বােতাম টিপে মুহূর্তের মধ্যে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে মানুষের কর্মের স্থানটিও দখল করে নিচ্ছে কর্মী রােবট।

প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ 

বিজ্ঞানের কল্যাণস্পর্শে প্রকৃতির অনেক ধ্বংসাত্মক দিককে মানুষ কল্যাণকর দিকেপরিবর্তিত করতে সক্ষম হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, নদীশাসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে মানুষ আজ বিজ্ঞানের বদৌলতে অভূতপূর্বসাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে উইন্ডমিলের মাধ্যমে মানুষ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশিআরও অনেক কিছু করছে। মােটকথা, বিজ্ঞানের কল্যাণে একসময়ের ভয়ংকরী প্রকৃতি আজ শুভংকরী প্রেয়সীতে রূপান্তরিতহয়েছে।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানঃ

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম-আয়েশ। রেডিও,টেলিভিশন, সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখা, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি, বৈদ্যুতিক হিটার ইত্যাদি।আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত সহজ ও আরামদায়ক হয়ে উঠেছে। অফিস-আদালতে নিত্য ব্যবহৃত হচ্ছে।কম্পিউটার, ফটোস্ট্যাট মেশিন, টেলেক্স, ফ্যাক্স ইত্যাদি যন্ত্রপাতি। এমনিভাবে বিজ্ঞান মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কত রকমপ্রয়ােজন যে মেটাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই।

বিজ্ঞানের ক্ষতিকর দিকঃ

বিজ্ঞান একদিকে যেমন মানুষের অশেষ কল্যাণ সাধন করে আসছে, অন্যদিকে তেমনিএনেছে বিভীষিকা। যন্ত্রের উপর নির্ভর করতে করতে মানুষের জীবনে এসেছে যন্ত্রনির্ভরতা, কর্মবিমুখতা। এটি অনেক।ক্ষেত্রে বেকার সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে। ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মতাে আধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরে অনেকক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ ঘটছে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির। এতে করে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। রাসায়নিক ও পারমাণবিকঅস্ত্রের ব্যবহার আজ মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখােমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। মিসাইল, বােমারু বিমান, ট্যাংক, সাবমেরিন ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে মানবজীবনে বিজ্ঞান অভিশাপে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার বােমাবর্ষণের পর জাপানের হিরােশিমা ও নাগাসাকি শহরের ধ্বংসযজ্ঞ তারই বাস্তব প্রমাণ।

উপসংহারঃ 

বর্তমান সভ্যতার মূলে রয়েছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান আমাদের জীবনে এনেছে সুখ-সমৃদ্ধি এবং আমাদেরদৈনন্দিন জীবনকে করেছে গতিময়। মানব জাতি বর্তমানে প্রতি মুহূর্তে প্রতি পদক্ষেপে বিজ্ঞানের কাছে দায়বদ্ধ। বিজ্ঞানেরযথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে অদূর ভবিষ্যতে মানব সভ্যতা সমৃদ্ধি ও উন্নতির চরম শিখরে আরােহণ করবে।

শেষকথা

বন্ধুরা আমরা চেষ্টা করেছি বিশদভাবে মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা সংক্রান্ত আলোচনা করতে। এক্ষেত্রে আশাকরি সবকটি প্রয়োজনীয় দিককে আমরা সাফল্যের সঙ্গে আপনাদের কাছে তুলে ধরতে পেরেছি। ‘মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট’ প্রবন্ধ রচনা টি সম্পর্কে আপনার মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান। 

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা উক্তি
মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা উক্তি

আপনাদের মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করব আপনাদের মতামত অনুযায়ী আমাদের লেখনীকে আরও উন্নত করে তোলার। তাছাড়া যদি এমনই অন্য কোন রচনা পড়তে চান সে বিষয়েও আমাদের অবগত করুন। আমরা অতি সত্বর সেই রচনাটি আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা টি পড়ে আপনার কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার একটি কমেন্ট আমাদের অনেক উৎসাহিত করে আরও ভালো ভালো লেখা আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় জন্য। বানান ভুল থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে ঠিক করে দেওয়ার সুযোগ করে দিন। সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

FAQs:

No schema found.

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

Share via
Copy link