প্রবন্ধ: বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা | Biggan o Kusanskar Rachana

Contents
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা: কুসংস্কারের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার প্রসার ও বিজ্ঞান চেতনার বিস্তার। বিজ্ঞানই হল কুসংস্কারের বিনাশকারী। যেখানে নিরক্ষতা সেখানেই ধর্মন্ধতা, অন্ধবিশ্বাস সেখানেই কুসংস্কারের রাজত্ব। নিরক্ষতা দূরীকরণের পাশাপাশি বিজ্ঞানচেতনা বাড়াতে হবে, যুক্তি দিয়ে কুসংস্কারের অসাড়তা মানুষকে বোঝাতে হবে।বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনাভূমিকা: বিজ্ঞানের উদ্ভব: বিজ্ঞান চেতনার উদ্ভব: বিজ্ঞানের বিস্ময়: বিজ্ঞানীদের ত্যাগ: বিজ্ঞানের জয়যাত্রা: শিক্ষা ও বিজ্ঞান:শিক্ষা ও কুসংস্কার: বিজ্ঞান শিক্ষায় বিজ্ঞান মনস্কতা গঠন: কিছু প্রচেষ্টা: উপসংহার: এই লেখাগুলি আপনার ভালো লাগবে
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা: কুসংস্কারের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার প্রসার ও বিজ্ঞান চেতনার বিস্তার। বিজ্ঞানই হল কুসংস্কারের বিনাশকারী। যেখানে নিরক্ষতা সেখানেই ধর্মন্ধতা, অন্ধবিশ্বাস সেখানেই কুসংস্কারের রাজত্ব। নিরক্ষতা দূরীকরণের পাশাপাশি বিজ্ঞানচেতনা বাড়াতে হবে, যুক্তি দিয়ে কুসংস্কারের অসাড়তা মানুষকে বোঝাতে হবে।
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা
ভূমিকা:
“যে জাতি জীবন হারা অচল অসাড়। পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার।”-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সেই আদিম কাল থেকেই বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষ জগৎ ও জীবনকে ক্রমশ বেশি বেশি করে জানতে,বুঝতে ও চিনতে শিখেছে।মানুষের বুদ্ধির বিকাশ ঘটেছে দিন দিন।সে জানতে পেরেছে যে এই পার্থিব জগতের কোনো কিছুই অলৌকিক ভাবে ঘটেনা । প্রত্যেক ঘটনার পেছনেই থাকে তার যুক্তিনির্ভর কারণ।কিন্তু এই কারণ গুলো বোঝার মতো মেধা ও মানসিকতা সব মানুষের হয়না।মানুষ তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের অনেক নিগূঢ় সত্যের দ্বার খুলে দিয়েছে।একদিকে যেমন হয়েছে জ্ঞানের অগ্রগতি তেমনই অন্য দিকে লক্ষ লক্ষ মানুষের চেতনায় থেকে গিয়েছে অজ্ঞানতার অন্ধকার।সূচনা হয়ছে বিজ্ঞান চেতনার সাথে কুসংস্কারের সংঘাত।

বিজ্ঞানের উদ্ভব:
মানুষ জগতের শ্রেষ্ঠ জীব।শারীরিক দক্ষতার দিক থেকে তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রাণী থাকলেও তার বুদ্ধির কাছে সকলেই পরাজিত।মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তি ও নিরন্তর অনুশীলনের মাধ্যমে জগৎ ও জীবনের নানান রহস্যের সমাধান সূত্র জানতে পেরেছে। বিজ্ঞানীরা আমাদের জানিয়েছেন এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি রহস্যের কথা।জানিয়েছেন পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞানের কথা।প্রকৃতির নানান উপাদানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছে অসীম শক্তি।বিজ্ঞানের এই সূত্র ধরেই এগিয়ে এসেছে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের যুগ। ব্যাবহারিক ও জ্ঞানগত উভয় দিক থেকে মানুষের জীবনের সাথে বিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠতা ক্রমশই বেড়েছে।মানুষের জীবন যাত্রায় এসেছে অসংখ্য পরিবর্তন।বিজ্ঞান বুদ্ধি মানুষকে দিয়েছে এক দুর্লভ শক্তির খোঁজ।

আরও পড়ুনঃ অধ্যবসায় রচনা Class 7 | অধ্যবসায় রচনা pdf
বিজ্ঞান চেতনার উদ্ভব:
বিজ্ঞান মানুষের কাছে ভগবান স্বরূপ।তার কাছে যা চাওয়া যায় তার প্রায় সবই পাওয়া যায়।বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে পারিপার্শ্বিক জগতের পরিবর্তন ঘটলেও মানুষের ভেতরকার জীবনে আজও অন্ধকার যুগের অবস্থান। বিজ্ঞান চেতনার জন্ম আজও সবার মনে হয়নি।একদিকে মানুষ চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে দুরারোগ্য ব্যাধির থেকে পুনরায় জীবন দান পায়,আবার অন্যদিকে সেই মানুষই তার আরোগ্য লাভের জন্য ভগবানের সহায় হওয়াকেই একমাত্র সত্য বলে মনে করে।

আরও পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা | Doinondin Jibone Biggan Rochona

বিজ্ঞানের বিস্ময়:
প্রাচীনকালে মানুষ ছিল প্রকৃতির হাতের পুতুল। তারা ছিল প্রকৃতির কাছে অসহায়। তারপর সেই গুহাবাসী মানুষ শেখে আগুন জ্বালাতে, তারপর থেকেই বিজ্ঞানকে মানুষ করেছে তার চিরসঙ্গী। এরপর থেকেই তারা যখনই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, তাদের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে তখনই তারা ব্যবহার করেছে বিজ্ঞানকে। তারা এখন আর প্রকৃতির কাছে অসহায় না। বিজ্ঞান মানুষকে সমগ্র বিশ্বের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছে। আমরা এই বিশ্বের যেখানেই তাকাই না কেন সবখানে কেবল বিজ্ঞানের মহিমাই দেখতে পাই। জল, স্থল, আকাশ যে পথেই আমরা কোনো বাধার সম্মুখীন হই সেখানেই বিজ্ঞান আমাদের এনে দিয়েছে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য।

বিজ্ঞানীদের ত্যাগ:
যুগে যুগে শত শত বিজ্ঞানীর শ্রম, মেধা ও সাধনার ফলেই বিজ্ঞান আজ এই পর্যায়ে আসতে পেড়েছে। বিজ্ঞানের আজ যেই অগ্রগতি আমরা দেখতে পাই তার পিছে রয়েছে শতশত বিজ্ঞানীর আত্মত্যাগ। সত্য কথা বলেছিলেন দেখে সেই যুগের কুসংস্কারে বিশ্বাসী জনগণ বিজ্ঞানী ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে ছিলেন। ল্যাভিওসিয়েকে হত্যা করা হয়েছিলো গিলোটিনে। বিজ্ঞানী আর্কিমিডাস, গ্যালিলিও, কোপার্নিকাসকেও অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল। কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাতিকে যখনই তারা বিজ্ঞানের আলো দেখিয়ে অন্ধকার জগত থেকে বের করার চেষ্টা করেছে তখনই তাদের আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু তারা কখনোই থেমে থাকেনি। বিজ্ঞানের আলোকে ছড়িয়ে দিয়েছে সকলের মাঝে।

আরও পড়ুনঃ স্মার্ট বাংলাদেশ রচনা পরিক্ষায় কমন পড়বেই | স্মার্ট বাংলাদেশ রচনা সকল শ্রেণির জন্য
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা:
মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাতে শিখলো সেদিনই পরোক্ষে তাদের অজান্তে বিজ্ঞানের জন্ম হল। মানুষ নানারকম ধাতুর ব্যবহার শিখলো। মানুষ প্রয়োজনে তাগিতে বিভিন্ন রকম জিনিস তৈরি করতে লাগলো, শুরু হলো গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিজ্ঞানের দৌলতে আবিষ্কার হলো নানারকমের ঔষধ। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান একে একে স্থান করে নিল।

“কত অজানারে জানাইলে তুমি

কত ঘরে দিলে ঠাঁই

দূরকে করিলে নিকট বন্ধু

পরকে করিলে ভাই।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শিক্ষা ও বিজ্ঞান:
আমরা শিক্ষার যতো উপকরন ব্যবহার করি যেমন- কাগজ আর কালি সেগুলো বিজ্ঞানের অবদান। এছাড়াও আমরা ক্যালকুলেটর, মুদ্রণযন্ত্র ইত্যাদি ব্যবহার করি এগুলোও বিজ্ঞানেরই দান। টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদ, এমনকি চলচ্চিত্রও কেবল বিনোদনের উৎস নয় এগুলো আমাদের শিক্ষিতও করে। আমরা দেশ-বিদেশের নানা তথ্য পাই, তাদের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারি। কম্পিউটার শিক্ষার জগতে নতুন এক মাত্রা যোগ করে দিয়েছে। এছাড়াও ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত লাইব্রেরি থেকে বই পড়তে পারছি, বিভিন্ন শহর-বাণিজ্যবন্দর, দেশ সম্পর্কে চোখের পলকেই নানা তথ্য সংগ্রহ করতে পারছি।

শিক্ষা ও কুসংস্কার:
খুবই দুঃখের বিষয়,আমাদের সমাজ সংসার আজও ভুল ধারণা,অন্ধবিশ্বাস,প্রচলিত নানা প্রথাগত কুসংস্কারের অভিশাপ থেকে মানুষ মুক্ত হতে পারে নি।হস্তরেখা ও কোষ্ঠী র ফলাফল বিচারের উপর নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে অনেকেই নিষ্কর্মা হয়ে পড়ে।হাঁচি,টিকটিকির বাধায় অনেকেরই যাত্রা আজও অশুভ হয়।ধর্ম ও ভগবানের দোহাই দিয়ে লোকঠকানের অসংখ্য নজির আছে যেখানে সেখানে। এমন লোকাচার,কুসংস্কার,অন্ধবিশ্বাস,পাপ পুণ্যের মিথ্যা ভীতি সমাজের শরীরে দুষ্ট ক্ষতের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।এগুলির কোনো বিজ্ঞান সম্মত বাস্তবিক সত্যতা নেই।সবচাইতে আশ্চর্যজনক বিষয় কিছু মানুষ আছেন যারা বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও অন্ধবিশ্বাসে বশবর্তী হয়ে কুসংস্কারের শিকার হয়ে পড়েছেন। মনে রাখা উচিত ব্যাক্তি মানুষের দুর্বলতা জীবন ও সমাজকে করে তোলে দুর্বল।ব্যাক্তি বিশেষের দুর্বলতা প্রতিফলিত হয় সমাজে। এইভাবেই সমাজে সংক্রামিত হয় জাতপাতের বিদ্বেষ।মানুষ ঠকানো জ্যোতিষী ও রত্ন ব্যাবসায়ীরা কোটিপতি হয়ে উঠছেন। কুসংস্কার অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন মানুষদের আত্মবিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “দেবতার গ্রাস” , ” বিসর্জন” প্রভিতি কবিতায় এই সমস্ত মানুষের অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বেদনাবহ চিত্র তুলে ধরেছেন।

আরও পড়ুনঃ প্রবন্ধ রচনা: মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার – সহজ শব্দে, সহজ বাক্যে
বিজ্ঞান শিক্ষায় বিজ্ঞান মনস্কতা গঠন:
এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে এসেও একটি বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী এখনো বিজ্ঞানের আলোর দেখা পায়নি, তারা এখন বিজ্ঞান মনস্ক হয়ে উঠতে পারেনি। অনেকেরই জীবনচর্চায় বিজ্ঞানবিমুখতা লক্ষ্য করা যায়। এই কারণেই বিজ্ঞানকে আরো নানাভাবে প্রসারিত করতে হবে। পঠন ও পাঠনে বিজ্ঞানকে আরো বিস্তারিত করতে হবে। কবি, শিল্প, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী- সবার মধ্যেই কম বেশি বিজ্ঞান মনস্কতা থাকা দরকার। বিজ্ঞান শিক্ষাই মানুষকে ভ্রান্তধারণা থেকে মুক্তি দেয়। মানুষ হয়ে ওঠে যুক্তিবাদী ও বিচারধর্মী। সমাজে এখন যে অন্যায়-অবিচার দেখা যায় তা বিজ্ঞান শিক্ষার অভাবের কারণেই হয়।

কিছু প্রচেষ্টা:
অনেকে মনে করেন শিক্ষার আলো মানুষের মনের কুসংস্কারের অন্ধকারকে দুর করতে পারে।কথাটি সত্য হলেও সম্পূর্ণভাবে কার্যকরী নয়। অন্ধবিশ্বাসের কালো জগৎ কে ভেঙে গুড়িয়ে ফেলা মোটেই সহজ ব্যাপার না।তাই শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণীর সকল স্তরের মানুষকে যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে হবে।সেই উদ্দেশ্যে কিছু প্রচেষ্টা শুরু করা হয়েছে। সম্প্রতি শুরু হওয়া জন বিজ্ঞান জাঠা সারা দেশে বিজ্ঞান আন্দোলনের সূত্রপাত করেছে।বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি,প্রচলিত ও প্রথাগত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান সম্মত যুক্তি,আগ্রহী মানুষের প্রশ্নের উত্তর দান অর্থাৎ বিজ্ঞানকে গণমানসে পৌঁছে দেওয়ার জনবিজ্ঞান জাঠার অন্যতম উদ্দেশ্য।

উপসংহার:
বিংশ শতাব্দী পার করে আমরা একবিংশ শতাব্দীতে এসে পৌঁছেছি। কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের ঘন অন্ধকার থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। একমাত্র বিজ্ঞান-ই পারে যুক্তিগ্রাহ্য দৃষ্টান্ত দিয়ে ভুল ধারণাকে দুর করতে। বিজ্ঞান চেতনায় সত্যের পথে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *